কলকাতা, 14 অগাস্ট : মোহনবাগান হারেনি। কলকাতা লিগে কাস্টমস বিরুদ্ধে 1-1 ড্র হওয়ার পরে অনেকেই মানছেন কিবু ভিকুনার ছেলেরা কপাল জোরে পয়েন্ট নিয়ে ফিরল। ম্যাচের একুশ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ফ্রান্সিসকো গঞ্জালেসের জোরালো শটে গোল মোহনবাগানের । মনে হয়েছিল পিয়ারলেস ম্যাচের হারের ধাক্কা সরিয়ে সবুজ মেরুন হয়তো দাপট দেখাবে । কিন্তু ভাবনা ও বাস্তবের মধ্যে ফারাক যে বিস্তর । তাই সময় যত এগিয়েছে ততই হতশ্রী হয়েছে বাগান ।
ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের সমর্থকরা এখন অনেক রংবেরঙের উপাদান নিয়ে মাঠে আসেন । প্রিয় ক্লাবকে ঘিরে নানা ভাবনার প্রকাশ সেই উপাস্থাপনায় । একটা পরিকল্পনা থাকে । স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতীয় পতাকার তিন রঙে সেজেছিল সবুজ মেরুন গ্যালারি । কিন্তু গ্যালারির রং মোহনবাগানের মেঠো পারফরমেন্সে লাগেনি ।
ম্যাচ পরবর্তী সাংবাদিক বৈঠকে কিবু ভিকুনা বলছেন ম্যাচের প্রথম 45 মিনিটে দলের পারফরমেন্স এখন পর্যন্ত সেরা । যা শুনে ম্যাচ দেখতে আসা পুরানো দর্শকরা হাহাকার করলেন ।
ডুরান্ড ও কলকাতা লিগ মিলিয়ে মোহনবাগান এখনও পর্যন্ত পাঁচটি ম্যাচে তিন গোল হজম করল । যা সবুজ মেরুন ডিফেন্সের অস্বস্তিসূচক বাড়াতে বাধ্য ।
গঞ্জালেসের প্রথম গোলের আগে বেইটার বাড়ানো বল থেকে সালভা চামারো গোল করতে ব্যর্থ হন । পিছিয়ে গুটিয়ে যাওয়ার বদলে কাস্টমস পালটা দিতে থাকে । মোহনবাগানের অগোছালো মাঝমাঠ ও নড়বড়ে ডিফেন্সের সুযোগ নিয়ে একের পর আক্রমণ হানতে থাকে রাজীব দের ছেলেরা । দলের একনম্বর বিদেশি ফুটবলার আরজাকে পরিবর্ত হিসেবে নামানোর কথা আগেই জানিয়েছিলেন কাস্টমস কোচ। 37মিনিটে আপংকে তুলে নিয়ে আরজাকে নামিয়ে ছিলেন তিনি। তারপর অর্ন্তভুক্তিতে কাস্টমস আরও চাপ বাড়াতে থাকে। বিরতির আগে আরজার পা থেকে মোহনবাগানের গোলরক্ষক শংকর রায় নিশ্চিত গোল না বাচালে হয়ত খেলার ছবিটা অন্য রকম হত ।
বিরতির পরে প্রথম পনেরো মিনিট মোহনবাগানকে চেনা গেছে শুধুই জার্সিতে । সুমিত দাস এদিন মোহনবাগান রাইটব্যাক আশুতোষ মেহতাকে নিয়ে ছেলে-খেলা করলেন । বাবা কাপড়ের দোকানে কাজ করেন । নিতান্ত নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেটি অন্তত দু'বার গোল করার মত জায়গায় পৌঁছে গেছিলেন । মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলে নায়ক হয়ে মাঠ ছাড়তে পারতেন । সুযোগ নষ্ট করার আক্ষেপ তাঁর গলায় ।
63 মিনিটে গোলমুখে আরজাকে পিছন থেকে ট্যাকেল করে লাল কার্ড দেখেন মোহনবাগানের কিমকিমা । বাকি সময় দশজনে খেলতে হয় । বিপদ আসন্ন অনুমান করে সালভো চামোরোকে তুলে নিয়ে মোরান্তেকে নামিয়ে অবস্থা সামাল দেন ভিকুনা । জোড়া বিদেশি ডিফেন্ডারদের সামনে আরজা বন্দী হলেও কাস্টমস রাশ হারায়নি কারণ দ্রুত লয়ের প্রতি আক্রমণ । 83 মিনিটে কাস্টমসের দেবায়নকে দু'বার হলুদ কার্ডের কারণে লাল কার্ড দেখান রেফারি প্রতীক মণ্ডল । ঘেরা মাঠে বড় দলের ম্যাচ খেলাতে নেমে মোট দুটো লালকার্ড দেখালেন । যা সাহসী রেফারিং ।
89 মিনিটে ইফিয়ানির গোলে কাস্টমস সমতায় ফেরে । গোলমুখে ব্যর্থতা ও বাগান গোলরক্ষক শঙ্কর রায় না থাকলে তিন গোলে জিততে পারত কাস্টমস ।
ম্যাচ শেষে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে কাস্টমস কোচকে "জেতার জন্য খেলার চেষ্টা করো" বলেছেন সবুজ মেরুন কোচ । দর্শকরাও রেফারিকে বাপবাপান্ত করলেন । সেইসঙ্গে ময়দানি অসভ্যতাও দেখা গেল সদস্য গ্যালারি থেকে । কিন্তু লিগের দুটো ম্যাচ মোহনবাগানকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিল ।