কলকাতা, 1 অগস্ট: "অপ্রতিরোধ্য হতে চাই । এই যে স্পিরিট দলের রয়েছে মধ্যে রয়েছে তা বজায় থাকে সেটাই লক্ষ্য । কলকাতায় পা-দেওয়ার পরেই আমি এই স্পিরিটটা উপলব্ধি করেছি," কার্লোস কুয়াদ্রাত ক্লাবের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এসে মেজাজটা বেঁধে দিলেন । দরজায় কড়া নাড়ছে ডুরান্ড কাপ । প্রস্তুতি চলছে । পাশাপাশি দলকে ঘিরে যে প্রত্যাশার পারদ চড়ছে তা উপলব্ধি করছেন লাল-হলুদ কোচ।
ক্ষুদিরাম অনুলীলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সম্মানজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে প্রবেশ এবং প্রস্থান পর্যন্ত কার্লোস ব্রিগেড সদস্য সমর্থকদের প্রত্যাশার ভেলায় ভেসে বেড়ালেন । পারফরম্যান্সই যে এই আবেগের একমাত্র উত্তর হতে পারে তা বুঝতে পেরে দলের মধ্যে লড়াইয়ের মন্ত্র ছড়িয়ে দিতে চাইলেন । কোচের লড়াইয়ের কথা সিনিয়র দলের অন্যতম সিনিয়র ফুটবলার হরমনজিৎ খাবরার মুখে । "একদিনে সব বদলে যাবে এমন ভাবলে ভুল হবে। প্রতিটি টুর্নামেন্টে লক্ষ্য স্থির করে এগোতে হবে। ডুরান্ড, আইএসএল সব প্রতিযোগিতাতে ধাপে ধাপে এগোনোর কথা বলছি," মন্তব্য হরমনজিতের । নতুন মরশুমের পুরো দলকে মঞ্চে সংবর্ধিত করা হয় এদিন ।
104তম প্রতিষ্ঠা দিবস ইস্টবেঙ্গলের । মঙ্গলবার সকাল থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল প্রদীপ জ্বালিয়ে, পতাকা উত্তোলন করে এবং কেক কেটে । বিকেলে সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানে বসল চাঁদের হাট । রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, রাজ্যের অর্থমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী, কলকাতার মহানাগরিক এবং শিলিগুড়ির মহানাগরিক সকলেই উপস্থিত ছিলেন এদিনের লাল-হলুদ মঞ্চে । প্রধান অতিথি রামকৃষ্ণ মঠ এবং মিশনের সাধারন সচিব সুবীরানন্দজীর মুখে ইস্টবেঙ্গলের গৌরবময় ইতিহাস এবং ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারের কথা । রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মুখেও ইস্টবেঙ্গলের লড়াকু মানসিকতার কথা ।
ভারত গৌরব সম্মান দেওয়া হল রতন টাটাকে । তবে তিনি আসতে পারবেন না আগেই জানিয়েছিলেন । তাঁর স্মারক সম্মান আগামী কোনও সময়ে তুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে ক্লাব । অনুপস্থিত বছরের সেরা ফুটবলার ক্লেইটন সিলভা । ভিসা সমস্যায় ভারতে আসতে পারেননি তিনি । তাঁর পুরস্কার কার্লোস কুয়াদ্রাতের ব্রিগেডের হাতে তুলে দেওয়া হল । সেরা উদীয়মান ফুটবলারের পুরস্কার উঠল মহেশ নওরেম সিংয়ের হাতে । নতুন বছরেও ভালো পারফরম্যান্সের প্রতিশ্রুতি এই মণিপুরী ফুটবলারের মুখে । জীবনকৃতি সম্মান পেলেন প্রাক্তন গোলরক্ষক তরুণ বসু । তাঁকে সম্মানিত করেন আরেক কিংবদন্তি গোলরক্ষক ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় ।
আরও পড়ুন : লাল-হলুদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে দুই বাংলার মিলনমেলা
"1975 সালে পাঁচ গোলের ম্যাচে মোহনবাগানের গোলে দাঁড়িয়ে চার গোল খেয়েছিলাম । ব্যর্থ গোলরক্ষককে ইস্টবেঙ্গল তুলে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে । প্র্যাকটিস বা ম্যাচ নিজের জায়গা ছেড়ে আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছিলেন তরুণ বসু । মানুষ হিসেবে তিনি তুলনাহীন," কিংবদন্তি গোলরক্ষকের প্রশংসায় আরেক কিংবদন্তি । জীবনকৃতি সম্মান পেয়ে তৃপ্ত তরুণ বসুর আক্ষেপ, "আমাকে তো বলতেই দিল না ।" জীবনকৃতি সম্মান পেলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার অরূপ ভট্টাচার্য । তাঁকে স্মারক পুরস্কার তুলে দেন সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ।
"বাংলা দলে আমার শুরুর দিনে মানসিক জোর বাড়ানোর ব্যাপারে অরূপদার অবদান অনস্বীকার্য ," বলছিলেন বাংলা দলের প্রাক্তন ব্যাটার । বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার উঠল অঙ্কুর পালের হাতে । এই অনুষ্ঠানে ছিলেন আইএফএর প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবে, সচিব সাজি প্রভাকরণ-সহ অন্যান্য পদাধিকারীরা । তাঁদের হাতেই ক্লাবের অ্যালম্যানাকের প্রকাশ হল । ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবের কথায়, "ভারতীয় দল গতবছর 24টি আর্ন্তজাতিক ম্যাচ খেলেছে । যত বেশি ম্যাচ খেলবে তত বেশি সাফল্যের পথে পা রাখবে । এই বছরেও যত বেশি সংখ্যক ম্যাচ খেলবে ভারতীয় দল । সামনে এশিয়ান গেমস, বিশ্বকাপের যোগ্যতামান অর্জনের খেলা রয়েছে । ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের জন্য সামনে তাকানো জরুরি ।"
তবে ফেডারেশন সভাপতির বক্তব্যের পরোক্ষ সমালোচনায় রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস । তাঁর বক্তব্য, "ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি শুধুমাত্র মুখে বললে হবে না । করে দেখাতে হবে । যা করে দেখিয়েছে এই রাজ্য সরকার । ক্লাবগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে । বাংলার ফুটবলের উন্নতি ছাড়া ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি সম্ভব নয় ৷"
ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান মঞ্চে কলকাতার মহানাগরিক এবং ক্রীড়ামন্ত্রীর মধ্যে ইস্ট-মোহনের সমর্থন নিয়ে উপভোগ্য লড়াই দেখল উপস্থিত সকলে । মহানাগরিক নিজেকে ইস্টবেঙ্গল সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিয়ে অন্ধকার সময় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বললেন । একই সঙ্গে বাঙাল পরিবারের সদস্য হয়ে কেন ক্রীড়ামন্ত্রী মোহনবাগানের সমর্থক তা বুঝতে না পারার কথা বললেন ।
যদিও ক্রীড়ামন্ত্রী নিজেকে কোনও দলের সদস্য বলতে নারাজ । ইস্টবেঙ্গলের অনুষ্ঠান আর ইলিশ মাছ আসবে না তা কি করে হয় ? পুরস্কার প্রাপকদের প্রত্যেকের হাতে ইলিশ তুলে দেওয়া হল । এ বছরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী দুই বাংলার মিলন মঞ্চ । লাল-হলুদ জার্সিতে খেলে যাওয়া আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রয়াত মোনেমের পরিবারের সদস্য, আসলাম, গাউসকে সংবর্ধনা দেওয়া হল । সংবর্ধিত হলেন আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রাক্তন সভাপতি হারুনুর রশিদকে । সংবর্ধিত হলেন ওপার বাংলার গায়িকা মেহেরিন মাহমুদ । আবাহনী ক্রীড়াচক্রের পক্ষ থেকেও স্মারক উপহার তুলে দেওয়া হয় । প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা উপহার এল ইস্টবেঙ্গলের পড়শি ক্লাব মোহনবাগান এবং মহমেডান স্পোর্টিং থেকেও ।
আরও পড়ুন : আবার 5 গোল ইস্টবেঙ্গলের, লাল-হলুদ ঝড় তুলে সেরা অভিষেক