কলকাতা, 13 সেপ্টেম্বর : ময়দানের বাবলু নামটার পেটেন্ট গল্ফ গ্রিনের সুব্রত ভট্টাচার্যের দখলে যাওয়ার আগে এই নামের অধিকারী ছিলেন প্রণব গঙ্গোপাধ্যায় এবং ভবানী রায়। সুব্রত ভট্টাচার্যের মত তাঁদের সাফল্যের গ্রাফ উঁচু নয়। তবে ফেলে দেওয়ার মতোও নয়। সেই ভবানী রায় সোমবার চলে গেলেন না-ফেরার দেশে ৷ অলস দুপুরে নবনির্মিত মোহনবাগান তাঁবুতে 'বাবলু' নাম নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন সবুজমেরুনের প্রবীণ সদস্যরা। উঠে এল ময়দানের অনেক অজানা গল্প।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কঠিন সময় পার করছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। মৃত্যুর ধাক্কায় প্রায় সকলেই পেয়েছেন। কলকাতা ময়দানেও লেগেছে মৃত্যুর ধাক্কা। প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামীর মৃত্যু শোকের তালিকায় এবার যোগ হল ভবানী রায়ের নাম। এদিন সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ময়দানে শোকের ছায়া নেমে আসে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ ভবানী রায়ের মৃতদেহ যখন মোহনবাগান তাঁবুতে পৌঁছল, তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানান সবুজমেরুনের কার্যকরী কমিটির পদাধিকারীরা। ছিলেন সদস্য সমর্থকরাও।
1969-70 মরসুম। লিগ ও শিল্ড জিতে দ্বিমুকুট মোহনবাগানের। শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলকে 3-1গোলে হারাল লাল-হলুদের মাঠে খেলে। জোড়া গোল করে সেই জয়ের নায়ক ছিলেন প্রণব 'বাবলু' গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মরসুমে ধারাবাহিকতায় সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন ভবানী 'বাবলু' রায়। প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবল কোচ অমল দত্ত সেই সময় 4-4-2 ছকের সঙ্গে ময়দানের পরিচয় ঘটাচ্ছেন। তাঁর এই ছকে সফল রূপায়নে ওভার ল্যাপের দরকার। ভবানী রায়কে রাইট ব্যাক হিসেবে খেলিয়ে তাঁকে দিয়ে ওভারল্যাপ করিয়ে ছিলেন অমল দত্ত। নতুন দায়িত্বে ভবানী এতটাই সফল ছিলেন যে, সেই সময়ে ভেটারেন্স ক্লাবের প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কার উঠেছিল তাঁর হাতে।
আরও পড়ুন : বাবার মরদেহ রেখে মাঠে নেমে বিরাটকে মনে করালেন আকাশ
1967 সালে মোহনবাগানের হয়ে খেলতে আসার আগে ভবানী রায় প্রতিষ্ঠিত ফুটবলার। বিশেষ করে 1964 থেকে 1967 সাল পর্যন্ত কিংবদন্তি কোচ বাঘা সোম মাঝমাঠে খেলাতেন ভবানী রায়কে। রেলের হয়ে খেলার আগে বালি প্রতিভাতে খেলেছেন। সেখানেও তিনি মাঝমাঠের ফুটবলার। মোহনবাগানের হয়ে খেলতে এসে অমল দত্তর হাতে পড়ে ভবানী রায় মিডফিল্ডার থেকে বদলে যান রাইট-ব্যাকে।
ভাল ফুটবলার হলেও দেশের হয়ে সেভাবে খেলতে দেখা যায়নি ভবানী রায়কে। 1969 সালে জার্নেল সিংয়ের কোচিংয়ে অধিনায়ক ইন্দর সিংয়ের উদ্যোগে মারডেকায় সব কয়টি ম্যাচে খেলেছিলেন ভবানী রায়। তারপর আর ভারতীয় দলে ডাকা পাননি। এই সময় রিষড়ার সুধীর কর্মকারের উত্থান ভবানী রায়কে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। অথচ ক্লাব ফুটবলে নজরকাড়া পারফরম্যান্সের অধিকারী ভবানী রায় 1967 সাল থেকে ছয় বার রোভার্স কাপ ফাইনাল খেলেছেন ৷ যার মধ্যে চারবার চ্যাম্পিয়ন। 1970 থেকে 1972 সাল পর্যন্ত রোভার্স জয়ের হ্যাটট্রিক করেছিল মোহনবাগান। 1972-73 মরসুমে ভবানী রায় ছিলেন মোহনবাগানের অধিনায়ক।
বাংলার হয়ে একাধিকবার সন্তোষ ট্রফি জয়ী দলের সদস্য ছিলেন ভবানী রায়। সাতের দশকে যখন ইস্টবেঙ্গল প্রতিপক্ষের ওপর রোলার কোস্টার চালাচ্ছে তখনও তাঁর নেতৃত্বে মোহনবাগান পাল্লা দিয়েছিল। সদাহাস্যমুখ, ছোটখাটো চেহারার মানুষটির খেলোয়াড় জীবন শেষ হয়েছিল নিঃশব্দে। নিজেকে জাহির করার চেষ্টা ছিল না। ভবানী রায় চলেও গেলেন নিঃশব্দে।