কলকাতা, 11 এপ্রিল: গলি থেকে রাজপথে উত্তরণে বাহন ক্রিকেট । মোতেরা স্টেডিয়ামে পাঁচ ছক্কায় নিশ্চিত পরাজয়ের অন্ধকার থেকে জয়ের সরণিতে প্রত্যাবর্তন কলকাতা নাইট রাইডার্সের । সৌজন্যে রিঙ্কু সিংয়ের মহাজাগতিক ইনিংস । যার ব্যাখ্যায় শব্দকোষে টান পড়েছে । শেষ বলে ছক্কায় ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার প্রথম রূপকার জাভেদ মিঁয়াদাদ । শারজায় ভারতের বিরুদ্ধে বোলার চেতন শর্মাকে মাঠের বাইরে ফেলেছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি । স্টুয়ার্ট ব্রডের বিরুদ্ধে ছয় ছক্কায় যুবরাজ সিংয়ের নাম রয়েছে ।
ক্রিকেটের নন্দনকাননে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্লোস ব্রেথওয়েটের চার ছক্কার স্মৃতি এখনও টাটকা । যেখানে তিনি মাঠের বাইরে ফেলেছিলেন বেন স্টোকসকে । সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়নের ট্রফি । মঞ্চ আলাদা হলেও একই পঙক্তিতে থাকবে রবিবার সন্ধ্যার রিঙ্কু সিংয়ের ইনিংস । উত্তরপ্রদেশের যুবার এই ইনিংস শুধু ক্রিকেটীয় নয়, জীবনের জলছবি । ক্ষুধার রাজ্যে ক্রিকেট এখানে জীবনের জয়গান । 9 সদস্যের দরিদ্র পরিবার । নুন আনতে পান্তা ফুরানো যাদের রোজনামচা । সেখানে মজদুরির প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে ক্রিকেট আঁকড়ে থাকা বিলাসিতা । রিঙ্কু সিং সেটাই করেছিলেন । শুনেছিলেন মনের কথা । আত্মবিশ্বাসী মন এবং জোরালো হাতকে সঙ্গী করে আইপিএলের আকাশে তিনি নতুন তারা । উদয়াস্ত পরিশ্রম করে বাবা সংসারের জোয়াল টানতে নুইয়ে পড়ছিলেন । পাঁচ ভাই বাবার পাশে দাঁড়ালেও কোথাও একটা ফাঁক রয়ে যাচ্ছিল । বাবার গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার কাজে পাঁচ ভাই সাহায্য করতেন । রিঙ্কুও তাঁর ব্যতিক্রম নন ।
মহল্লায় ছোট থেকে রবারের বলে ক্রিকেট খেলা শুরু রিঙ্কুর । তারপর উত্থানটা মসৃণ ছিল না । কার্যত ধাক্কা খেতে খেতে উত্তরপ্রদেশ রঞ্জি দলে জায়গা করে নেওয়া । মাঝের সময়ে ক্লাব পর্যায়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলে চলা । পুণেতে ট্রায়াল দেওয়ার জন্য রিঙ্কুর মা ধার করে হাজার টাকা যোগাড়ের গল্প রয়েছে । যা কোলাজ করলে সাদাকালো যুগের সামাজিক সিনেমা মনে হতে পারে । এই টালমাটাল পরিস্থিতিতেও রিঙ্কু হাতের ব্যাট আলগা করেননি । বরং শক্ত করে ধরেছেন । তাই সাফাইকর্মীর কাজ না-করে ক্রিকেটকে বাহন করার কথা বলতে পেরেছিলেন । সেই বলাতে যে কতটা বিশ্বাস ছিল তা আমেদাবাদ দেখেছে ।
আরও পড়ুন: নাইটদের আকাশে তারার উদয়, সিংহগর্জনে রিঙ্কুই রাজা
শাহরুখ খান টুইট করেছেন রিঙ্কুকে নিয়ে । টিম হোটেলে রিঙ্কুর জন্য স্পেশাল কেক কাটা হয়েছে । শ্যাম্পেন স্নান, কেক মাখানোর মধ্যে দিয়ে নায়ক বরণের ছবি এখন ভাইরাল । আসলে রিঙ্কুর উঠে আসার লড়াই কোনও গল্প নয়, বাস্তব । সেই লড়াইয়ে পারিবারিক সমর্থন রয়েছে । আছে কোচ-সহ আরও পাঁচজন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা । আলিগড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আইপিএলের রংদার ক্রিকেট দুনিয়ার উত্থান রবিবার মর্যাদা পেল । রিঙ্কু বলছেন, আইপিএল থেকে অর্জিত অর্থে তিনি বাড়ি করেছেন । পরিবারের ঋণ শোধ করেছেন । নতুনভাবে স্বপ্ন দেখছেন ভারতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার । আন্দ্রে রাসেলের বড় বড় ছক্কা তাঁকে মুগ্ধ করত । নাইট সংসারে ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের সঙ্গে পরিচয়ের সময় অন্তরায় সৃষ্টি করেছিল ভাষা । এখন তা দূর হয়ে গিয়েছে । রাসেলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে রিঙ্কুর । ক্রিকেটকে বাহন করে জীবনের রাজপথে আর পিছনে তাকাতে রাজি নন নতুন নাইট । সহনায়ক নন, দলের ভরসা হতে চান তিনি ।