বক্সা ফোর্ট (আলিপুরদুয়ার), 4 জুন : ঐতিহাসিক বক্সা ফোর্ট ৷ ভারতের স্বাধীনতার স্মৃতি বিজড়িত এই বক্সা ফোর্টকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে বক্সা পাহাড়ের মানুষজন ৷ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ধ্বংসপ্রায় বক্সা ফোর্টের সংস্কার করা হচ্ছে ৷ তার পর পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে বক্সা ফোর্ট ৷ আর তাতেই নতুন করে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পাচ্ছেন বক্সার বাসিন্দারা (Locals Hope for Socio-Economic Development from Renovated Buxa Fort) ৷
বক্সার মানুষের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড বলতে পর্যটন ৷ প্রচুর মানুষ সান্তালা বাড়ি থেকে ট্রেকিং করে বক্সা পাহাড়ে আসেন ৷ একদিকে বক্সা পাহাড়ের অপরূপ শোভা ৷ অন্যদিকে, ঐতিহাসিক বক্সা ফোর্ট ৷ এই দুই পর্যটকদের টানে নিয়ে যায় আলিপুরদুয়ারের পাহাড়ি জনপদ বক্সায় ৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 2844 ফুট উপরে অবস্থিত আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা ফোর্ট ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলিপুরদুয়ার সফরে বক্সা ফোর্ট পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রথম ধাপে 3 কোটি 1 লক্ষ টাকা ব্যয় করে ক্ষয়িষ্ণু এই বক্সা ফোর্টকে বাঁচানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে ৷ ইতিহাসকে বিকৃত না করেই, বক্সার সংস্কার করছে কলকাতার ক্যালটেক সংস্থা ৷ আর্কিওলজিস্ট তমাল গোস্বামীর পরামর্শে কাজ হচ্ছে ৷ বক্সার সংস্কার এত ভাল হবে তা কেউ ভাবতেই পারেনি ৷ আমুল পরিবর্তন হয়েছে ৷ কিছুটা আধুনিকতার ছোয়া যেমন দেওয়া হয়েছে ৷ তেমনি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ফোর্টের ভিতরে ক্যাফটেরিয়াও করা হচ্ছে ৷ 2020 সালের মার্চ মাস থেকে ধ্বংসপ্রায় এই বক্সা ফোর্টের সংস্কারের কাজ শুরু করে রাজ্য সরকার ৷ প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহশালা অধিকার এবং তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের তত্ত্বাবধানে পূর্ত দফতর এই কাজ করছে ৷
বক্সার ইতিহাসকে বিকৃত না করে সংস্কার শুরু হয় । এই বক্সার জেল থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা 1931 সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্ধৃত করে কবিতা লিখেছিলেন ৷ সেই কবিতা ফলকে আজও জ্বলজ্বল করছে ৷ আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা ট্রেকিং করে বক্সায় গিয়ে কাজ পরিদর্শন করেছেন নিয়মিত ৷
আরও পড়ুন : Bhutia Basti Relocation : বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে সরছে ভুটিয়া বস্তি
1865 সালের আগে বক্সাফোর্ট ভূটান রাজার দখলে ছিল ৷ 1865 সালের 11 নভেম্বরের পর ভূটানের সঙ্গে ব্রিটিশরা সিনচুলা চুক্তির করে বক্সার দখল নেয় । ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এই বক্সা জেলেই বন্দি করে রাখা হত ৷ সেলুলার জেলের পাশাপাশি সেই সময়কার কুখ্যাত জেল হিসেবে বক্সার জেলের নাম ছিল ৷ বক্সার সেই জেলগুলিকে সংস্কার করা হয়েছে ৷ ঘাস, ফুল গাছ, আলো লাগিয়ে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে বক্সা ফোর্টকে ৷
বক্সা পাহাড়ের বাসিন্দা ইন্দ্র শঙ্কর থাপা জানান, ‘‘বক্সা ফোর্ট দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত অবস্থায় পরে ছিল ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আসার পর এই বক্সা পাহাড়ের যেমন উন্নয়ন হচ্ছে ৷ তেমনি বক্সা ফোর্টেরও সংস্কার হচ্ছে ৷ আমরা খুব খুশি। এই বক্সা ফোর্ট পর্যটকদের কাছে খুলে দিলে এখানকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে ৷ প্রচুর পর্যটক বক্সাতে আসবেন, এখানকার ইতিহাস সম্পর্কে জানবেন ৷ বক্সার মানুষের মূল রুজিরুটি পর্যটন ৷ পর্যটক এলে এখানকার গাইড বা পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা উপকৃত হবেন । আমরা চাই খুব তাড়াতাড়ি খুলে যাক বক্সা ফোর্ট ৷’’
আরও পড়ুন : Elephants at Bhoorer Alo Tourist Centre : ভোরের আলো পর্যটন কেন্দ্রে হাতির দল
বক্সা পাহাড়ের ট্যুরিস্ট গাইড জয় ডুকপা, যোগেশ থাপা জানান, ‘‘এখন বক্সা ফোর্টের সংস্কার হচ্ছে ৷ প্রথম ধাপের কাজ প্রায় শেষ । খুব তাড়াতাড়ি বক্সা ফোর্ট পর্যটকদের জন্য খুলে দিলে, আমাদের খুব ভাল হবে ৷ প্রচুর পর্যটক আসবেন ৷ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে ৷ আমরা গাইডের কাজ করি ৷ এখন পর্যটক এলেও তাঁরা বক্সায় ঢুকতে পারছে না ৷ প্রশাসন থেকে বক্সা ফোর্ট খুলে দিলে ভাল হয় ৷ আমাদের দুই পয়সা রোজগার হবে ৷’’