কলকাতা, 21 নভেম্বর : কোরোনা আতঙ্ক সরিয়ে নিউ নর্মালে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন ক্রীড়াবিদরা । সব না হলেও বেশ কিছু খেলা শুরু হয়েছে বিধিনিষেধের লক্ষ্মণরেখায় । দর্শকশূন্য স্টেডিয়াম, বায়ো বাবলে থাকার একঘেয়েমি রয়েছে ৷ তবে সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে ক্রীড়াবিদরা সেভাবেই মানিয়ে নিচ্ছেন ৷ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন । কিন্তু বক্সিং, কুস্তির মতো বডি কন্টাক্ট গেমগুলির এখনও রিং বা আখড়ায় নামার ছাড়পত্র মেলেনি । ফলে অনুশীলনের জন্য নানা জায়গায় হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁরা ।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা ও পদক জয়ের নজির রয়েছে দুই বক্সার মণীষা নারোওয়াল এবং অনামিকার ৷ দেশের হয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে পদক পাওয়া এই দুই মহিলা বক্সার এখন কলকাতায় । দুজনই হরিয়ানার রোহতকের মেয়ে ৷ আনলক ওয়ানে ভারতীয় রেলে চাকরি পেয়েছেন । সেই সূত্রে শহর কলকাতায় আসা । এখানকার আদব কায়দার সঙ্গে সড়গড় হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন । কিন্তু তাঁদের সবচেয়ে বড় অস্বস্তি অনুশীলনের জন্য বক্সিং রিং-এর অপ্রতুলতা । ভবানীপুর বক্সিং ক্লাবে ঘাম ঝরালেও তা নানা কারণে অনিয়মিত । ফলে, নিজেদের ফিট রাখতে মণীষা এবং অনামিকার ভরসা হরিশপার্কের একটুকরো জায়গা ।
বক্সিং বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে 64 কেজি বিভাগে পদকপ্রাপ্ত মণীষাকে বক্সিং রিংয়ে নিয়ে এসেছিলেন রোহতাজ স্যার । তার আগে 2010 থেকে 2013 সাল পর্যন্ত কবাডি খেলেছেন মণীষা । কোর্টের মধ্যে তাঁর ক্ষিপ্রতা দেখে কোচ তাঁকে বক্সিং অনুশীলন করতে বলেন । কোচের কথা মেনে অনুশীলন শুরু করার মাত্র ছয়মাসের মধ্যে নিয়মিত সাফল্য আসতে থাকে । 64 কেজি বিভাগে একাধিকবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে পদক আসে মণীষার ঝুলিতে । লকডাউন তাঁর ভবিষ্যৎ লক্ষ্য পূরণে রাশ টেনেছে । কিন্তু লক্ষ্যচ্যুত করেনি । ফলে, লক্ষ্য পূরণে মণীষা রিংয়ের অভাবে পার্কের সবুজ ঘাসকে বেছে নিয়েছেন । তাঁদের সমস্যা বাড়িয়েছে সাইয়ের দরজা বন্ধ হওয়ায় । মেরি কমের ভক্ত 2024 সালের অলিম্পিকের আসরে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখেন । আপাতত কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সমর্থনে দেশের সরকারের পদক্ষেপে পা মেলাতে চান । তাই কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর নির্দেশ মেনে চলছেন । অভিযোগের আঙুল তুলছেন না । অনুশীলনে প্রতিযোগিতার খিদে তৈরি হয় । কিন্তু এখন তো শুধুই অনুশীলন ৷ মণীষা বলছেন, এটা ভীষণ একঘেয়েমির ৷ তাই রিংয়ে নামার অনিয়মিত সুযোগ উপেক্ষা করে পার্কে নিজেদের তৈরি রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত তাঁরা ।
মণীষার মতো পার্কেই নিজেকে গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত অনামিকা । বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে 51 কেজি বিভাগে রানার্স হয়েছিলেন । রেসলিং থেকে বক্সিংয়ের রিংয়ে এসেছিলেন কোচ রোহন খোক্করের উৎসাহে । মাত্র পাঁচ বছরে সাফল্য অনামিকার পায়ে পায়ে হেঁটেছে । বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্সারের কাছে পরাজয়ের আক্ষেপ রয়েছে । সেই অনামিকা কলকাতায় এসে ভবানীপুর বক্সিং ক্লাবে অনুশীলন চালাচ্ছেন ৷ কিন্তু বিভিন্ন কারণে অনেক সময়ই তা সম্ভব হচ্ছে না ৷ ফলে মণীষার সঙ্গে তাঁর ভরসাও হরিশ পার্কের একটুকরো সবুজ । সকালে ভিক্টোরিয়াতে দৌড়াচ্ছেন ৷ পরে বিকেলে বক্সিংয়ের ছায়া যুদ্ধে নামছেন । প্রতিযোগিতাহীন আপাত ভবিষ্যৎ হতাশ করলেও এইসময়টা মানসিকভাবে কঠিন থাকতে চান, বলছেন অনামিকা ।
ডিসেম্বরে কলকাতায় বক্সিংয়ের বড় আসর হওয়ার কথা শুনেছেন । সেটাতেই আশার আলো দেখছেন হরিয়ানার দুই বক্সার । তার আগে নিজেদের ফিট এবং প্রস্তুত রাখার সর্বোত চেষ্টা করে চলেছেন অলিম্পিকের স্বপ্ন দেখা মেরি কমের এই দুই অনুসরণকারী ।