কলকাতা : কল্পনা, ভাবনা ও চিন্তাশক্তির জয় সর্বত্র । আর এই তিন পাথেয় ম্যাজিকের মতো কাজ করল সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'সামসারা'-র ক্ষেত্রে । সেজন্য ছবির দুই পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, অভিজিৎ গুহ এবং অবশ্যই ছবির প্রযোজক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীকে (ফ্রাইডে অ্যান্ড কোং) কুর্নিশ ।
নতুন ভাবনা নিয়ে আসছে বাংলা সিনেমা । তার একটি জলজ্যান্ত নিদর্শন হয়ে রইল 'সামসারা' । তিন বন্ধুর গল্প বলছে ছবিটি । গল্প বলছে তাদের রিইউনিয়নের । তিন বন্ধু অনেকদিন পর দেখা, এই বিষয়ে বহু ছবি হয়েছে বিভিন্ন ভাষায় । কিন্তু তার মধ্যেও স্বতন্ত্র হয়ে থেকে গেল 'সামসারা' । হিরো এখানে ছবির বিষয় । পদ্মনাভ দাশগুপ্তের লেখা স্ক্রিপ্ট ঝরঝরে, মেদহীন। ছবির বিষয়বস্তুকে সঠিক পথে চালনা করতে সাহায্য করেছে তাঁর লেখা যথাযোগ্য সংলাপ।
'সামসারা' কী ? ছবি মুক্তির আগে এই শব্দটি ধাঁধার মতো মনে হয়েছিল বাংলা ছবির দর্শকের । শেষমেশ পরিষ্কার হল এর অর্থ । গোটা ছবিতেই শব্দটি তাড়া করে বেড়াবে দর্শককে । ঠিক যেমনটা তাড়া করেছে ছবির তিন চরিত্রকে । একেবারে মৃত্যুর প্রাক মুহূর্ত থেকে সদ্য পঞ্চত্বপ্রাপ্তি পর্যন্ত । মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা কীভাবে চক্রব্যূহে ঘুরতে থাকে, তার এক অদ্ভুত প্রদর্শন এই ছবি ।
সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই এই কারণে এটি ছবি । আর ছবি মানেই মনোরঞ্জন । সব সময় যে লজিক মেনে চলবে তারও কোনও মানে নেই । তবে পরিচালক যদি মনে করেন তার ছবির বাস্তবই লজিক, তখন পরিচালকেরই দায় বর্তায় কীভাবে সেই সিনেমাটিক লজিককে দর্শকের কাছে বাস্তব রূপ দেবেন । এই কাজে পরিচালকদ্বয় সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহ দায়িত্ব পালন করেছেন । তাঁরা যেভাবে দর্শকের মন জিইয়ে রেখেছেন সেটা কাবিল-এ-তারিফ । এর চেয়ে বেশি কিছু বললে, রহস্যে মোড়া থ্রিলার ছবিটি দেখার আনন্দ মাটি হবে ।
এরপরে আসব সিনেমাটোগ্রাফির প্রসঙ্গে । ছবির অনেকটাই শুটিং হয়েছে মেঘালয়ের কোনও একটি ভার্জিন লোকেশনে । লোকেশনের মাধুর্য ছবির একটি চরিত্র । এমনই সম্মোহনী দৃশ্যায়ন যে হলফ করে বলা যেতে পারে এরপর বাঙালির বেড়ানোর গন্তব্য হয়ে উঠবে সেই জায়গা ।
ছবিতে অভিনয় যথাযথ । প্রযোজক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীও এই ছবিতে তিন বন্ধুর একজনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন । রাহুল ও ঋত্বিক বরাবরের মতোই ভালো । সুদীপ্তা চক্রবর্তী অনবদ্য । শিহরণ জাগিয়েছে তাঁর অভিনয় । দেবলীনা কুমার, তনুশ্রী চক্রবর্তী ও আর্যা ব্যানার্জি মানানসই । এবং বিশেষ প্রশংসার হকদার সমদর্শী দত্ত । ছবিতে কমিক চরিত্রে ভালোই পাঠ করলেন অম্বরিশ ভট্টাচার্য ।
সমসারা শুধু মাত্র তিন বন্ধুর গল্প নয়। এর তাৎপর্য অনেক গভীর । আমরা প্রত্যেক মানুষই জীবদ্দশায় পাপের অধিকারী । কারও পাপ ক্ষুদ্র, কারও বৃহৎ । কেউ অনুতপ্ত, কারও মানসিকতা নির্বিকার । এমন মানুষও আছে যার পাপ তাকে কুড়ে কুড়ে খায় । এই ছবি সেই পাপের হিসেব মেটানোর কাহিনি । মৃত্যুর পর মানুষের কী দশা হয়, পাপ যে মানুষকে আজন্ম-মৃত্যু তাড়িত করে তারই একটি গল্প । এমন একটি গল্প যার শেষ হয়েও মনের মধ্যে হাহাকার সৃষ্টি করবে, অমানবিকতাকে সমঝে চলতে শেখাবে । সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহর ২৫ বছরের পরিচালক জীবনে এমনই পরিণত চিন্তাভাবনার ছবি আশা করা যায় ।
- " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="">