ETV Bharat / sitara

ফিল্ম রিভিউ : অভিনবত্বের গুণে জিতে গেল 'সামসারা'

সমসারা
author img

By

Published : Aug 2, 2019, 11:57 PM IST

Updated : Aug 3, 2019, 11:50 AM IST

কলকাতা : কল্পনা, ভাবনা ও চিন্তাশক্তির জয় সর্বত্র । আর এই তিন পাথেয় ম্যাজিকের মতো কাজ করল সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'সামসারা'-র ক্ষেত্রে । সেজন্য ছবির দুই পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, অভিজিৎ গুহ এবং অবশ্যই ছবির প্রযোজক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীকে (ফ্রাইডে অ্যান্ড কোং) কুর্নিশ ।

নতুন ভাবনা নিয়ে আসছে বাংলা সিনেমা । তার একটি জলজ্যান্ত নিদর্শন হয়ে রইল 'সামসারা' । তিন বন্ধুর গল্প বলছে ছবিটি । গল্প বলছে তাদের রিইউনিয়নের । তিন বন্ধু অনেকদিন পর দেখা, এই বিষয়ে বহু ছবি হয়েছে বিভিন্ন ভাষায় । কিন্তু তার মধ্যেও স্বতন্ত্র হয়ে থেকে গেল 'সামসারা' । হিরো এখানে ছবির বিষয় । পদ্মনাভ দাশগুপ্তের লেখা স্ক্রিপ্ট ঝরঝরে, মেদহীন। ছবির বিষয়বস্তুকে সঠিক পথে চালনা করতে সাহায্য করেছে তাঁর লেখা যথাযোগ্য সংলাপ।

'সামসারা' কী ? ছবি মুক্তির আগে এই শব্দটি ধাঁধার মতো মনে হয়েছিল বাংলা ছবির দর্শকের । শেষমেশ পরিষ্কার হল এর অর্থ । গোটা ছবিতেই শব্দটি তাড়া করে বেড়াবে দর্শককে । ঠিক যেমনটা তাড়া করেছে ছবির তিন চরিত্রকে । একেবারে মৃত্যুর প্রাক মুহূর্ত থেকে সদ্য পঞ্চত্বপ্রাপ্তি পর্যন্ত । মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা কীভাবে চক্রব্যূহে ঘুরতে থাকে, তার এক অদ্ভুত প্রদর্শন এই ছবি ।

সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই এই কারণে এটি ছবি । আর ছবি মানেই মনোরঞ্জন । সব সময় যে লজিক মেনে চলবে তারও কোনও মানে নেই । তবে পরিচালক যদি মনে করেন তার ছবির বাস্তবই লজিক, তখন পরিচালকেরই দায় বর্তায় কীভাবে সেই সিনেমাটিক লজিককে দর্শকের কাছে বাস্তব রূপ দেবেন । এই কাজে পরিচালকদ্বয় সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহ দায়িত্ব পালন করেছেন । তাঁরা যেভাবে দর্শকের মন জিইয়ে রেখেছেন সেটা কাবিল-এ-তারিফ । এর চেয়ে বেশি কিছু বললে, রহস্যে মোড়া থ্রিলার ছবিটি দেখার আনন্দ মাটি হবে ।

এরপরে আসব সিনেমাটোগ্রাফির প্রসঙ্গে । ছবির অনেকটাই শুটিং হয়েছে মেঘালয়ের কোনও একটি ভার্জিন লোকেশনে । লোকেশনের মাধুর্য ছবির একটি চরিত্র । এমনই সম্মোহনী দৃশ্যায়ন যে হলফ করে বলা যেতে পারে এরপর বাঙালির বেড়ানোর গন্তব্য হয়ে উঠবে সেই জায়গা ।

ছবিতে অভিনয় যথাযথ । প্রযোজক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীও এই ছবিতে তিন বন্ধুর একজনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন । রাহুল ও ঋত্বিক বরাবরের মতোই ভালো । সুদীপ্তা চক্রবর্তী অনবদ্য । শিহরণ জাগিয়েছে তাঁর অভিনয় । দেবলীনা কুমার, তনুশ্রী চক্রবর্তী ও আর্যা ব্যানার্জি মানানসই । এবং বিশেষ প্রশংসার হকদার সমদর্শী দত্ত । ছবিতে কমিক চরিত্রে ভালোই পাঠ করলেন অম্বরিশ ভট্টাচার্য ।

সমসারা শুধু মাত্র তিন বন্ধুর গল্প নয়। এর তাৎপর্য অনেক গভীর । আমরা প্রত্যেক মানুষই জীবদ্দশায় পাপের অধিকারী । কারও পাপ ক্ষুদ্র, কারও বৃহৎ । কেউ অনুতপ্ত, কারও মানসিকতা নির্বিকার । এমন মানুষও আছে যার পাপ তাকে কুড়ে কুড়ে খায় । এই ছবি সেই পাপের হিসেব মেটানোর কাহিনি । মৃত্যুর পর মানুষের কী দশা হয়, পাপ যে মানুষকে আজন্ম-মৃত্যু তাড়িত করে তারই একটি গল্প । এমন একটি গল্প যার শেষ হয়েও মনের মধ্যে হাহাকার সৃষ্টি করবে, অমানবিকতাকে সমঝে চলতে শেখাবে । সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহর ২৫ বছরের পরিচালক জীবনে এমনই পরিণত চিন্তাভাবনার ছবি আশা করা যায় ।

  • " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="">

কলকাতা : কল্পনা, ভাবনা ও চিন্তাশক্তির জয় সর্বত্র । আর এই তিন পাথেয় ম্যাজিকের মতো কাজ করল সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'সামসারা'-র ক্ষেত্রে । সেজন্য ছবির দুই পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, অভিজিৎ গুহ এবং অবশ্যই ছবির প্রযোজক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীকে (ফ্রাইডে অ্যান্ড কোং) কুর্নিশ ।

নতুন ভাবনা নিয়ে আসছে বাংলা সিনেমা । তার একটি জলজ্যান্ত নিদর্শন হয়ে রইল 'সামসারা' । তিন বন্ধুর গল্প বলছে ছবিটি । গল্প বলছে তাদের রিইউনিয়নের । তিন বন্ধু অনেকদিন পর দেখা, এই বিষয়ে বহু ছবি হয়েছে বিভিন্ন ভাষায় । কিন্তু তার মধ্যেও স্বতন্ত্র হয়ে থেকে গেল 'সামসারা' । হিরো এখানে ছবির বিষয় । পদ্মনাভ দাশগুপ্তের লেখা স্ক্রিপ্ট ঝরঝরে, মেদহীন। ছবির বিষয়বস্তুকে সঠিক পথে চালনা করতে সাহায্য করেছে তাঁর লেখা যথাযোগ্য সংলাপ।

'সামসারা' কী ? ছবি মুক্তির আগে এই শব্দটি ধাঁধার মতো মনে হয়েছিল বাংলা ছবির দর্শকের । শেষমেশ পরিষ্কার হল এর অর্থ । গোটা ছবিতেই শব্দটি তাড়া করে বেড়াবে দর্শককে । ঠিক যেমনটা তাড়া করেছে ছবির তিন চরিত্রকে । একেবারে মৃত্যুর প্রাক মুহূর্ত থেকে সদ্য পঞ্চত্বপ্রাপ্তি পর্যন্ত । মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা কীভাবে চক্রব্যূহে ঘুরতে থাকে, তার এক অদ্ভুত প্রদর্শন এই ছবি ।

সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই এই কারণে এটি ছবি । আর ছবি মানেই মনোরঞ্জন । সব সময় যে লজিক মেনে চলবে তারও কোনও মানে নেই । তবে পরিচালক যদি মনে করেন তার ছবির বাস্তবই লজিক, তখন পরিচালকেরই দায় বর্তায় কীভাবে সেই সিনেমাটিক লজিককে দর্শকের কাছে বাস্তব রূপ দেবেন । এই কাজে পরিচালকদ্বয় সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহ দায়িত্ব পালন করেছেন । তাঁরা যেভাবে দর্শকের মন জিইয়ে রেখেছেন সেটা কাবিল-এ-তারিফ । এর চেয়ে বেশি কিছু বললে, রহস্যে মোড়া থ্রিলার ছবিটি দেখার আনন্দ মাটি হবে ।

এরপরে আসব সিনেমাটোগ্রাফির প্রসঙ্গে । ছবির অনেকটাই শুটিং হয়েছে মেঘালয়ের কোনও একটি ভার্জিন লোকেশনে । লোকেশনের মাধুর্য ছবির একটি চরিত্র । এমনই সম্মোহনী দৃশ্যায়ন যে হলফ করে বলা যেতে পারে এরপর বাঙালির বেড়ানোর গন্তব্য হয়ে উঠবে সেই জায়গা ।

ছবিতে অভিনয় যথাযথ । প্রযোজক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীও এই ছবিতে তিন বন্ধুর একজনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন । রাহুল ও ঋত্বিক বরাবরের মতোই ভালো । সুদীপ্তা চক্রবর্তী অনবদ্য । শিহরণ জাগিয়েছে তাঁর অভিনয় । দেবলীনা কুমার, তনুশ্রী চক্রবর্তী ও আর্যা ব্যানার্জি মানানসই । এবং বিশেষ প্রশংসার হকদার সমদর্শী দত্ত । ছবিতে কমিক চরিত্রে ভালোই পাঠ করলেন অম্বরিশ ভট্টাচার্য ।

সমসারা শুধু মাত্র তিন বন্ধুর গল্প নয়। এর তাৎপর্য অনেক গভীর । আমরা প্রত্যেক মানুষই জীবদ্দশায় পাপের অধিকারী । কারও পাপ ক্ষুদ্র, কারও বৃহৎ । কেউ অনুতপ্ত, কারও মানসিকতা নির্বিকার । এমন মানুষও আছে যার পাপ তাকে কুড়ে কুড়ে খায় । এই ছবি সেই পাপের হিসেব মেটানোর কাহিনি । মৃত্যুর পর মানুষের কী দশা হয়, পাপ যে মানুষকে আজন্ম-মৃত্যু তাড়িত করে তারই একটি গল্প । এমন একটি গল্প যার শেষ হয়েও মনের মধ্যে হাহাকার সৃষ্টি করবে, অমানবিকতাকে সমঝে চলতে শেখাবে । সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহর ২৫ বছরের পরিচালক জীবনে এমনই পরিণত চিন্তাভাবনার ছবি আশা করা যায় ।

  • " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="">
Intro:কল্পনা, ভাবনা ও চিন্তাশক্তির জয় সর্বত্র। আর এই তিন পাথেয় ম্যাজিকের মতো কাজ করল সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সমসারার ক্ষেত্রে। সেজন্য ছবির দুই পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, অভিজিৎ গুহ এবং অবশ্যই ছবির প্রযোজক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীকে কুর্নিশ।




Body:নতুন ভাবনা নিয়ে আসছে বাংলা সিনেমা। তার একটি জলজ্যান্ত নিদর্শন হয়ে রইল সমসারা। তিন বন্ধুর গল্প বলছে ছবিটি। গল্প বলছে তাদের রিইউনিয়নের। তিন বন্ধু অনেকদিন পর দেখা, এই বিষয়ে বহু ছবি হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। কিন্তু তার মধ্যেও স্বতন্ত্র হয়ে থেকে গেল সমসারা। হিরো এখানে ছবির বিষয়।

সমসারা কী? ছবি মুক্তির আগে এই শব্দটি ধাঁধার মতো মনে হয়েছিল বাংলা ছবির দর্শকের। শেষমেশ পরিষ্কার হল এর অর্থ। গোটা ছবিতেই শব্দটি তাড়া করে বেড়াবে দর্শককে। ঠিক যেমনটা তাড়া করেছে ছবির তিন চরিত্রকে। একেবারে মৃত্যুর প্রাক মুহূর্ত থেকে সদ্য পঞ্চত্বপ্রাপ্তি পর্যন্ত। মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা কীভাবে চক্রব্যূহে ঘুরতে থাকে, তার এক অদ্ভুত প্রদর্শন এই ছবি। সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই এই কারণে এটি সিনেমা। আর সিনেমা মানেই মনোরঞ্জন। সব সময় যে লজিক মেনে চলবে তারও কোনও মানে নেই। তবে পরিচালক যদি মনে করেন তার ছবির বাস্তবই লজিক, তখন পরিচালকেরই দায় বর্তায় কীভাবে সেই সিনেমাটিক লজিককে দর্শকের কাছে বাস্তব রূপ দেবেন। এই কাজে পরিচালকদ্বয় সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা যেভাবে দর্শকের মন জিইয়ে রেখেছেন সেটা কাবিল-এ-তারিফ। এর চেয়ে বেশি কিছু বললে, রহস্যে মোড়া থ্রিলার ছবিটি দেখার আনন্দ মাটি হবে।

এর পরে আসব সিনেমাটোগ্রাফির প্রসঙ্গে। ছবির অনেকটাই শুটিং হয়েছে মেঘালয়ের কোনও একটি ভার্জিন লোকেশনে। লোকেশনের মাধুর্য ছবির একটি চরিত্র। এমনই সম্মোহনী দৃশ্যায়ন যে হলফ করে বলা যেতে পারে এরপর বাঙালির বেড়ানোর গন্তব্য হয়ে উঠবে সেই জায়গা।

ছবিতে অভিনয় যথাযথ। প্রযোজক ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীও এই ছবিতে তিন বন্ধুর একজনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। রাহুল ও ঋত্বিক বরাবরের মতোই ভালো। সুদীপ্তা চক্রবর্তী অনবদ্য। শিহরণ জাগিয়েছে তাঁর অভিনয়। দেবলীনা কুমার ও তনুশ্রী চক্রবর্তী মানানসই। এবং বিশেষ প্রশংসার হকদার সমদর্শী দত্ত। ছবিতে কমিক চরিত্রে ভালোই পাঠ করলেন অম্বরিশ ভট্টাচার্য।









Conclusion:সমসারা শুধু মাত্র তিন বন্ধুর গল্প নয়। এর তাৎপর্য অনেক গভীর। আমরা প্রত্যেক মানুষই জীবদ্দশায় পাপের অধিকারী। কারও পাপ ক্ষুদ্র, কারও বৃহৎ। কেউ অনুতপ্ত, কারও মানসিকতা নির্বিকার। এমন মানুষও আছে যার পাপ তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। এই ছবি সেই পাপের হিসেব মেটানোর কাহিনি। মৃত্যুর পর মানুষের কী দশা হয়, পাপ যে মানুষকে আজন্ম-মৃত্যু তাড়িত করে তারই একটি গল্প। এমন একটি গল্প যার শেষ হয়েও মনের মধ্যে হাহাকার সৃষ্টি করবে, অমানবিকতাকে সমঝে চলতে শেখাবে। সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহর ২৫ বছরের পরিচালক জীবনে এমনই পরিণত চিন্তাভাবনার ছবি আশা করা যায়।
Last Updated : Aug 3, 2019, 11:50 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.