কলকাতা : তিনি বরাবরই অসম্ভব স্পষ্টবাদী একজন মানুষ । রাখঢাক করে কথা তিনি বলেন না । লকডাউনের মধ্যে আর পাঁচজন মানুষের মতো তিনিও গৃহবন্দী । এখন কেমন আছেন তিনি ? কীভাবে কাটছে তাঁর সময় ? ETV ভারত সিতারার সঙ্গে আলাপচারিতায় এই সবই শেয়ার করে নিলেন পরিচালক অনীক দত্ত ।
- লকডাউনে কেমন আছেন ?
অনীক দত্ত : আমার লাইফস্টাইলই এরকম । ছবির শুটিং থাকলে ঠিক আছে । না হলে আমি অত্যন্ত অলস ব্যক্তি । শুয়ে-বসে সময় কাটাই । সেটাই করছি এখন । আমার দুটো প্রিয় জিনিস রয়েছে, সেটাই করছি । তার মধ্যে একটা ঘুম, আরেকটা ভাবনাচিন্তা করা । ফলত, ভাবছি আর ঘুমোচ্ছি । কখনও টিভি দেখছি, সোশাল মিডিয়াতে কী হচ্ছে দেখছি, খুব অল্পস্বল্প বইপত্র নাড়ছি । কিছুদিন আগে সকালে বাড়ির সামনে একটা অদ্ভুত কান্নার মতো আওয়াজ পেলাম । গিয়ে দেখলাম একজন খাবার চাইছেন । খাবার দিলাম । মানুষ হাজার হাজার মাইল ধরে হাঁটছেন, অসুস্থ হচ্ছেন, তাঁরা মারাও যাচ্ছেন দুর্ঘটনায় । নিজেরও একটা গিল্ট ফিলিং হচ্ছে । টুকটাক সাহায্য করছি । এভাবেই চলছে ।
- একটা শ্রেণির কাছে দুর্ভিক্ষ কড়া নাড়তে শুরু করেছে । তাহলে ?
অনীক : হতেই পারে । আমার মা দুর্ভিক্ষের গল্প বলতেন । তিনি তখন খুব ছোটো ছিলেন । প্রশ্ন করতাম, মায়েরা কীভাবে সেগুলো চোখের সামনে সহ্য করতেন । সেসময় "ফ্যান দাও" বলে কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেত । নিজের বাড়ির পাশেই এরকম একটা ঘটনা দেখে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে । হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক দেখতে শুরু করেছি । মনটাকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেছি ।
- এই লকডাউন কতদিন চলবে বলে মনে হচ্ছে আপনার ?
অনীক : সোশাল মিডিয়া ও টেলিভিশনের দৌলতে এখন আমরা সবাই ছোটোখাটো গবেষক হয়ে উঠছি । আমার মনে হয়, এই ব্যাপারটা নিয়ে এক্সপার্টরাই ভীষণরকম ধন্দে রয়েছেন । জার্মানিতে যেভাবে লকডাউন হবে, আমাদের এখানে সেটা হবে না । কয়েকটা কঠিন কঠিন কথা বলা হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব, এলিয়েনেটিং, কোয়ারানটিন । এগুলো বলার দরকার ছিল না । আমাদের দেশের মানুষ এসব বুঝবে না । আরও সহজভাবে বাংলা-হিন্দিতে কিছু বলতে পারত । সেরকমভাবেই স্লোগান করা উচিত ছিল । এরমধ্যে পার্টির লোকেরা নিজেদের বিজ্ঞাপন করে ফাটিয়ে দিচ্ছেন । আমি একটা মডেল দেখেছিলাম, যেখানে কোরোনার গ্রাফটা 50 দিনে প্রায় জ়িরোর কাছে নেমে যাবে । অন্য একটা গ্রাফ দেখেছিলাম, যেখানে লম্বা লকডাউনের মাঝে মাঝে কয়েকদিনের গ্যাপ দেওয়া হবে, সেটা তাঁদের জন্য যাঁরা এই পরিযায়ী শ্রমিকদের মতো আটকে যাচ্ছেন । এখন সরকারকে যাঁরা উপদেশ দিচ্ছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বিদ্যান মানুষ । তাঁরা যা বলছেন, তাই হচ্ছে । এদিকে আমার স্ত্রী 3 থেকে 4 মাস আমাকে বেরোতে বারণ করেছে । ভ্যাকসিন বেরোলেও যে কোরোনা ভাইরাস নির্মূল হবে, তাও তো নয় । এখনও তো মানুষ টিবির মতো অসুখে মারা যায় । লকডাউন তো একটা পজ় । ব্যাপারটা যাতে সাংঘাতিক না হয়, সেটা দেখার উপায় মাত্র ।
- এই পরিস্থিতির মধ্যে কীভাবে নিজের শরীরের যত্ন নিচ্ছেন ?
অনীক : দেখুন আমার অ্যাকিউট COPD আছে । ডাক্তার বলেই দিয়েছেন, আমার যদি ফ্লু কিংবা নিউমোনিয়া হয়, তাহলে প্রাণ সংশয় হতে পারে । নিউমোনিয়া ও ফ্লুয়ের জন্য 5 বছর ধরে নিয়মিত 2টো ইনজেকশন নিয়ে যাচ্ছি । ভ্যাকসিনের মতো । কোরোনার তো কোনও ভ্যাকসিন বেরোইনি এখনও । ডাক্তারকে আমি জিজ্ঞেসও করেছি, আমার যদি কোরোনা হয়, আমি কি মারা যাব ? তিনি দেখলাম চুপ করে রয়েছেন । উত্তরটা বুঝে গেলাম । দেখতে হবে যাতে ভালো থাকতে পারি । আমাকে লকডাউন অবস্থায় থাকতে হবে বহুদিন ।
- এই রাজ্যের আক্রান্তর সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না...
অনীক : প্রথমে এখানে এটা নিয়ে কেউ কথা বলছিল না । ন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া বলতে শুরু করল । আপনিও যা শুনছেন, আমিও তাই শুনছি । কেরালাতে সবার আগে ধরা পড়েছিল । তারা তো জিনিসটা ঠিক করে নিচ্ছে । তারা তো ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনাও করছেন । আমার তো মনে হয় অন্য রাজ্যের এঁদের সঙ্গে কথা বলা উচিত । ওড়িশাও ভালো করছে । মহারাষ্ট্রেও প্রচুর টেস্টিং হচ্ছে । এখানে মৃতের সংখ্যা আক্রান্তের সংখ্যার কথা কমিয়ে বলা হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না । আমাদের পক্ষে জানা খুব মুশকিল, কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল । এখানে পুলিশ খুব ভালো দায়িত্ব পালন করছে । একটা কথা মন থেকে বলতে চাই, এই যে সঠিক সংখ্যা লুকোনোর ব্যাপারটা, এই রটনা যদি ভুল হয়ে থাকে, আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হব ।
- আপনাদের ইন্ডাস্ট্রি তো এখন প্রায় বন্ধ...
অনীক : কবে কী মুক্তি পাবে জানি না । খুব তাড়াহুড়ো করে যেটা শুরু হবে, সেটা হল ওয়েব ও টিভি সিরিয়াল ।
- এই লকডাউনেও তো অনেকই বাড়িতে বসে শুটিং করছেন...
অনীক : ইরানের একজন মানুষ গৃহবন্দী অবস্থায় ছবি বানিয়েছিলেন মোবাইলে । সেটা বাইরে এডিট হয়েছিল । এটা যে কোনও পরিস্থিতিতেই করা যায় । করলেই যে ভালো হবে, তার কোনও মানে নেই । কোনওটা বসে দেখা যাবে, কোনওটা বসে দেখাই যাবে না । সেরকমও হবে ।
- মমতা ব্যানার্জির ভাবনায় তৈরি শর্টফিল্মটা দেখেছেন ?
অনীক : দেখেছি । কিন্তু সেটা নিয়ে আমি কিছু বলব না ।
- আর বলিউড যেটা প্রথম করল ?
অনীক : সেটায় তো প্রসেনজিৎও আছেন । আর সবাই বাড়িতে বসে শুটিং করছেন । বোঝাই তো যাচ্ছে, ক্যামেরা অন্য কেউ করছে, লাইট ব্যবহার করা হয়েছে । বাড়িতে আছি, ক্যামেরা স্ত্রী করছেন, যে কাজ করে সে করছে । এগুলো দেখে সেটা বোঝা যাচ্ছে না ।