কলকাতা, 15 অগস্ট: প্রয়াত ভারতীয় ফুটবলের বড়ে মিঞা । খবরটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সুব্রত ভট্টাচার্য । একপ্রকার ঝাঁঝিয়ে উঠলেন । তারপর শান্ত হয়ে প্রতিক্রিয়া, “পুরো দিনটাই খারাপ হয়ে গেল রে । আমরা আমাদের নেতাকে হারালাম । কি বলব । আমি যখন প্রথম মোহনবাগানে খেলতে এলাম তখন ক্লাবের মেসে থাকতাম । মেসে আমাদের অভিভাবক ছিলেন হাবিব’দা । খেলার বাইরে অন্য কিছুতে মন দিলেই হাবিব’দা রেগে যেত, শাসন করত । রাত ন’টার পরে কোনও ফুটবলারকে জেগে থাকতে দেখলে বা বাইরে দেখলে প্রচণ্ড শাসন করত । আমাকে তো চ্যালা কাঠ দিয়ে একবার মেরেছিল । প্র্যাকটিসেও নিয়মানুবর্তিতার শেষ কথা । প্রতিপক্ষ যত বড়ই হোক না কেন, ড্রেসিংরুমকে চার্জড আপ করার কাজটা করত হাবিব’দা । কসমসের বিরুদ্ধে খেলার দিন প্রদীপ’দাকে বলেছিল, স্কোরবোর্ড শূন্য থেকে শুরু হয় । হাবিব’দা যদি না-থাকত, আমি হয়তো হারিয়ে যেতাম । বিশ্বাস করতে পারছি না ।”
প্রয়াত সুভাষ ভৌমিক বলতেন, বড়ে মিঞা তাদের অভিভাবক । সমসাময়িক ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম গৌতম সরকার স্তম্ভিত খবরটা শুনে । “ক্লাব থেকে ভারতীয় ফুটবল, কত ম্যাচ আমরা এক সঙ্গে খেলেছি । কত বড় ফুটবলার ছিল তা কথায় বোঝানো সম্ভব নয় । নিয়মানুবর্তিতায় শেষ কথা । একজন খেলোয়াড়ের শেষ কথা নিয়মানুবর্তিতা । হাবিব ভাই সেখানে নিজেও কঠোর এবং তাঁর সঙ্গে যারা খেলতেন তাদের জন্য একই রকম কড়া মানসিকতার । কোনও বেচাল করার সাহস হত না আমাদের । প্রতিপক্ষের নাম নয়, মাঠে নেমে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে মাপতেন । সবাইকে চলে যেতে হয় । হাবিব ভাইও চলে গেলেন । মেনে নিতে হবে । আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ৷” বলছিলেন গৌতম সরকার ।
আরও পড়ুন: জীবনের ময়দান থেকে অবসরে হাবিব, প্রয়াত ভারতীয় ফুটবলের 'বড়ে মিঞা'
বড়ে মিঞার সঙ্গে খুব বেশীদিন খেলার সুযোগ হয়নি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের । মহম্মদ হাবিবের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ তিনিও । কলকাতা ময়দানের নামকড়া ডিফেন্ডার, “একজন ফুটবলারের নিয়মানুবর্তিতা সবার আগে । আমি হাবিব’দার সঙ্গে একবছর খেলেছি । কিন্তু শিখেছি তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু । যারা ভালো ফুটবল খেলতে চায়, তাদের কাছে হাবিব’দা শিক্ষনীয় চরিত্র । ফুটবল খেলতে হলে মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও অনেক নিয়ন্ত্রণে থাকতে হয় । আমি হাবিব’দার কাছ থেকে সেগুলো শিখেছি । 1980 সালের রোভার্স কাপের সেমিফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচ । আপ অ্যাণ্ড ডাউন ম্যাচ হয়েছিল । একবার আমরা আক্রমণ করছি । আরেকবার ওরা করছে । এইভাবে ওঠা-নামা করতে করতে আমরা প্রতি আক্রমণে তিরিশ মিনিটের ব্যবধানে দু’গোলে পিছিয়ে পড়েছিলাম । যখন দু’গোলে পিছিয়ে পড়েছি তখন মানসিকভাবে হতাশ গিয়েছিলাম । জাল থেকে বল কুড়িয়ে নিয়ে হাবিব’দা যাওয়ার সময় গালাগালি দিল । আর আমাকে বলল, কেয়া রে খতম হো গ্যায়া । এমনভাবে বলেছিল, শরীরী ভাষায় জ্বলে উঠেছিলাম । ম্যাচটা 2-2 গোলে শেষ হয়েছিল । পরের দিন রিপ্লে’তে আমরা জিতেছিলাম ৷”
মহম্মদ হাবিবকে নিয়ে স্মৃতি উজ্জ্বল দীপেন্দু বিশ্বাসের । বর্তমানে মহমেডান ক্লাবের ফুটবল সচিবের ফুটবলের হাতেখড়ি কোচ মহম্মদ হাবিবের কাছে । কলকাতা ময়দানের সফল প্রাক্তনী বলেন, “টিএফতে আমার হাতে দশ নম্বর জার্সি তুলে দিয়েছিলেন হাবিব স্যর । উনি না-থাকলে আমি দীপেন্দু বিশ্বাস হতে পারতাম না । মহমেডান ক্লাবে কোচ হিসেবে পেয়েছিলাম । হাবিব স্যর অনন্য । ওর মৃত্যুতে ভারতীয় ফুটবল দৈন্য হল ।”
আরও পড়ুন: 'বড়ে মিঞা'কে দেখেই 'ছোটে মিঞা' হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন আকবর