কলকাতা, 21 জুন : আপনি কি ক্রিকেট পছন্দ করেন ? উত্তরটা যদি 'হ্যাঁ' হয় তাহলে সহজেই বলে দেওয়া যায় আপনি মোটেও বৃষ্টি ভালবাসেন না ৷ কারণ ক্রিকেট অনুরাগীদের সঙ্গে বৃষ্টির পুরানো শত্রুতা ৷ বৃষ্টি, কাদায় জমে যায় ফুটবল ৷ কিন্তু ক্রিকেট এমন একটা খেলা যা বৃষ্টি পড়লে মোটেও খেলা যায় না ৷ অতীতে শুধুমাত্র বৃষ্টির কারণে অনেক বড় বড় ম্যাচের মোড় ঘুরে গিয়েছে ৷ উত্তেজক ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছে ৷ প্রচণ্ড উৎসাহ নিয়ে টিভির সামনে বসেও শেষ পর্যন্ত হতাশ হতে হয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের ৷
অতীতে এমন ম্যাচের ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে ৷ বর্তমানে এর উদাহরণ চলতি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল ৷ সাদা জার্সিতে প্রায় দু'বছর ধরে চলল ক্রিকেট যজ্ঞ ৷ বিশ্বের তাবড় তাবড় ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলিকে পিছনে ফেলে ফাইনালে পা রাখল দুটো টিম ৷ ভারত ও নিউজ়িল্যান্ড ৷ 2019 বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের পর বড় কোনও ম্যাচে মুখোমুখি দুটি দল ৷ নিরপেক্ষ ভেনুতে ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইয়ে নামতে গিয়েই প্রথম ধাক্কা দিয়েছিল বৃষ্টি ৷ এরপর চলতেই থাকল বৃষ্টির খেলা ৷
অতীতে বহুবার বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে ভারতের খেলায় ৷ কখনও বৃষ্টি ভারতীয় দলের কাছে ভিলেন হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ কখনও বা আশীর্বাদ ৷ উত্তেজক ম্যাচ যার শেষটা হয়তো হতে পারত হাড্ডাহাড্ডি কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা সাধারণভাবে শেষ হয়েছে ৷ দেখে নেওয়া যাক তেমনই কিছু উদাহরণ ৷
2004 সালের ভারত-অস্ট্রেলিয়া চেন্নাই টেস্ট
বেঙ্গালুরুতে সিরিজের প্রথম টেস্টে ক্যাঙারুদের কাছে বাজে ভাবে হেরেছিল ভারত ৷ 217 রানে হারের পর চেন্নাইতে দ্বিতীয় টেস্ট ছিল ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই ৷ শুরুটাও তেমনই হয়েছিল ৷ অনিল কুম্বলের 7 উইকেটে অজিরা প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গিয়েছিল 235 রানে ৷ তারপর শুরু হয় বীরেন্দ্র সেহওয়াগ শো ৷ গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেসপি, শেন ওয়ার্ন সমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়ার তারকা বোলিং ব্রিগেড থাকা সত্ত্বেও 155 রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন বীরু ৷ প্রথম ইনিংসে ভারত 141 রানের লিড পায় ৷
চতুর্থ দিনের খেলা যখন শেষ হল তখন ম্যাচ জিততে ভারতের 210 রান প্রয়োজন ৷ হাতে দশ উইকেট ৷ পঞ্চম দিনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের অপেক্ষা করছিল চেন্নাই ৷ কিন্তু তখনই আকাশ ভেঙে নামল বৃষ্টি ৷ ধুয়ে যায় পঞ্চম দিনের খেলা ৷ ম্যাচ ড্র হয়ে যায় ৷
1992 সালের ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ, সিডনি
নির্বাসন কাটিয়ে সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ৷ 1992 সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল প্রোটিয়ারা ৷ সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল ৷ জয়ের জন্য শেষ পাঁচ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল 47 রান ৷ তখনই সিডনিতে নামল বৃষ্টি ৷ বৃষ্টির দাপট বাড়তেই ম্যাচ 190 ডিগ্রি ঘুরে গেল ৷ বৃষ্টির নিয়ম অনুযায়ী ঠিক হল জয়ের জন্য 13 বলে 22 রান করতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৷ পরে হিসেব কষে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে এক অসম্ভব টার্গেট দাঁড়ায় ৷ 1 বলে 22 রান ! বৃষ্টি ও অদ্ভুত নিয়মের কারণে প্রায় হারা ম্যাচ জিতে নেয় ইংল্যান্ড ৷ আর প্রায় জেতা ম্যাচ হেরে চোখের জলে মাঠ ছাড়তে হয় প্রোটিয়াদের ৷
2002 সালের ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ, কলম্বো
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে স্মরণীয় জয়ের পর ভরপুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নেমেছিল ভারত ৷ অন্যদিকে 2000 সালের প্রথম থেকে ঘরের মাঠে প্রায় অপরাজিত ছিল শ্রীলঙ্কা ৷ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ঠিক আগে মরক্কো কাপ জিতেছিল তারা ৷ সেমিফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা ৷ হাইভোল্টেজ ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের অপেক্ষায় ছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা ৷ কিন্তু বৃষ্টি-দেবতার অন্য পরিকল্পনা ছিল ৷
নির্ধারিত ওভারে 5 উইকেট হারিয়ে পরিশ্রম করে 244 রান তোলে দ্বীপরাষ্ট্রটি ৷ এরপর ভারতীয় দল ব্যাট করতে নামতেই শুরু হয় বৃষ্টি ৷ ম্যাচ গড়ায় রিজার্ভ ডে-তে ৷ কিন্তু দ্বিতীয় দিনটিও ধুয়ে যায় বৃষ্টিতে ৷ টুর্নামেন্টে দারুণ ফর্মে ছিলেন মুথাইয়া মুরলিধরণ ৷ ফাইনালে এই কিংবদন্তি স্পিনার বনাম ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের লড়াইটা উপভোগ করার মতো হত ৷ কিন্তু বৃষ্টির কারণে সব ভেস্তে যায় ৷
2019 সালের ভারত-নিউজ়িল্যান্ড বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল
বেশি দিনের কথা নয় ৷ তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে নেমেছিল ভারত ৷ ম্যাঞ্চেস্টারে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি নিউজ়িল্যান্ড ৷ তাতেও বিঘ্ন ঘটাল বৃষ্টি ৷ 46.1 ওভার খেলা হওয়ার পর বৃষ্টির কারণে আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ গড়ায় রিজার্ভ ডে-তে ৷ খেলা যখন বন্ধ হয় তখন নিউজ়িল্যান্ডের স্কোর 211/5 ৷ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বৃষ্টির খেলা চলেছিল ৷