আলিপুরদুয়ার, 19 জানুয়ারি: উত্তরবঙ্গ (North Bengal) পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভাগ হলে খাবার আসবে কোথা থেকে ? উত্তরবঙ্গ ভাগ নিয়ে এমনই প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) । বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের হাসিমারা সুভাষিনী চা বাগানের সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে এই প্রশ্ন তোলেন তিনি ৷ পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সবাই এক থাকুন । অনেকে অনেক রকম বলবে ।’’
নাম করে বিজেপির (BJP) উদ্দেশ্য়ে এই ইস্যুতে কটাক্ষও ছুঁড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ বলেন, কিছু কিছু নেতা আছে না । এখান থেকে ওখান থেকে কিছু কিছু পায় । তারা বলবে এটাকে ওখান থেকে আলাদা করে দাও । ওটাকে আলাদা করে দাও । সেটাকে আলাদা করে দাও । কেন তুমি প্রধানমন্ত্রী হবে ? নাকি মুখ্যমন্ত্রী হবে ?’’ এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, ‘‘তুমি বিড়ি মন্ত্রী হবে ? আমার বিড়ি শ্রমিকরা আছে বিড়ি মন্ত্রী হওয়ার জন্য । সারাক্ষণ শুধু ভাগ করে দাও । পশ্চিমবঙ্গ আর উত্তরবঙ্গ এক না থাকে তাহলে খাবারটা আসবে কোথা থেকে ?"
প্রসঙ্গত, বিজেপির একাধিক নেতার মুখে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (Union Territory) হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য শোনা গিয়েছে ৷ এছাড়াও কামতাপুর পিপলস পার্টি ও কামতারপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি, গ্রেটার কোচবিহার আলাদা রাজ্যের দাবি করে চলেছেন । এখন কিছুটা স্তিমিত হলেও গোর্খাল্যান্ড (Gorkhaland) ইস্যও যে কোনও সময় মাথাচাড়া দিতে পারে দার্জিলিংয়ে ৷ এই দাবি যাঁরা তুলছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য়েই মমতার এই মন্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে ৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে আগে কিছুই ছিল না । যাঁরা উত্তরবঙ্গে আসতেন, তাঁরা কেবল বোরোলি মাছ খেয়ে চলে যেতেন ।’’ উল্লেখ্য, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর প্রিয় মাছ ছিল উত্তরবঙ্গের বোরোলী । উত্তরবঙ্গে এলেই তাঁর মেনুতে বোরোলি রাখা হত । নাম না করে কি সেই দিকেই ইঙ্গিত করলেন মমতা ! সেই প্রশ্নও উঠেছে ৷ তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করে উত্তরবাংলা এক নম্বর হবে ।’’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উত্তরবঙ্গ আর দক্ষিণবঙ্গ এই শব্দটি খুব একটা ব্যবহার করেননি । তিনি বারবারই পশ্চিমবঙ্গ নামটাই নিয়েছেন । তিনি বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে তারাপিঠ, দেবী চৌধুরানী, জল্পেশ আছে । আমরা ভোটের সময় বলেছিলাম রেশন পৌঁছে দেব । লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষক বন্ধু করব । তা করেছি । আমরা যা বলব, তা করে দেখাব ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি আজও মনে করি উত্তরবঙ্গে কী ছিল আগে । আমি উত্তরবঙ্গে মিনি সেক্রেটরিয়েট করেছি । আমরা ট্যুরিজমকে আরও উন্নত করছি । বেঙ্গল সাফারি পার্ক, ভোরের আলো করেছি । আলিপুরদুয়ারকে জেলা করেছি ।ভারত-ভুটান ও ভারত-বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্ত হবে । রাস্তা বড় করা হচ্ছে ।’’
উত্তরবঙ্গের উন্নতির পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জয়ী সেতু-সহ একাধিক প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন । মুখ্যমন্ত্রী রেলমন্ত্রী থাকাকালীন উত্তরবঙ্গের জন্য যা করেছিলেন, সেই খতিয়ানও তুলে ধরেন ৷ তিনি জানান, শিলিগুড়িতে রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড তিনি করেছিলেন । মালবাজার চ্যারাবান্ধা রেলপথ-সহ নিউ ময়নাগুড়ি যোগীঘোপা রেলপথ তিনি করেছিলেন ৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রেলের অনেক কাজ আমি করেছিলাম । সব বন্ধ করে দিয়েছে । পদাতিক আমার দেওয়া, নিউ ময়নাগুড়ি-যোগীঘোপা আমার দেওয়া । যাঁরা বড়বড় কথা বলছে, তাঁদের লক্ষ একটাই, তা একটাই, তা হল টাকা । একটা লোক অনেক টাকা করল ৷ কিন্তু বাড়িতে বউ নেই । কথা বলার লোক নেই ।’’
আরও পড়ুন: সর্বত্র একটাই মুখ, মৃত্যু হলেও ওঁর ছবি থাকুক, মোদিকে তোপ মমতার