ETV Bharat / sports

বয়স শুধুই সংখ্যা, ছিয়াত্তরেও দৌড় নিরঞ্জনের

চোট পেয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেলেও হাল ছাড়েননি নিরঞ্জন চক্রবর্তী । নেমে পড়েন অ্যাথলেটিক্সে । শুরু হয় দৌড় । সেই দৌড় আজও চলছে ।

অনুশীলনে নিরঞ্জন চক্রবর্তী
author img

By

Published : Jun 26, 2019, 4:48 PM IST

Updated : Jun 26, 2019, 5:33 PM IST

কলকাতা, 26 জুন : আম জনতার ভিড়ের মধ্যে ওঁর ছোটোখাটো শরীরটা হেঁটে গেলে আলাদা করে চোখে পড়ে না । তাই অনেকেই জানে না এই লোকটি 76 বছর বয়সেও দেশের হয়ে এশীয় মিটে পদক যুদ্ধে নামেন । নিরঞ্জন চক্রবর্তী । বয়স তাঁর কাছে সংখ্যা মাত্র । তাই স্বপ্ন দেখার নেই সীমানা লাইনটি ওঁর পায়ে পায়ে ঘোরে ।

রোজ সকালে বেলঘড়িয়া অ্যাথলেটিক্সের মাঠে অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে সমান তালে শরীর চর্চা করেন এক প্রৌঢ় । মুখে অসংখ্য বলিরেখা, যা তাঁর অভিজ্ঞতার অভিজ্ঞান । মাঠে সবাই ওকে মাস্টারমশাই বলে ডাকেন । আসলে খুদে অ্যাথলিটদের তৈরি করার পাশাপাশি তিনি নিজেকেও আসন্ন প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করেন ।

নিরঞ্জন চক্রবর্তীর জীবনটা চেনা পথের বাইরে অন্যভাবে চলার উপাখ্যান । ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন । সেইমত কলেজ ফুটবলে দাপটে খেলেছেন । আন্তঃ কলেজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পরে 1965 সালে ইলিয়ট শিল্ডে প্রতিনিধিত্ব করেছেন । বিদ্যাসাগর কলেজের হয়ে সেমিফাইনালে খেলার সময় হাঁটুতে গুরুতর আঘাত পান যা নিরঞ্জন চক্রবর্তীর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নকে কার্যত মুছে দেয় । কিন্তু মাঠের প্রেমে যিনি পড়েছেন তিনি মাঠ ছেড়ে থাকবেন কীভাবে । অতএব দু’বছর পরে ফের মাঠে ফেরা । এবার অবশ্য ফুটবলে নয় । শরীরকে ফিট রাখতে দৌড় শুরু করেন । কিন্তু তাঁর দৌড়ানোর স্টাইল দেখে কালী সিং ও বিশ্বনাথ সিং অ্যাথলেটিক্সে মনোনিবেশ করতে বলেন । স্প্রিন্ট নয়, লং ডিসস্ট্যান্সে নামার পরামর্শ দেন । সেই শুরু ।

1
শিষ্যদের সঙ্গে নিরঞ্জন চক্রবর্তী

ফুটবলে যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই আবার শুরু পথচলা । বিদ্যাসাগর কলেজের স্পোর্টসে 5000 মিটারে তিনবার প্রথম স্থান অধিকার করেন । এরপর বিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টসে বিদ্যাসাগর কলেজের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন । 1968 সালে অল বেঙ্গল ক্রস কান্ট্রি রেসে দ্বিতীয় স্থান পান । ওই বছরেই জাতীয় ক্রস কান্ট্রিতে বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন নীরঞ্জন চক্রবর্তী । এরপর 1970 সালে হাওড়া জেলা মিটে ব্রোঞ্জ পান ।

আর্থিক অনটন মানুষটির অগ্রগতির পথে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । ফলে সংসারের দায় মেনে ট্র্যাক থেকে সরে দাঁড়াতে হয় । শুরু হয় চাকরি পাওয়ার জন্য সংগ্রাম । রেশন দোকানের খাতা লেখার কাজ করেছেন । একই সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়েছেন । এভাবেই 1980 সালে প্রথম MA পাশ করেন । একই সঙ্গে বেলঘড়িয়া হাইস্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন । কিন্তু বেশিদিন অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে থাকতে হয়নি । এবার রঘুনাথপুর অ্যাকাডেমীতে স্থায়ী শিক্ষকের চাকরি জোটে । শিক্ষকতা করার ফাঁকে আরও দুটো বিষয়ে MA করেন নিরঞ্জন চক্রবর্তী । করেছেন B.Ed-ও ।

অনুশীলনে নিরঞ্জন চক্রবর্তী

শিক্ষকতা করলেও মনের মাঝে অ্যাথলেটিক্সের খিদেটা রয়ে গিয়েছিল । ফলে নয়ের দশকের শুরু থেকেই ফের অ্যাথলেটিক্স চর্চা শুরু করেন । এবার তিনি মাস্টার্স বা ভেটেরান্স অ্যাথলিটে অংশগ্রহণ করেন । 1992 সাল থেকে টানা রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়ে নিয়মিত পদক পেয়েছেন । 2004 সালে প্রথমবার শ্রীলঙ্কা ইন্টারন্যাশানাল ওপেন মিটে অংশগ্রহণ ও দ্বিতীয় স্থান লাভ । ওই বছরই চেন্নাইয়ে জাতীয় মিটের হাফ ম্যারাথনে অংশগ্রহণ ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ । 2009 সালে প্রথমবার 14তম এশিয়ান মিটে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন । পদক না পেলেও ষষ্ঠ হয়েছিলেন । পরের বছর চতুর্থ মিলিটারি ওয়ার্ল্ড গেমে সিনিয়র পর্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন ।

2010 সালে কুয়ালামপুরে 18তম এশিয়ান মিটে ফের দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন । 10 কিলোমিটার মিনি ম্যারাথনে দশম হয়েছিলেন । 2009 সালে রাজ্য মিট ও 2011 সালের রাজ্য মিটে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন । মাঝে 2008 সালে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় মিটের হাফ ম্যারাথনেও সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি । 2014 সালে কোয়েম্বাটোরে জাতীয় মিটের হাফ ম্যারাথনে সাফল্য পেয়েছেন । চলতি বছর গুন্টুরে 40তম জাতীয় আসরে স্টিপল চেজে ফের প্রথম স্থান অধিকার করেছেন ।

এবার সামনে এশিয়ান মিট । সেখানে অংশগ্রহণের জন্য তৈরি হচ্ছেন । আর্থিক সমস্যা রয়েছে । কিন্তু পারিবারিক সমর্থন ও শুভানুধ্যায়ীদের উৎসাহে স্বপ্ন দেখছেন । চোখে রয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নে অংশগ্রহণের ইচ্ছে ।

মধ্য সত্তরেও নিজেকে বৃদ্ধ বলতে নারাজ । ভেটেরান্সদের আসরে তার থেকেও সিনিয়ররা বহাল তবিয়তে অংশ নিচ্ছেন বলে জানালেন। আজও রাস্তায় চেনা পরিচিতরা মাস্টারমশাইয়ের সাফল্যের খবর নেন । তাই বয়সের সংখ্যার দিকে না তাকিয়ে চোখে স্বপ্ন নিয়ে সাফল্যের দৌড় চালিয়ে যেতে চান নিরঞ্জন চক্রবর্তী ।

কলকাতা, 26 জুন : আম জনতার ভিড়ের মধ্যে ওঁর ছোটোখাটো শরীরটা হেঁটে গেলে আলাদা করে চোখে পড়ে না । তাই অনেকেই জানে না এই লোকটি 76 বছর বয়সেও দেশের হয়ে এশীয় মিটে পদক যুদ্ধে নামেন । নিরঞ্জন চক্রবর্তী । বয়স তাঁর কাছে সংখ্যা মাত্র । তাই স্বপ্ন দেখার নেই সীমানা লাইনটি ওঁর পায়ে পায়ে ঘোরে ।

রোজ সকালে বেলঘড়িয়া অ্যাথলেটিক্সের মাঠে অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে সমান তালে শরীর চর্চা করেন এক প্রৌঢ় । মুখে অসংখ্য বলিরেখা, যা তাঁর অভিজ্ঞতার অভিজ্ঞান । মাঠে সবাই ওকে মাস্টারমশাই বলে ডাকেন । আসলে খুদে অ্যাথলিটদের তৈরি করার পাশাপাশি তিনি নিজেকেও আসন্ন প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করেন ।

নিরঞ্জন চক্রবর্তীর জীবনটা চেনা পথের বাইরে অন্যভাবে চলার উপাখ্যান । ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন । সেইমত কলেজ ফুটবলে দাপটে খেলেছেন । আন্তঃ কলেজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পরে 1965 সালে ইলিয়ট শিল্ডে প্রতিনিধিত্ব করেছেন । বিদ্যাসাগর কলেজের হয়ে সেমিফাইনালে খেলার সময় হাঁটুতে গুরুতর আঘাত পান যা নিরঞ্জন চক্রবর্তীর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নকে কার্যত মুছে দেয় । কিন্তু মাঠের প্রেমে যিনি পড়েছেন তিনি মাঠ ছেড়ে থাকবেন কীভাবে । অতএব দু’বছর পরে ফের মাঠে ফেরা । এবার অবশ্য ফুটবলে নয় । শরীরকে ফিট রাখতে দৌড় শুরু করেন । কিন্তু তাঁর দৌড়ানোর স্টাইল দেখে কালী সিং ও বিশ্বনাথ সিং অ্যাথলেটিক্সে মনোনিবেশ করতে বলেন । স্প্রিন্ট নয়, লং ডিসস্ট্যান্সে নামার পরামর্শ দেন । সেই শুরু ।

1
শিষ্যদের সঙ্গে নিরঞ্জন চক্রবর্তী

ফুটবলে যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই আবার শুরু পথচলা । বিদ্যাসাগর কলেজের স্পোর্টসে 5000 মিটারে তিনবার প্রথম স্থান অধিকার করেন । এরপর বিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টসে বিদ্যাসাগর কলেজের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন । 1968 সালে অল বেঙ্গল ক্রস কান্ট্রি রেসে দ্বিতীয় স্থান পান । ওই বছরেই জাতীয় ক্রস কান্ট্রিতে বাংলার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন নীরঞ্জন চক্রবর্তী । এরপর 1970 সালে হাওড়া জেলা মিটে ব্রোঞ্জ পান ।

আর্থিক অনটন মানুষটির অগ্রগতির পথে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে । ফলে সংসারের দায় মেনে ট্র্যাক থেকে সরে দাঁড়াতে হয় । শুরু হয় চাকরি পাওয়ার জন্য সংগ্রাম । রেশন দোকানের খাতা লেখার কাজ করেছেন । একই সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়েছেন । এভাবেই 1980 সালে প্রথম MA পাশ করেন । একই সঙ্গে বেলঘড়িয়া হাইস্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন । কিন্তু বেশিদিন অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে থাকতে হয়নি । এবার রঘুনাথপুর অ্যাকাডেমীতে স্থায়ী শিক্ষকের চাকরি জোটে । শিক্ষকতা করার ফাঁকে আরও দুটো বিষয়ে MA করেন নিরঞ্জন চক্রবর্তী । করেছেন B.Ed-ও ।

অনুশীলনে নিরঞ্জন চক্রবর্তী

শিক্ষকতা করলেও মনের মাঝে অ্যাথলেটিক্সের খিদেটা রয়ে গিয়েছিল । ফলে নয়ের দশকের শুরু থেকেই ফের অ্যাথলেটিক্স চর্চা শুরু করেন । এবার তিনি মাস্টার্স বা ভেটেরান্স অ্যাথলিটে অংশগ্রহণ করেন । 1992 সাল থেকে টানা রাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়ে নিয়মিত পদক পেয়েছেন । 2004 সালে প্রথমবার শ্রীলঙ্কা ইন্টারন্যাশানাল ওপেন মিটে অংশগ্রহণ ও দ্বিতীয় স্থান লাভ । ওই বছরই চেন্নাইয়ে জাতীয় মিটের হাফ ম্যারাথনে অংশগ্রহণ ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ । 2009 সালে প্রথমবার 14তম এশিয়ান মিটে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন । পদক না পেলেও ষষ্ঠ হয়েছিলেন । পরের বছর চতুর্থ মিলিটারি ওয়ার্ল্ড গেমে সিনিয়র পর্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন ।

2010 সালে কুয়ালামপুরে 18তম এশিয়ান মিটে ফের দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন । 10 কিলোমিটার মিনি ম্যারাথনে দশম হয়েছিলেন । 2009 সালে রাজ্য মিট ও 2011 সালের রাজ্য মিটে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন । মাঝে 2008 সালে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় মিটের হাফ ম্যারাথনেও সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি । 2014 সালে কোয়েম্বাটোরে জাতীয় মিটের হাফ ম্যারাথনে সাফল্য পেয়েছেন । চলতি বছর গুন্টুরে 40তম জাতীয় আসরে স্টিপল চেজে ফের প্রথম স্থান অধিকার করেছেন ।

এবার সামনে এশিয়ান মিট । সেখানে অংশগ্রহণের জন্য তৈরি হচ্ছেন । আর্থিক সমস্যা রয়েছে । কিন্তু পারিবারিক সমর্থন ও শুভানুধ্যায়ীদের উৎসাহে স্বপ্ন দেখছেন । চোখে রয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নে অংশগ্রহণের ইচ্ছে ।

মধ্য সত্তরেও নিজেকে বৃদ্ধ বলতে নারাজ । ভেটেরান্সদের আসরে তার থেকেও সিনিয়ররা বহাল তবিয়তে অংশ নিচ্ছেন বলে জানালেন। আজও রাস্তায় চেনা পরিচিতরা মাস্টারমশাইয়ের সাফল্যের খবর নেন । তাই বয়সের সংখ্যার দিকে না তাকিয়ে চোখে স্বপ্ন নিয়ে সাফল্যের দৌড় চালিয়ে যেতে চান নিরঞ্জন চক্রবর্তী ।

Intro:চোখে স্বপ্ন


Body:বিশ্ব


Conclusion:
Last Updated : Jun 26, 2019, 5:33 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.