ETV Bharat / sports

Ritwik Das: বাংলার দুই প্রধানের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে ভারতীয় ফুটবলের হাইওয়েতে ঋত্বিক

বার্নপুরের উচ্চমধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে এখন আইএসএলে জামশেদপুর এফসির ফুটবলার। বর্তমানে ইস্পাত নগরীর ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে দুরন্ত ফুটবল খেলার পরে ভারতীয় দলে নির্বাচিত হয়েছেন।

author img

By

Published : Mar 30, 2023, 10:05 PM IST

Etv Bharat
Etv Bharat

কলকাতা, 30 মার্চ: জামশেদপুরকে বলা হয় বাঙালির দ্বিতীয় ঘর। একদা বিহার, বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত বাঙালির প্রিয় টাটানগর ওরফে জামশেদপুর এখন ভারতীয় ফুটবলের আঁতুড়ঘর। টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে বেরোনো গ্র্যাজুয়েট ফুটবলাররা দেশীয় ফুটবলে রং ছড়াচ্ছেন বহুদিন ধরে। এবার সেই তালিকায় নতুন নাম ঋত্বিক দাস। টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির গ্র্যাজুয়েট তিনি নন। বলা যায়, বাংলার বংশোদ্ভূত তিনি। বার্নপুরের উচ্চমধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে এখন আইএসএলে জামশেদপুর এফসি'র ফুটবলার। বর্তমানে ইস্পাত নগরীর ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে দুরন্ত ফুটবল খেলার পরে ভারতীয় দলে নির্বাচিত হয়েছেন।

ঋত্বিক কলকাতার দুই বড় ক্লাবে কোনওদিন খেলেননি। ময়দানের তথাকথিত ছোট ক্লাবে খেলে দুই প্রধানের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে ধাপে ধাপে উঠেছেন তিনি। পৌঁছে গিয়েছেন দেশের একনম্বর লিগ আইএসএলে। জাতীয় টিমেও তাঁর অভিষেক ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। মণিপুরের ইম্ফলে সদ্য-সমাপ্ত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে মায়ানমারের বিরুদ্ধে ভারতীয় টিমের জার্সিতে নেমেছিলেন তিনি। অর্থাৎ, বলাই যায় চ্যাম্পিয়নের আলো তাঁর গায়ে।

জামশেদপুরে খেললেও ঋত্বিকের জন্ম বার্নপুরে। স্কুল দল থেকেই ফুটবল শিক্ষার প্রথম পাঠ। তাঁর প্রতিষ্ঠার পিছনে বিরাট অবদান বাবা-মায়ের। ঋত্বিক বলেন, "যেখানে জন্ম, সেখানে ফুটবলের জনপ্রিয়তা সেভাবে ছিল না। ফুটবলার হবই, এটা ঠিক করে নিয়েছিলাম। বাবা প্ল্যান্টে কাজ করত। রাতে ডিউটি থাকত। তা সত্ত্বেও আমাকে ফুটবল শেখাতে নিয়ে যেত। স্কুলের হয়েও খেলেছি। প্রথমে ট্রায়ালে সুযোগ পেতাম না। বড়রাই প্রাধান্য পেত। তার পরে একদিন নির্বাচিত হয়ে গেলাম।" শুধু অক্লান্ত বাবা নন, ফুটবলার ঋত্বিকের উত্থানে মায়ের অবদানও রয়েছে বড় জায়গাজুড়ে। বাঙালির ফুটবল চর্চায় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের যোগ থাকবেই। দুই প্রধানে না-খেললেও যোগসূত্র থাকবেই। ঋত্বিকের মা মিতা দাস সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন দেখে মোহনবাগান স্কুলের জন্য ট্রায়ালে নিয়ে গিয়েছিলেন ছেলেকে। সেদিনের যাতায়াতের কষ্ট আজ সাফল্যের হাসিতে ভরা। প্রায় দু'বছর ছিলেন মোহনবাগান স্কুলে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?

আরও পড়ুন: শিবিরে যোগ দিলেন সুনীল, কালীঘাটে পুজো নাইট কোচ-অধিনায়কের

ঋত্বিক বলেন, "এখানে শঙ্করলাল চক্রবর্তীর মতো অত বড় কোচের অধীনে অনুশীলন করতাম। অনেক কিছু শিখতেও পারছিলাম। তখনই আমার সঙ্গে পরিচয় হয় ছোটকাকা চিন্ময় সরকারের। উনি কালিকাপুরে একটি কোচিং ক্যাম্প চালাতেন। ওনার কোচিং ক্যাম্পে অনুশীলন শুরু করে দিই। আমাকে প্রথমে ক্যালকাটা কাস্টমসে খেলার ব্যবস্থা করে দেন। আমার জীবনে ওনার অবদান অসামান্য।" ঋত্বিকের কথা ভোলেননি শঙ্করলাল চক্রবর্তী। তিনি জানান, খুব ছোটবেলায় এসেছিল। খাটতে পারত। কোনওদিন, কোনও সময় না বলত না ৷ সেদিনের ঋত্বিক আজ ভারতীয় দলে খেলছে দেখে কোচ হিসেবে একটা ভালোলাগা তো রয়েইছে।

কলকাতা ময়দানে প্রথম ক্লাব কাস্টমস। সেখানে সেভাবে খেলার সুযোগ না-পাওয়ায় ঋত্বিক যোগ দেন কালীঘাটে। সেখানে কোচ অরুণ ঘোষের অধীনে খেলা শুরু করেন। সেখান থেকেই আই লিগের দল রিয়াল কাশ্মীরে সুযোগ পান ঋত্বিক। কাশ্মীরে খেলার সেই অভিজ্ঞতা ভোলেননি ঋত্বিক। তিনি বলেন, "কাশ্মীরে খেলার অভিজ্ঞতা অন্যরকম। এখানকার সমর্থকরা ভাবেন যে আমরা বরফে খেলার সুযোগ পাচ্ছি। কিন্তু সেটা যে কতটা কঠিন তা আমরাই জানি। কারণ খেলার মাঝে বরফ ঢুকে গেলে ঠান্ডায় পা জমে যেত। মাঠও ছিল কৃত্রিম ঘাসের। ফলে বিষয়টা সহজ ছিল না একেবারেই।"
কাশ্মীর থেকে তিনি আইএসএলে কেরালা ব্লাস্টার্সে খেলেন কিবু ভিকুনার কোচিংয়ে। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। ক্লাব বদল হয়ে শানিত হয়েছেন ঋত্বিক। সেদিক থেকে তাঁর উত্থানটা জামশেদপুর এফসি'তে নিয়মিত খেলার পরেই। কঠোর পরিশ্রমে প্রতিকূলতা জয় করে ঋত্বিক দাস ভারতীয় দলে। যা বাঙালির ফুটবল চর্চায় অবশ্যই উজ্বল দিক।

আরও পড়ুন: দেশের হয়ে আরও গোল করতে চান, কিরগিজ রিপাবলিক ম্যাচের আগে জানালেন সুনীল ছেত্রী

কলকাতা, 30 মার্চ: জামশেদপুরকে বলা হয় বাঙালির দ্বিতীয় ঘর। একদা বিহার, বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত বাঙালির প্রিয় টাটানগর ওরফে জামশেদপুর এখন ভারতীয় ফুটবলের আঁতুড়ঘর। টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে বেরোনো গ্র্যাজুয়েট ফুটবলাররা দেশীয় ফুটবলে রং ছড়াচ্ছেন বহুদিন ধরে। এবার সেই তালিকায় নতুন নাম ঋত্বিক দাস। টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির গ্র্যাজুয়েট তিনি নন। বলা যায়, বাংলার বংশোদ্ভূত তিনি। বার্নপুরের উচ্চমধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে এখন আইএসএলে জামশেদপুর এফসি'র ফুটবলার। বর্তমানে ইস্পাত নগরীর ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে দুরন্ত ফুটবল খেলার পরে ভারতীয় দলে নির্বাচিত হয়েছেন।

ঋত্বিক কলকাতার দুই বড় ক্লাবে কোনওদিন খেলেননি। ময়দানের তথাকথিত ছোট ক্লাবে খেলে দুই প্রধানের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে ধাপে ধাপে উঠেছেন তিনি। পৌঁছে গিয়েছেন দেশের একনম্বর লিগ আইএসএলে। জাতীয় টিমেও তাঁর অভিষেক ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। মণিপুরের ইম্ফলে সদ্য-সমাপ্ত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে মায়ানমারের বিরুদ্ধে ভারতীয় টিমের জার্সিতে নেমেছিলেন তিনি। অর্থাৎ, বলাই যায় চ্যাম্পিয়নের আলো তাঁর গায়ে।

জামশেদপুরে খেললেও ঋত্বিকের জন্ম বার্নপুরে। স্কুল দল থেকেই ফুটবল শিক্ষার প্রথম পাঠ। তাঁর প্রতিষ্ঠার পিছনে বিরাট অবদান বাবা-মায়ের। ঋত্বিক বলেন, "যেখানে জন্ম, সেখানে ফুটবলের জনপ্রিয়তা সেভাবে ছিল না। ফুটবলার হবই, এটা ঠিক করে নিয়েছিলাম। বাবা প্ল্যান্টে কাজ করত। রাতে ডিউটি থাকত। তা সত্ত্বেও আমাকে ফুটবল শেখাতে নিয়ে যেত। স্কুলের হয়েও খেলেছি। প্রথমে ট্রায়ালে সুযোগ পেতাম না। বড়রাই প্রাধান্য পেত। তার পরে একদিন নির্বাচিত হয়ে গেলাম।" শুধু অক্লান্ত বাবা নন, ফুটবলার ঋত্বিকের উত্থানে মায়ের অবদানও রয়েছে বড় জায়গাজুড়ে। বাঙালির ফুটবল চর্চায় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের যোগ থাকবেই। দুই প্রধানে না-খেললেও যোগসূত্র থাকবেই। ঋত্বিকের মা মিতা দাস সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন দেখে মোহনবাগান স্কুলের জন্য ট্রায়ালে নিয়ে গিয়েছিলেন ছেলেকে। সেদিনের যাতায়াতের কষ্ট আজ সাফল্যের হাসিতে ভরা। প্রায় দু'বছর ছিলেন মোহনবাগান স্কুলে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?

আরও পড়ুন: শিবিরে যোগ দিলেন সুনীল, কালীঘাটে পুজো নাইট কোচ-অধিনায়কের

ঋত্বিক বলেন, "এখানে শঙ্করলাল চক্রবর্তীর মতো অত বড় কোচের অধীনে অনুশীলন করতাম। অনেক কিছু শিখতেও পারছিলাম। তখনই আমার সঙ্গে পরিচয় হয় ছোটকাকা চিন্ময় সরকারের। উনি কালিকাপুরে একটি কোচিং ক্যাম্প চালাতেন। ওনার কোচিং ক্যাম্পে অনুশীলন শুরু করে দিই। আমাকে প্রথমে ক্যালকাটা কাস্টমসে খেলার ব্যবস্থা করে দেন। আমার জীবনে ওনার অবদান অসামান্য।" ঋত্বিকের কথা ভোলেননি শঙ্করলাল চক্রবর্তী। তিনি জানান, খুব ছোটবেলায় এসেছিল। খাটতে পারত। কোনওদিন, কোনও সময় না বলত না ৷ সেদিনের ঋত্বিক আজ ভারতীয় দলে খেলছে দেখে কোচ হিসেবে একটা ভালোলাগা তো রয়েইছে।

কলকাতা ময়দানে প্রথম ক্লাব কাস্টমস। সেখানে সেভাবে খেলার সুযোগ না-পাওয়ায় ঋত্বিক যোগ দেন কালীঘাটে। সেখানে কোচ অরুণ ঘোষের অধীনে খেলা শুরু করেন। সেখান থেকেই আই লিগের দল রিয়াল কাশ্মীরে সুযোগ পান ঋত্বিক। কাশ্মীরে খেলার সেই অভিজ্ঞতা ভোলেননি ঋত্বিক। তিনি বলেন, "কাশ্মীরে খেলার অভিজ্ঞতা অন্যরকম। এখানকার সমর্থকরা ভাবেন যে আমরা বরফে খেলার সুযোগ পাচ্ছি। কিন্তু সেটা যে কতটা কঠিন তা আমরাই জানি। কারণ খেলার মাঝে বরফ ঢুকে গেলে ঠান্ডায় পা জমে যেত। মাঠও ছিল কৃত্রিম ঘাসের। ফলে বিষয়টা সহজ ছিল না একেবারেই।"
কাশ্মীর থেকে তিনি আইএসএলে কেরালা ব্লাস্টার্সে খেলেন কিবু ভিকুনার কোচিংয়ে। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। ক্লাব বদল হয়ে শানিত হয়েছেন ঋত্বিক। সেদিক থেকে তাঁর উত্থানটা জামশেদপুর এফসি'তে নিয়মিত খেলার পরেই। কঠোর পরিশ্রমে প্রতিকূলতা জয় করে ঋত্বিক দাস ভারতীয় দলে। যা বাঙালির ফুটবল চর্চায় অবশ্যই উজ্বল দিক।

আরও পড়ুন: দেশের হয়ে আরও গোল করতে চান, কিরগিজ রিপাবলিক ম্যাচের আগে জানালেন সুনীল ছেত্রী

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.