আলিপুরদুয়ার, 7 অক্টোবর : লোকসভায় BJP-র কাছে ধাক্কা খেয়েই ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে আসা ৷ রাজ্যে লোকসভায় BJP-র ভোট বেড়ে হয় 40 শতাংশেরও বেশি ৷ সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ তাই বিধানসভা ভোটে পিকে ম্যাজিকে আস্থা রাখতে চেয়েছে তৃণমূল ৷ কিন্তু বিধানসভা ভোটের আগে সেই পিকের সংস্থা আইপ্যাকের বিরুদ্ধেই শাসকদলে ক্ষোভ বাড়ছে ৷ গতকাল পিকের টিমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দেন আলিপুরদুয়ার পৌরসভার বিদায়ি চেয়ারম্যান আশিস দত্ত। তাঁর অভিযোগ, "পিকের আর্শীবাদে দলে যে যত দুর্নীতিগ্রস্ত, তার তত প্রোমোশন হচ্ছে।"
সম্প্রতি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদল হয় ৷ আর এই রদবদলের পরেই প্রশান্ত কিশোরের টিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় দলের পুরানো কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ৷ দলের এই বিক্ষুব্ধদের সন্দেহ, জেলা নেতৃত্বের রদবদলের পিছনে প্রচ্ছন্ন হাত আছে পিকের টিমের ৷ গত লোকসভা নির্বাচনে অধীর রঞ্জনের শক্ত মাটিতে ঘাসফুল ফুটিয়ে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ অথচ সেই শুভেন্দু অনুগামীদেরই বেছে বেছে বাদ দেওয়া হয়েছে রাজ্য কমিটিতে ৷ শুধু তাই নয়, মুর্শিদাবাদ সহ একাধিক জেলায় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা শুভেন্দু অধিকারীকেও সেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ৷ এজন্য কয়েক দিন আগেই মুর্শিদাবাদের রানিনগরে পিকের টিমের বিরুদ্ধে দলে ক্ষোভ সামনে আসে ৷ জেলা কমিটির ঘোষণার পর থেকেই শুভেন্দুর দীর্ঘ নিষ্ক্রিয়তা দলের মধ্যেও অস্বস্তি বাড়িয়েছে ৷ সরাসরি পিকের টিমের প্রতি ক্ষোভ না দেখালেও জেলা কমিটি ঘোষণার পরে কোচবিহারের সমস্ত সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তফা দেন বিধায়ক মিহির গোস্বামীও ৷
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে আশিসবাবু জেলা নেতৃত্ব এবং পিকের টিমের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান ।বলেন, "এই জেলা কমিটি একটা ন্যক্কারজনক জেলা কমিটি । ব্লক সভাপতিগুলো ঠিক হয়নি । কয়েকটা অকর্মণ্য ব্লক সভাপতি দলে আনা হয়েছে। এই নয়া কমিটিতে এমন ব্লক সভাপতি আনা হয়েছে যাদের দেখে মানুষ ভোট দেবেন না। উঁচু থেকে নিচু অবধি এমন মানুষদের দলে স্থান হয়েছে যাদের দেখলে মানুষ কোনওদিন ভোট দেবেন না।"
আশিসবাবু এখানেই না থেমে বলেন, " দলে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ ভরে গেছে। এখনই তাদের নাম বলতে চাই না। কোন নেতা দুর্নীতিগ্রস্ত তা খোঁজ নিলেই জানা যাবে। সময় এলে আমি নিজেই নাম প্রকাশ করে দেব।"
সোমবারে আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণা হতেই জেলা জুড়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ শুরু হয়। জেলা কমিটির বিরুদ্ধে প্রথমে মুখ খোলেন ফালাকাটা ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় দাস। এছাড়াও দলের নয়া জেলা কমিটিতে ব্রাত্য করা হয়েছে প্রাক্তন জেলা সভাপতি মোহন শর্মাকেও। এই ঘটনায় চাপা অসন্তোষ তৈরি হয়েছে গোটা কালচিনি ব্লক জুড়ে। দলের জেলা কমিটির নতুন নেতাদের দেখে আশিসবাবু বলেন, " আমি নেতা হওয়ার জন্য কারও বাড়িতে যাই না। কাউকে টাকাও দিতে পারব না।"
তাঁর অভিযোগ নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, " আমি কোনও পদত্যাগপত্র হাতে পাইনি। তাই কিছু বলব না। এটা দলীয় বিষয়। সংবাদ মাধ্যমের কাছে কেউ পদত্যাগ করলে তার দায়িত্ব সংবাদ মাধ্যম নেবে। দল নেবে না।"
সোমবার প্রশান্ত কিশোরের টিমের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে বহরমপুর শহরে । সেই পোস্টারে প্রশান্ত কিশোরের টিমের জেলা কো-অর্ডিনেটরকে সরানোর দাবি তোলা হয় । পিকের টিম তাদের সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নামে এলাকা থেকে ব্যাপক টাকা তুলছে বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে । আদি তৃণমূল কমিটির নামেই এই পোস্টার ছড়ানো হয়েছে । আর মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারে টিম পিকের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করল তৃণমূল নেতা ৷ রাজনৈতিক মহল বলছে, প্রশান্ত কিশোরের উপর ভরসা করে বিধানসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে চাইছে শাসকদল । এই অবস্থায় এমন অভিযোগ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ভাবাবে ৷