হায়দরাবাদ, 5 অক্টোবর: সোনালি ট্রফি জয়ের দৌড় শুরু হয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে ৷ গতবারের ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ড ফের এক মুখোমুখি ৷ কাদের হাতে উঠবে বিশ্বজয়ের খেতাব, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ৷ এই বিশ্বকাপই হয়তো শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে ডেভিড ওয়ার্নার, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ৷ আবার অনেকেই শুরু করবেন তাঁদের স্বপ্নের সফর ৷ টুর্নামেন্টে পারফরম্য়ান্স দিয়ে নজর কাড়তে চান সকলেই ৷ ক্রিকেটে সেরা পারফরম্যান্সের কথা বললেই উঠে আসে 'ম্যান অফ দ্য সিরিজ' পুরস্কারের কথা ৷ আজ ফিরে দেখা সেই 8 জন ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপের আসরে যাঁরা জিতে নিয়েছেন এই খেতাব ৷
মার্টিন ক্রো (1992): 'ম্যান অফ দ্য সিরিজ' পুরস্কার দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয় 1992 সালে ৷ এই বছর বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে নিয়েছিল পাকিস্তান ৷ যদিও কোনও পাক ক্রিকেটার এই বিশ্বকাপে সেরার ট্রফি জিতে নিতে পারেননি ৷ বরং 'ম্যান অফ দ্য সিরিজ' পুরস্কার পেয়েছিলেন কিউয়ি ব্যাটার মার্টিন ক্রো ৷ নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই সেবার বসেছিল এই বিশ্বকাপের আসর ৷ আর বিশ্বকাপে 9 ম্যাচে 456 রান সংগ্রহ করেছিলেন মার্টিন ৷ অজিদের বিরুদ্ধে একটি শতরান এবং এই বিশ্বকাপে আরও চারটি অর্ধশতরান ছিল তাঁর ঝুলিতে ৷ আসরে তিনবার 'ম্যান অফ দ্য ম্য়াচ' খেতাব পান তিনি ৷ 2016 সালের 3 মার্চ প্রয়াত হন নিউজিল্যান্ডের এই ব্যাটার ৷
সনৎ জয়সূর্য (1996): নয়ের দশকের ক্রিকেট ভক্তরা জানেন বাঁ-হাতি এই ব্যাটার বদলে দিয়েছিলেন ওপেনিংয়ের সংজ্ঞাটাই ৷ পাশাপাশি বল হাতেও তিনি ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারতেন যে কোনও সময় ৷ এই দুরন্ত পারফরম্য়ান্সের সূত্র ধরেই 1996 সালের বিশ্বকাপে 'ম্যান অফ দ্য সিরিজ' পুরস্কার জিতে নেন সনৎ জয়সূর্য ৷ 96 সালে বিশ্বকাপও জিতেছিল শ্রীলঙ্কাই ৷ অর্জুনা রনতুঙ্গার অসামান্য অধিনায়কত্ব তো ছিলই পাশাপাশি এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন জয়সূর্যও ৷ 6 ম্য়াচে ব্যাট হাতে যেমন তিনি করেন 221 রান তেমনই বল হাতে তুলে নেন 7টি উইকেট ৷ তালুবন্দি করেন 5টি ক্যাচও ৷ প্রতিযোগিতায় দু'বার 'ম্যান অফ দ্য ম্য়াচ' খেতাবও পান তিনি ৷
ল্যান্স ক্লুজনার (1999): দক্ষিণ আফ্রিকার 'চোকার্স' তকমার কথা সামনে এসেছিল এই 1999 সালের বিশ্বকাপেই ৷ ইংরেজদের মাটিতে কঠিন পরিশ্রম করে দলকে বিশ্বকাপ জয়ের একেবারে দোর গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার ৷ ব্যাট হাতে তিনি করেন 281 রান ৷ আবার বল হাতেও তুলে নেন 17টি উইকেট ৷ এই বিশ্বকাপের আসরে চারবার 'ম্যান অফ দ্য ম্য়াচ' খেতাব জিতে নেন তিনি ৷ কিন্তু এতো করেও সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিনি জয় এনে দিতে পারলেন না দলকে ৷ অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির জেরে রান আউট হন ক্লুসনার ৷ আর তাই শেষমেশ তাঁকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় 'ম্যান অফ দ্য সিরিজ' ট্রফি নিয়েই ৷
সচিন তেন্ডুলকর (2003): ভারতের ঝুলিতে বিশ্ব জয়ের খেতাব এসেছে দু'বার ৷ 1983 সালে কপিল দেব হাতে তুলেছিলেন প্রুডেনশিয়াল কাপ ৷ আর তারপর 2011 সালে বিশ্বকাপ তোলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে ওঠে বিশ্বকাপ ৷ 2003 সালেও কিন্তু কাপ জয়ের একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছিল ভারত ৷ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জোহনসবার্গে ফাইনাল পর্যন্ত তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু অজিদের হারিয়ে কাপ জয় অধরাই থেকে যায় ভারতের ৷ কিন্তু কাপ জয় করতে না পারলেও এই বিশ্বকাপ যে সচিনের বিশ্বকাপ ছিল তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই ৷ 11 ম্যাচে মাস্টার ব্লাস্টার সংগ্রহ করেন 673 রান ৷ বিশ্বকাপের এই আসরে 2টি উইকেটও শিকার করেছিলেন তিনি ৷ সঙ্গে তিনবার 'ম্যান অফ দ্য ম্য়াচ' খেতাব জিতে নেন তিনি ৷
গ্লেন ম্যাকগ্রা (2007): 2003 সালের বিশ্বকাপের আসর মাতিয়েছিলেন সচিন ৷ ঠিক 4 বছর পর এই আসরে 'প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট' পুরস্কার জিতে নেন তাঁরই চির প্রতিদ্বন্দ্বী গ্লেন ম্যাকগ্রা ৷ 11 ম্যাচে 13.73 গড়ে 26টি উইকেট তুলে নেন এই অজি মিডিয়াম পেসার ৷ এই নিয় তৃতীয়বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া ৷
যুবরাজ সিং (2011): প্রায় তিন দশকের ট্রফি জয়ের খরা কাটিয়ে 2011 সালে দ্বিতীয়বার ট্রফি ঘরে তোলে ভারতীয় দল ৷ অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সেই আইকনিক ছয় আজও সকলের চোখে লেগে রয়েছে ঠিকই তবে মেন ইন ব্লুর বিশ্বকাপ জয়ের সবচেয়ে বড় নায়ক ছিলেন বাঁ হাতি ব্যাটিং অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং ৷ ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করতে করতেও যে দেশকে জয়ের সরণিতে পৌঁছে দেওয়া যায় তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ৷ চারবার তিনি জিতেন নিয়েছিলেন 'ম্যান অফ দ্য ম্য়াচ' খেতাব ৷ 8টি ইনিংসে মোট 362 রান এবং 15টি উইকেট শিকার করেন যুবি ৷ যার জেরে 'প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট' পুরস্কারও তুলে দেওয়া হয় তাঁর হাতেই ৷
মিচেল স্টার্ক (2015): 2015 সালে বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড ৷ এবারও বিশ্ব জয় করে পঞ্চম বার ট্রফি জয়ের রেকর্ড তৈরি করে অস্ট্রেলিয়া ৷ এবারও 'প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট' পুরস্কার জিতে নেন একজন বোলার ৷ অস্ট্রেলিয়ার তারকা পেসার মিচেল স্টার্ক 8 ম্যাচে 10.18 গড়ে শিকার করেছিলেন 22টি উইকেট ৷ এরই মাঝে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে 28 রান দিয়ে 6 উইকেট তুলে নেন তিনি ৷
কেন উইলিায়মসন (2019): 2019 সালের মতো টানটান ফাইনাল ম্যাচ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে আর একটিও নেই ৷ ইংল্যান্ড যদিও শেষমেশ ট্রফি ঘরে তোলে তবে 'প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট' ছিলেন একজনই ৷ তিনি কিউয়ি অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ৷ কেন 10 ম্যাচে সংগ্রহ করেছিলেন 578 রান ৷ 2টি শতরানও করেন তিনি ৷ পাশাপাশি তাঁর অধিনায়কত্বও ছিল নজর কাড়া ৷
এবার কে জিতে নেবেন এই ট্রফি সেটাই এখন দেখার ৷ ক্রিকেটের হল অফ ফেমে এই 8 জনের পাশে লেখা হবে কার নাম সেটাই এখন দেখার ৷ রয়েছেন একাধিক চোখ ধাঁধানো ব্যাটার ৷ রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, বাবর আজম, কেন উইলিয়ামসনদের হাতে উঠবে কি এই খেতাব ৷ না কি পুরস্কার জয় করবেন জসপ্রীত বুমরা, শাহিন শাহ আফ্রিদিরা সেটাই এখন দেখার ৷