বেলিয়াতোড়, 20 জুলাই : শহর কলকাতার নামী দোকানের ধবধবে সাদা রসগোল্লার মতো রাজকীয় নয় ৷ নরম তুলতুলে বেকড সন্দেশের মতো মুখে দিলেই গলে যায় না ৷ তবে ওই কথায় আছে না, ডোন্ট জাজ আ বুক বাই ইটস কভার ৷ ঠিক সেরকমই বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের বিখ্যাত মেচা সন্দেশ ৷ উপরে চিনির সাদা আস্তরণ আর ভেতরে মুগডাল ও ক্ষীরের মিশ্রণে তৈরি মণ্ড ৷ ওই মণ্ডে কামড় দিলেই বুঝতে পারবেন রহস্যটা কোথায় ৷
বেলিয়াতোড়ের মেচা সন্দেশের নাম অনেকেই শুনে থাকবেন ৷ শক্তিগড়ের ল্যাংচা বা বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানার মতো এত জনপ্রিয় হয়তো নয় ৷ কিন্তু এই সোশাল মিডিয়ার যুগে রাজ্যের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছে মেচা সন্দেশের নাম ৷ বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় বেড়াতে আসা শহুরে মানুষরা মেচা সন্দেশের খোঁজ করেন ৷ দুর্গাপুর-বাঁকুড়া জাতীয় সড়কের পাশেই অবস্থিত বেলিয়াতোড়ে নেমে মিষ্টি প্যাকেটবন্দি করে ঘরমুখো হন ৷
কীভাবে তৈরি হয় এই মেচা সন্দেশ ? বেলিয়াতোড়ের মেচা কারিগরদের কথায়, মুগডালকে প্রথমে গুঁড়ো করে নেওয়া হয় ৷ এরপর খোয়া ক্ষীরের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয় মণ্ড ৷ তারপর রসে ফেলে দেওয়া হয় ৷ তবে ফোটানো হয় না ৷ রসে ফেলেই তুলে নেওয়া হয় ৷ ব্যাস, এভাবেই কয়েকশো বছর ধরে মিষ্টিপ্রেমীদের রসনা তৃপ্তি করে আসছে বেলিয়াতোড়ের মেচা ৷ বর্তমানে এর দাম পাঁচ টাকা থেকে দশ টাকার মধ্যে ৷ ছানার মিষ্টি খেতে অভ্যস্ত আম বাঙালির মনে মেচা সন্দেশের আলাদা জায়গা রয়েছে ৷
দেড়শো থেকে দুশো বছরের পুরানো এই মিষ্টির পিছনে একাধিক গল্প শোনা যায় ৷ তবে মেচার আদি স্রষ্টাকে নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি ৷ তবে শোনা যায়, গিরিশচন্দ্র মোদক নামে একজন মিষ্টান্ন ব্যাবসায়ী প্রথম এই মিষ্টি তৈরি করেন । জনশ্রুতি রয়েছে, বিখ্যাত চিত্রশিল্পী যামিনী রায়ের বংশধররা বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের দেওয়ান রাজার কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন বেলিয়াতোড়ের জমিদারি । সেই সময়ই নাকি প্রথম মেচা সন্দেশ তৈরি হয় ৷ 'জমিদারি মিষ্টি'র উপাধি পায় এই সন্দেশ ।
আরও পড়ুন : সূর্য মোদকের ভিয়েনে এবার 'বৌমা ষষ্ঠী'
তখনকার দিনে চৈত্র মাসে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় গাজনের মেলা বসত ৷ মেলায় গিরিশচন্দ্র মোদক গুড়ের লাড্ডু বিক্রি করতেন ৷ কিন্তু কিছুদিন রাখলেই সেই গুড়ের পাক নষ্ট হয়ে যেত ৷ গুড়ের লাড্ডুকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে চিনির আস্তরণ দেওয়া হয় ৷ সেখান থেকেই অভিনবত্ব আসে ৷ তৈরি হয় মেচা সন্দেশ । ইংরেজ আমলে নাকি এই সন্দেশ খ্যাতি লাভ করে । এই মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারকদের আদি বাসস্থান বেলিয়াতোড় হলেও তারা বর্তমানে জেলা এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছেন ।
বেলিয়াতোড়ের মেচা প্রস্তুতকারকরা বহুদিন আগেই এর স্বীকৃতি দাবি করেছেন ৷ ওড়িশাকে হারিয়ে রসগোল্লার জিআই ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলা ৷ এবার বেলিয়াতোড়ের মেচা সন্দেশও জিআই পেতে দরজায় কড়া নাড়ছে ৷
আরও পড়ুন : রসগোল্লার মতো স্বীকৃতি চাইছে ঘি, রস, ইতিহাস মাখা বাবরসা