কলকাতা : 'ফিরায়ে দিনু দ্বারের চাবি, রাখি না আর ঘরের দাবি...সবারে আমি…টাটা করে যাই'...'ময়ূরাক্ষী' ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত চরিত্র সুশোভন এভাবেই ভুলে যাওয়া কবিতাকে সম্পূর্ণ করেছিলেন । আজ তাঁর সেই জোড়া তাপ্পি লাগানো কবিতাই বড় সত্য়ি হয়ে উঠেছে সৌমিত্রর জীবনে । সবাইকে টাটা করে অনেক দূরে পাড়ি দিয়েছেন তিনি ।
বেঁচে থাকলে আজ সৌমিত্রর বয়স হত 86 । হয়তো আজকের দিনটিকে কাজের মাধ্যমেই সেলিব্রেট করতেন তিনি । কবিতা, গান, সিনেমা, নাটক, লেখালেখির মধ্যে দিয়েই সবাইকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতেন । না, তা আর হওয়ার নয় । আজ সৌমিত্র চিরঘুমে আচ্ছন্ন ।
বিখ্যাত অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ বলেছিলেন যে, সৌমিত্রকে তিনি হিংসে করতেন । সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে এত ভালো ভালো চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন সৌমিত্র...ভেবেই ঈর্ষা হত নাসিরের ।
শুধু কি নাসির ? সৌমিত্রর এমন চেহারা, এমন রূপ, এমন গুণ, এমন ব্যক্তিত্ব দেখলে কার না ঈর্ষা হবে ? তবে ঈর্ষাকে ছাপিয়ে গেছে মুগ্ধতা, শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম । সৌমিত্রর পর আর কাউকে নিয়ে বাঙালি এত গর্ব করতে পারেনি । আগামী একশো বছরেও পারবে কিনা সন্দেহ ।
মৃত্যুর আগে হাসাপাতাল ভরতি ছিলেন প্রায় চল্লিশ দিন । এই চল্লিশটা দিন ধরে আপামর সিনেমাপ্রেমী মানুষরা তাঁর আরোগ্য কামনায় প্রার্থনা করে গেছেন । আশা করেছেন আবার হয়তো কোনও ফিল্মের সেটে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে পাওয়া যাবে তাঁকে ।
তবে সব আশা পূরণ হয় না । 15 নভেম্বর দুপুর 12টা 15 মিনিট । পুরো দেশকে কাঁপিয়ে খবরটা এল । সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর নেই । সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলে সেদিন তুমুল ব্যস্ততা । তবে যাঁকে নিয়ে এই সবকিছু তিনি তখন ঘুমের আরামে ডুবে গেছেন ।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষদের মৃত্যু হয় না । মৃত্যুটা তাঁদের কাছে জীবনেরই একটা অধ্যায় মাত্র । এখন সময় তাঁকে আরও ভালো করে চেনার, আবিষ্কার করার, তাঁর রেখে যাওয়া কাজের বিপুল সম্ভারকে উদযাপন করার । তাঁকে মনে রাখার এর থেকে ভালো উপায় আর কিছু হতে পারে না ।
আজ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকীতে একটাই কথা বলার....ক্লান্ত পথিক, তুমি বিশ্রাম নাও...তুমি বিশ্রাম নাও গাছের ছায়ায়, প্রকৃতির মায়ায়..তুমি বিশ্রাম নাও ।