কলকাতা, 3 সেপ্টেম্বর: মার্ভেল কামিন্সের ডক্টর স্ট্রেঞ্জকে মনে আছে ? পেশায় ডাক্তার মানুষটি সময়ের মায়াজালে তৈরি করতে পারেন পরাবাস্তব। কিংবা মনে করুন হলিউডের ছবি দ্য ম্যাট্রিক্সের কথা। সেখানে চোখের পলকে বদলে যায় পারিপার্শ্বিকের ভীষণ চেনা দুনিয়া। গত এক পক্ষকালে ডুরান্ড কাপকে ঘিরে ময়দানের পরিবেশটাও বদলে গিয়েছে। বিশেষ করে বদলেছে ডার্বির পরিবেশ। এই ম্যাচ ঘিরে সাধারণত আবেগের যে উদগীরণ এবং বাকযুদ্ধ হয় তা আপাতত অদৃশ্য। ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করতে সমর্থকরাও পেপটকের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। অদৃশ্য সেটাও। বদলে, দুই প্রধানের কর্তারা এখন রেফারিং নিয়ে অভিযোগ তুলছেন। সমর্থকরা টিকিট না পেয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় টিকিট নিয়ে ম্যান মেড ক্রাইসিস তৈরির অভিযোগও উঠছে অহরহ ।
একটা টিকিটের জন্য সারারাত লাইনে দাঁডানো সমর্থকদের হাত ধরে সোনালি সত্তরের নস্টালজিয়া ফিরে পাওয়ার কথা বলছেন অনেকে । ময়দান নয়, টিকিট মিলছে নাকতলা, বিজয়গড় ও লেকটাউনে। ডুরান্ড কাপের আয়োজক সেনাবাহিনী। সহযোগী বর্তমান রাজ্য সরকার। কিন্তু টিকিটের এই হাহাকার কেন তা নিয়ে কোনও পক্ষেরই কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি নেই।
ডুরান্ড কাপ ফাইনাল ডার্বি কি শুধুই অভিযোগ সর্বস্ব ? এমন আবহে দু'দলের ফুটবলাররা কি ক্লান্ত ? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বেজায় কঠিন । কারণ আইএসএল পরবর্তী ভারতীয় ফুটবলে তথ্য আড়াল করে রাখাটাই দস্তুর। মুখে প্রশিক্ষকরা সমর্থকদের 'দ্বাদশব্যক্তি' বলবেন। কিন্তু বাস্তবে দলকে কী ট্রেনিং করাচ্ছেন তা দেখাবেন না। এটা শুধু খেলার আগের দিনের বিষয় নয়। এই খেলা চলে সারাবছর ধরে।
সেদিক থেকে ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত অনেক বেশি খোলামেলা। কথার জাগলারিতে দলের শক্তি ও দুর্বলতাকে আড়ালে রাখেন। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ জুয়ান ফেরান্দোর শরীরীভাষায় কোনও উত্তেজনা নেই। ফলে 1997 সালে ডায়মন্ড ডার্বির পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম অমল দত্ত কিংবা আরও পরে সুব্রত ভট্টাচার্য বনাম সুভাষ ভৌমিকদের দেওয়া ম্যাচের আগের গরমাগরম বিবৃতি এখন শুধুই স্মৃতি ।
আরও পড়ুন : 'হেভিওয়েট হলেই ডার্বি জেতা যায় না', বলছেন সুব্রত; বাগানকে এগিয়ে রাখছেন দীপেন্দু-নবি
তাই আর্মান্দো সাদিকু যখন বলে ফেলেন ব্যক্তিগতভাবে রবিবারের ডার্বি বদলার ম্যাচ তখন অস্বস্তিতে পড়েন জুয়ান ফেরান্দো। ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত 'নেভার সে ডাই' মানসিকতা ফুটবলারদের মধ্যে সংক্রমিত করতে চাইছেন। সেই চেষ্টার সফল মেলেনি তা বলা যাবে না । তবে লাল হলুদের স্প্যানিশ হেডস্যার অনেক বেশি হোমওয়ার্ক করেন। 2016 সালে মোহনবাগানকে পরপর দুটো ম্যাচে হারানোর কৃতিত্বকে মনে করিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে বলছেন কাজটা কঠিন।
প্রতিপক্ষ মোহনবাগান ডুরান্ড কাপের প্রথম সাক্ষাতের তুলনায় যে অনেক বেশি শানিত হয়েছে তা তাঁর ময়নাতদন্তে ধরা পড়েছে। তাই সতর্ক কার্লেস কুয়াদ্রাত। তাঁর কথায়,"একটা গড়ে তোলার কাজ চলছে । কোথায় ছিলাম, কোথায় পৌঁছেছি আর কোথায় পৌঁছতে হবে তা আমরা জানি। ফাইনালে ওঠাটা কৃতিত্বের ব্যাপার। ভুলে যাবেন না প্রাক মরশুম প্রস্তুতি চলছে । তবে সমর্থকদের প্রত্যাশার পারদে সাযুজ্য রেখে আমরা তাঁদের মুখের হাসি ধরে রাখতে চাই ।"
গত দশ দিনে চারটে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এবং তা কঠিনতম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলার ঝক্কির কথা বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন জুয়ান ফেরান্দো । মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। পাসের মায়াজালে প্রতিপক্ষকে চক্রব্যূহে গাঁথতে চাইছেন। চলতি বছরে তাঁর বাগানে দেশি বিদেশি এত ভালো ফুলের সমাহার যা দিয়ে সঠিক মালা গাঁথা তাঁর কাছে 'হ্যাপি প্রবলেম'।
বিষয়টি মাথায় রেখে জুয়ান ফেরান্দোও সতর্ক । নিস্পৃহভাব তাঁর শরীরীভাষায় দেখা গেলেও সমর্থকদের চোখের ভাষা পড়তে ভুল হয়নি তাঁর। তাই তাঁর কথায়, "ডুরান্ডে প্রথম ডার্বির সময় আমার মাথায় এএফসির চিন্তা ছিল । এবার সেটা নেই। ফাইনালে ওঠাটা কৃতিত্বের। ট্রফি জয় করতেই নামব ৷" দলে গোল করার একাধিক বিকল্প আছে । তাই ফেরান্দো সঠিকভাবে জয়ের বিরিয়ানিতে মশলাটা মেশাতে চান। বার্সেলোনার ফুটবল দর্শনে দীক্ষিত দুই ফুটবল গুরুর দ্বৈরথ শুরু হতে চলেছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাদে। দিনের শেষে বদলা না পুনরুত্থান- কোনটা হয় তা জানতে অপেক্ষা সন্ধ্যা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন : আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় ডুরান্ড ফাইনাল, ডার্বি দেখতে যাওয়ার আগে জেনে নিন নির্দেশিকা...