আলিপুরদুয়ার, 24 নভেম্বর : পেটের জ্বালায় জ্বলছে ডুয়ার্সের চা বলয় । আলিপুরদুয়ার জেলার এথেলবাড়ি থেকে কুমারগ্রামের ভারত-ভুটান সীমান্ত ৷ বন্ধ হয়ে পড়ে আছে পাহাড়ের প্রায় গোটা সাতেক চা বাগান ৷ 5 টি বাগানে টানা দু'বছর ধরে চলছে অচলাবস্থা ৷ অনেক আগেই শ্রমিক-মালিক অসন্তোষের জেরে বন্ধ হয়ে গেছে মাদারিহাট ব্লকের ঢেকলাপাড়া, বান্দাপানি, লঙ্কাপাড়া চা-বাগান । বছর চারেক বন্ধ হয়েছে কালচিনির মধু চা-বাগান । কালচিনি ব্লকেই পুজোর আগে বন্ধ হয়েছে কালচিনি ও রায়মাটাং চা-বাগান । কুমারগ্রাম ব্লকে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে তুততুরি চা-বাগান । এছাড়াও ডানকান গোষ্ঠীর পাঁচটি চা-বাগানে জারি রয়েছে অচলাবস্থা ।
পেটের তাগিদে বাড়ির ঘটি, বাটি, ঘরের টিন, দেওয়ালের ইট খুলে বিক্রি করছে ক্ষুধার্ত চা-বাগান শ্রমিকেরা । কর্মহীন অধিকাংশ চা-বাগান শ্রমিক পাড়ি দিয়েছেন ভিন রাজ্যে । বন্ধ বাগানগুলির অনেক যুবতি পেটের জ্বালায় আজ বাগান ছাড়া । কেউ বেছে নিয়েছেন দেহ ব্যবসা, দাবি স্থানীয়দের ৷ কেউ আবার বেছে নিয়েছেন শহুরে পরিচারিকার পেশা । বয়সের ভারে ধুঁকতে থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে শুরু করে গৃহবধূ, এমনকি শিশুরাও পড়ে রয়েছেন খাদ্যহীন বন্ধ চা-বাগানের কোলে ।
বন্ধ এবং অচল চা-বাগানের প্রায় 30 হাজার শ্রমিক দিন কাটাচ্ছে চরম খাদ্য সংকটে । চা-বলয়ের আদিবাসী মহল্লার কর্মহীন মানুষগুলোর মিলছে না কোনও সরকারি সাহায্য । সেই বাম জমানা থেকেই চা-বাগান ইশ্যুতে কেন্দ্র ও রাজ্যের দ্বৈরথ চলছে । বর্তমান সময়ে যা আরও প্রকট ভাবে ধরা দিয়েছে ৷ রাজনীতির যাঁতাকলে লাগাতার পিষতে থাকা বন্ধ চা-বাগানের হাজার হাজার শ্রমিকদের কাছে আজ 'পূর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি '। পেটের তাগিদে অনেক আগেই বিক্রি হয়েছে বাগানের গাছপালা । এখন কেউ বেচছে ঘরের ঘটি-বাটি । কেউ বাড়ির টিন, দেওয়ালের ইট খুলে বিক্রি করে মেটাচ্ছে পেটের খিদে ।
সরকারি সাহায্য বলতে পরিবার পিছু মাসে 12 কেজি রেশনের চাল । আলিপুরদুয়ারের বন্ধ চা-বাগানের শ্রমিক মহল্লায় ঘুরলে দেখা মিলবে এসব করুণ দৃশ্য । বাগান বন্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নারী পাচারের সংখ্যা । বন্ধ বাগান নারী পাচার চক্রের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে ।
সরকার থেকে দু'টাকা কিলো দরে রেশনে চাল,আটা দেওয়া হচ্ছে । তবে রেশনের ওই চাল, আটা কেনার জন্য যে টাকার প্রয়োজন সে টাকাও নেই শ্রমিকদের হাতে । বাধ্য হয়েই এখন তারা ঘরের জিনিস পত্র বিক্রি করে কিনে আনছে রেশনের চাল, আটা ।
প্রশ্ন উঠছে এভাবে কতদিন চলবে? ঘরের ঘটি, বাটি বিক্রির পর পেটের জ্বালা মেটাতে আর কী বিক্রি করবেন বন্ধ চা বলয়ের ক্ষুধার্ত শ্রমিক মহল্লা?