ETV Bharat / state

Kali Puja 2021 : বাঁকুড়া থেকে চিরতরে বর্গীদের বিদায় দেন মাঁ-ই-ত কালী

বর্গী আমল থেকেই বাঁকুড়ার সোনামুখীতে চলে আসছে মাঁ-ই-ত কালীর পুজো ৷ সুদৃশ্য মন্দিরের ভিতরে রয়েছে অসাধারণ সব কারুকার্য ৷ সেখানেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মা কালীর বিভিন্ন রূপ ৷ তবে মন্দিরের এমন উদ্ভট নাম কেন ? জানল ইটিভি ভারত ৷

মাঁ-ই-ত কালী
মাঁ-ই-ত কালী
author img

By

Published : Oct 30, 2021, 2:46 PM IST

সোনামুখী, 29 অক্টোবর : সালটা তখন ইংরাজির 1742 এবং বাংলার 1149 ৷ বর্গীদের একটা দল-সহ মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত তৎকালীন মল্লগড় অর্থাৎ আজকের বিষ্ণুপুর থেকে আরেক মল্ল সাম্রাজ্য সোনামুখীতে আসে । বর্গীদের দল এখানে এসে লুঠপাট চালানোর জন্য বাদ্যভাণ্ড-সহ ভগবান শিবের নাম উচ্চারণ করতে করতে সোনামুখীর রানীবাজারের মা কালীর মন্দিরের সামনে এসে জড়ো হত । এখন নগরায়নের মোড়কে ঘেরা সোনামুখী শহর সেই সময় ঘন জঙ্গল ও আগাছায় পরিপূর্ণ ছিল ৷ গাছপালা ঘেরা এই জায়গাতেই তখন বিরাজ করতেন মা কালী ।

একটা সময় ছিল যখন দিনে দুপুরেও এই মন্দিরের সামনে আসতে সাহস পেতেন না কেউ । দিবালোকেও এই অঞ্চলের মানুষজন বর্গীদের ভয়ে নিজেদের গৃহবন্দি করে রাখতেন । এভাবেই চলতে চলতে একদিন লুঠপাট শেষ হওয়ার পর আনন্দে বর্গীদের দল বাজনা বাজিয়ে নাচ গান করছিল । ঠিক সেই সময় এক বৃদ্ধা মায়ের ঘরের সামনে সন্ধ্যা প্রদীপ রেখে বলিদানের হাড়িকাঠে প্রণাম করছিলেন ৷ ঠিক তখন মারাঠা সর্দার ভাস্কর সেনাপতি খাঁড়া উঠিয়ে প্রণামরত ওই বৃদ্ধাকে বলি দিতে উদ্যত হলে এক দৈবশক্তিতে সেই খাঁড়া আর নিচে নামল না ৷ সর্দার ভাবলেন, কেউ যেন একটা পিছন থেকে টান দিয়ে ধরে রয়েছে ৷

আরও পড়ুন : Kali Puja 2021 : প্রতিমা নির্মাণ থেকে নিরঞ্জন, সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যে সম্পন্ন হয় রায়গঞ্জের কালীপুজোয়

কিছুক্ষণের মধ্যেই বলি দিতে উদ্যত হতে যাওয়া ভাস্কর পণ্ডিত হঠাৎই তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং দৈবশক্তি সম্পর্কে অবগত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধাকে বলি থেকে বিরত হন । বৃদ্ধা প্রণাম সেরে উঠে দাঁড়াতেই সমস্ত বিষয়টা বুঝতে পেরে মায়ের ঘট থেকে জল নিয়ে এসে সর্দারের চোখে দিতেই তিনি পুনরায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান ৷ এরপর মারাঠা সর্দার ওই বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করেন এখানে কোন দেবী বাস করেন ? বৃদ্ধা উত্তর দেন মা কালী । তখন সঙ্গে সঙ্গে সর্দার হিন্দিতে বলে ওঠেন "মাঁ-ই-ত-কালী-হ্যায় ৷"

বাজনা বাজাতে বাজাতে জোর গলায় বারবার বলতে থাকেন "মাঁ-ই-ত-কালী-হ্যায়", "মাঁ-ই-ত-কালী-হ্যায়"। এই বলতে বলতেই বর্গী সর্দার কথা দেয় এখানে আর লুঠপাট চালাবে না তারা এবং তাদের সব খড়্গগুলো রেখে মায়ের পুজো ও বলিদান করার কথা বলে চিরকালের মতো সেই স্থান ছেড়ে কাটোয়ার দিকে চলে যায় । তাদের রেখে যাওয়া সেই খড়্গ এখনও রয়েছে মন্দিরে ৷ সেই সময় থেকেই মারাঠা সর্দারের কথা অনুযায়ী এই কালী "মাঁ-ই-ত কালী" নামে পরিচিতি লাভ করে ৷

বাঁকুড়ার সোনামুখীর মাঁ-ই-ত কালীর পুজো

আরও পড়ুন : Diwali 2021: 108 নরমুণ্ড উৎসর্গ করে পুজো, দীপাবলির রাতে আজও জেগে ওঠে বিষ্ণুপুর শ্মশান

শতাধিক বছর ধরে পুরোনো নিয়ম রীতি মেনে এই পূজিত হয়ে আসছেন এই মাঁ-ই-ত কালী । সারাবছর ধরে এখানে ঘটে মায়ের নিত্য পুজো হলেও দীপান্বিতা অমাবস্যায় প্রতিমা তৈরি করে পাঁচদিন ধরে জাঁকজমক করে চলে পুজো ৷ পুজোর পাশাপাশি এখানে নরনারায়ণ সেবা এবং বস্ত্রদানও করা হয় ৷ নিরঞ্জনের সময় রীতি মেনে 52 জন বেহারার কাঁধে চড়ে মায়ের বিসর্জন সম্পন্ন হয় এখানে ।

প্রতিবছর নিরঞ্জনের দিন কার্নিভালের আয়োজন করা হলেও বিগত দু'বছর কোভিড বিধি মেনে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সেসব বন্ধ রয়েছে ৷

আরও পড়ুন : Kali Puja 2021: কালীপুজোয় লাগে না কোনও পুরোহিত, হয় পাঁঠাবলি

সোনামুখী, 29 অক্টোবর : সালটা তখন ইংরাজির 1742 এবং বাংলার 1149 ৷ বর্গীদের একটা দল-সহ মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত তৎকালীন মল্লগড় অর্থাৎ আজকের বিষ্ণুপুর থেকে আরেক মল্ল সাম্রাজ্য সোনামুখীতে আসে । বর্গীদের দল এখানে এসে লুঠপাট চালানোর জন্য বাদ্যভাণ্ড-সহ ভগবান শিবের নাম উচ্চারণ করতে করতে সোনামুখীর রানীবাজারের মা কালীর মন্দিরের সামনে এসে জড়ো হত । এখন নগরায়নের মোড়কে ঘেরা সোনামুখী শহর সেই সময় ঘন জঙ্গল ও আগাছায় পরিপূর্ণ ছিল ৷ গাছপালা ঘেরা এই জায়গাতেই তখন বিরাজ করতেন মা কালী ।

একটা সময় ছিল যখন দিনে দুপুরেও এই মন্দিরের সামনে আসতে সাহস পেতেন না কেউ । দিবালোকেও এই অঞ্চলের মানুষজন বর্গীদের ভয়ে নিজেদের গৃহবন্দি করে রাখতেন । এভাবেই চলতে চলতে একদিন লুঠপাট শেষ হওয়ার পর আনন্দে বর্গীদের দল বাজনা বাজিয়ে নাচ গান করছিল । ঠিক সেই সময় এক বৃদ্ধা মায়ের ঘরের সামনে সন্ধ্যা প্রদীপ রেখে বলিদানের হাড়িকাঠে প্রণাম করছিলেন ৷ ঠিক তখন মারাঠা সর্দার ভাস্কর সেনাপতি খাঁড়া উঠিয়ে প্রণামরত ওই বৃদ্ধাকে বলি দিতে উদ্যত হলে এক দৈবশক্তিতে সেই খাঁড়া আর নিচে নামল না ৷ সর্দার ভাবলেন, কেউ যেন একটা পিছন থেকে টান দিয়ে ধরে রয়েছে ৷

আরও পড়ুন : Kali Puja 2021 : প্রতিমা নির্মাণ থেকে নিরঞ্জন, সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যে সম্পন্ন হয় রায়গঞ্জের কালীপুজোয়

কিছুক্ষণের মধ্যেই বলি দিতে উদ্যত হতে যাওয়া ভাস্কর পণ্ডিত হঠাৎই তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং দৈবশক্তি সম্পর্কে অবগত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধাকে বলি থেকে বিরত হন । বৃদ্ধা প্রণাম সেরে উঠে দাঁড়াতেই সমস্ত বিষয়টা বুঝতে পেরে মায়ের ঘট থেকে জল নিয়ে এসে সর্দারের চোখে দিতেই তিনি পুনরায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান ৷ এরপর মারাঠা সর্দার ওই বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করেন এখানে কোন দেবী বাস করেন ? বৃদ্ধা উত্তর দেন মা কালী । তখন সঙ্গে সঙ্গে সর্দার হিন্দিতে বলে ওঠেন "মাঁ-ই-ত-কালী-হ্যায় ৷"

বাজনা বাজাতে বাজাতে জোর গলায় বারবার বলতে থাকেন "মাঁ-ই-ত-কালী-হ্যায়", "মাঁ-ই-ত-কালী-হ্যায়"। এই বলতে বলতেই বর্গী সর্দার কথা দেয় এখানে আর লুঠপাট চালাবে না তারা এবং তাদের সব খড়্গগুলো রেখে মায়ের পুজো ও বলিদান করার কথা বলে চিরকালের মতো সেই স্থান ছেড়ে কাটোয়ার দিকে চলে যায় । তাদের রেখে যাওয়া সেই খড়্গ এখনও রয়েছে মন্দিরে ৷ সেই সময় থেকেই মারাঠা সর্দারের কথা অনুযায়ী এই কালী "মাঁ-ই-ত কালী" নামে পরিচিতি লাভ করে ৷

বাঁকুড়ার সোনামুখীর মাঁ-ই-ত কালীর পুজো

আরও পড়ুন : Diwali 2021: 108 নরমুণ্ড উৎসর্গ করে পুজো, দীপাবলির রাতে আজও জেগে ওঠে বিষ্ণুপুর শ্মশান

শতাধিক বছর ধরে পুরোনো নিয়ম রীতি মেনে এই পূজিত হয়ে আসছেন এই মাঁ-ই-ত কালী । সারাবছর ধরে এখানে ঘটে মায়ের নিত্য পুজো হলেও দীপান্বিতা অমাবস্যায় প্রতিমা তৈরি করে পাঁচদিন ধরে জাঁকজমক করে চলে পুজো ৷ পুজোর পাশাপাশি এখানে নরনারায়ণ সেবা এবং বস্ত্রদানও করা হয় ৷ নিরঞ্জনের সময় রীতি মেনে 52 জন বেহারার কাঁধে চড়ে মায়ের বিসর্জন সম্পন্ন হয় এখানে ।

প্রতিবছর নিরঞ্জনের দিন কার্নিভালের আয়োজন করা হলেও বিগত দু'বছর কোভিড বিধি মেনে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সেসব বন্ধ রয়েছে ৷

আরও পড়ুন : Kali Puja 2021: কালীপুজোয় লাগে না কোনও পুরোহিত, হয় পাঁঠাবলি

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.