কলকাতা : কী অভিযোগ তুলেছেন রূপক? নিচে রইল তাঁর করা মেইল...
"আমি রূপক চ্যাটার্জি। গত প্রায় ১৭ বছর ধরে আমেরিকা নিবাসী। আমার বাড়ি কলকাতায় এবং আমার পড়াশোনা এবং বাংলা চর্চার শিকড় কিছুটা কলকাতায়। আমেরিকা আসার পর সেই বাংলা ভাষাকে খুব মিস করতাম। তাই একসময় ঠিক করলাম, এবার বাংলার জন্য কিছু করব। আর সেখান থেকেই বাংলা ভাষায় আমার ছবি বানাবার ইচ্ছা হল। ছবি বানাতে এলেন দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত। আগে থেকেই কথা হয়েছিল তিনি ছবি বানাবেন এবং তার সঙ্গে আরও কিছু খুচরো অভিনেতা-অভিনেত্রীকে কলকাতা থেকে আনা হল আমেরিকা। যদিও যেসব অভিনেতা অভিনেত্রীরা এসেছিলেন সবাই দেবপ্রতিম বাবুর লোক। তাদের কারও সঙ্গেই আগে থেকে আমার পরিচয় ছিল না। সে যা হোক ছবির শুটিং হল। শুটিংয়ের সময় নানান ঝামেলা। বিশেষ করে নেশা সংক্রান্ত। আমাদের আমেরিকায় যেখানে সেখানে সিগারেট খাওয়া যায় না। সেটা তাঁরা মানছিলেন না। বারবার আমাকেই তার খেসারত দিতে হচ্ছিল। ফাইন হচ্ছিল আমার। তারপর ছবির শুটিং হয়ে যাওয়ার পর কলকাতায় ফিরে গেলেন তাঁরা। সেখানে গিয়ে আমার কাছ থেকে ক্যাশ টাকা নেওয়া শুরু হল। সরাসরি ব্যাঙ্কে টাকা দেওয়া যাবে না। তাহলে ইনকাম ট্যাক্স ঝামেলা করবে। আমরা আমেরিকা নিবাসী, আমাদের কাছে এগুলো অবাক লাগে, ইনকাম করলে ইনকাম ট্যাক্স তো দিতেই হবে। তাতে ঝামেলা করার কী আছে? সে যাই হোক, আমার কাজ, মানে পোস্টের কাজ চলতে লাগল। তারপর আমিও একবার কলকাতা গেলাম। যদিও তার আগে পরিচালক আর তার খুচরো অনিন্দ্য এবং আমার পরের ছবির নায়িকা রূপাঞ্জনা ঘুরে গেছেন আমেরিকা। এখানে ছিল ট্রেলার লঞ্চ। সেখানেই রূপাঞ্জনা সঙ্গে আলাপ আমার। দ্বিতীয় ছবির কথা চলছে। পরিচালক জানালেন, দ্বিতীয় ছবি করে একসঙ্গে দুটো ছবি লঞ্চ করবেন। আমি ভাবলাম পরিচালক এ বিষয়ে আমার থেকে বেশি খবর রাখেন, তাই তার কথা মেনে নিতে দ্বিতীয় ছবি বানানোর টাকা রেডি করলাম। আগের ছবি নিয়ে সবাই আসবে আমেরিকা, এখানে হবে প্রিমিয়ার। তারপর দ্বিতীয় ছবির শুটিং শুরু।"
রূপক আরও লিখেছেন, "সঙ্গে এবার আসবে দুজন সাংবাদিক। একজন 'এই সময়'-এর ভাস্বতী এবং একজন 'প্রতিদিন'-এর ইন্দ্রনীল রায়। তাঁরা এসে বড় করে কভার করবেন। তাঁদের টিকিট, থাকা খাওয়া নিয়ে আমার প্রায় পাঁচ লাখের কাছাকাছি খরচ। আমি মেনে নিলাম। তাঁরা সবাই এল। এবার লোক আরও বেশি। প্রিমিয়ারের দিন দেখি সবাই ১১টায় ঢোকার কথা, সেখানে হলে আসছেন বিকেল ৫টার সময়। সঙ্গে সেই সাংবাদিকদ্বয়। আমি তো অবাক, ওদের গোটা ইভেন্ট কভার করার কথা। এদিকে পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রীরা সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেয়ে গেল। সেটা আবার যেখানে-সেখানে ফেলার জন্য আমার বড় অঙ্কের টাকা ফাইন হল। সাংবাদিকরা শুধু আমার টাকায় খেল ঘুরল তাই নয়, তাঁরা আমার টাকায় তাঁদের অ্যামেরিকার আত্মীয়দের বাড়ি অব্দি গেল। সেই এক্সট্রা টাকা দেওয়ার কোনও ইচ্ছা ওদের ছিল না। আর দেয়ওনি। তারমধ্যে রূপাঞ্জনা আর সন্দীপ্তা এবং অনিন্দ্যদের তো নানান ঝামেলা। তাদের কারও টাকা চুরি যায়, কারো ভূতের ভয়, কেউ আবার শুটিংয়ের সময় কফি খেতে চলে যায়। খুব বাজেভাবেই ছবির শুটিংয়ের কাজ শেষ হল। এদিকে সাংবাদিকদের ফিরেই খবর করার কথা ছিল। তারা সেটা করল না। একজন ছোট্ট একটু খবর করেছিল বটে, কিন্তু তার জন্য আমেরিকার আসার দরকার পড়ে না। প্রথম ছবি এখনও রিলিজ করেনি। পরিচালক দেশে ফেরার পর সেটা রিলিজের কথা বললে সে বলে এভাবে হয় না আর এটা নাকি প্রযোজকের দায়িত্ব। এরকম বেশকিছু দিন বলার পর আমি মুখ খুলি। আমার থেকে লাখ লাখ টাকা তারা নেয় অথচ তাদের আরও টাকার দরকার। এভাবে আর কতদিন? বাংলা ছবির এমন মরা বাজারে আমাদের মতো বিদেশ বাসী প্রযোজকরা আর কীভাবে আসবে বলতে পারেন? কাকেই বা বিশ্বাস করব?"
প্রযোজকের এই অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা যোগাযোগ করি পরিচালক দেবপ্রতিম দাশগুপ্তর সঙ্গে। তিনি ETV ভারত সিতারাকে জানান, "আপনারা জানতে চাইলেন আমার কী মত। আমি বিষয়টাকে এত গুরুত্ব দেওয়াই প্রয়োজন মনে করছি না। খুচরো অভিনেতা-অভিনেত্রী! এসবের কি উত্তর দেব? ওর ছবি মুক্তি পাক এই কামনাই করি। আর যদি বলেন উত্তর, তাহলে বলি আমি যে সময় উত্তর দেব বলে মনে করব, ঠিক তখনই দেব।"