কলকাতা, 9 জুন : লম্বা-চওড়া বিবৃতি দিয়ে নিখিল জৈনের (Nikhil Jain) সঙ্গে তাঁর বিয়ে অস্বীকার করেছেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান (Nusrat Jahan)৷ জানিয়ে দিয়েছেন, তুরস্কের সেই রূপকথার বিয়ে অবৈধ ৷ তবে তাঁর এই দাবি কতটা সঠিক ? আইনজ্ঞরা কিন্তু বলছেন, এই বিয়ে অস্বীকার করতে পারেন না অভিনেত্রী ৷ তিনি যে ভাবে বিয়ে করেছেন, তা বৈধ ৷ আবার লোকসভার ওয়েবসাইটে তৃণমূল সাংসদের প্রোফাইলেও তাঁকে বিবাহিতা হিসেবেই দেখানো রয়েছে ৷ স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে বিয়ের তারিখ ও স্বামীর নামও ৷ কাজেই নুসরতের আজকের দাবি কতটা মান্যতা পাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ৷
আজ বিবৃতিতে কী বলেছেন নুসরত ?
"তুরস্কের বিয়ের আইন অনুযায়ী বিদেশের ওই অনুষ্ঠান অবৈধ ৷ আর যেহেতু এটা দুই ধর্মে বিয়ে, সে জন্য এটি বৈধতা পেতে স্পেশ্য়াল ম্যারেজ অ্যাক্টের স্বীকৃতি প্রয়োজন, যেটা ঘটেনি ৷ আইন অনুযায়ী এটা কোনও বিয়ে নয় ৷ এটা একটা সম্পর্ক অথবা একটা লিভ-ইন সম্পর্ক ৷ সুতরাং বিবাহবিচ্ছেদের প্রশ্নই ওঠে না ৷ দীর্ঘদিন হল আমরা আলাদা আছি ৷ তবে এ নিয়ে কখনও কিছু বলিনি, কারণ আমার ব্যক্তিগত জীবন নিজের কাছেই রাখতে চেয়েছি ৷ তাই আমার সঙ্গে জড়িত কেউ বা কোনও সংবাদমাধ্যম এই সেপারেশনের ভিত্তিতে আমার কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না ৷ এই বিয়ে বেআইনি ও অবৈধ ৷"
আরও পড়ুন: নিখিলের সঙ্গে লিভ-ইন করেছি, বিয়ে হয়নি, বিচ্ছেদের প্রশ্নই ওঠে না : নুসরত
আইন কী বলছে ?
নুসরতের এই দাবি অবশ্য মানতে পারছেন না আইনজ্ঞরা ৷ এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অরুণাংশু চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলেছে ইটিভি ভারত ৷ তিনি জানালেন, নুসরত জাহান ও নিখিল জৈনের বিয়ে বৈধ ৷ ভিন ধর্মে বিয়ের ক্ষেত্রে স্পেশ্য়াল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে করা প্রয়োজন ৷ তবে ভিনধর্মী কেউ হিন্দু ধর্মের প্রতি আস্থা রেখে স্বেচ্ছায় হিন্দু আচার-প্রথা মেনে সামাজিক বিয়ে করলে সেই বিয়ে হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী বৈধ বলে বিবেচিত হবে ৷
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর যুক্তি
আইনজীবী অরুণাংশ চক্রবর্তী বললেন, "নুসরত জাহান তাঁর বিয়েটা এড়াতে পারবেন না ৷ এই বিয়ে বৈধ ৷ কারণ তিনি বিয়ের আগেই ধর্মান্তরিত হয়েছেন ৷ আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মান্তরিত না হলেও, তিনি যে প্রথা মেনে বিয়ে করেছেন, তাতেই আইন মেনে নেবে যে তিনি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন ৷ হিন্দু আইনে বলা আছে, হিন্দু অনুষ্ঠান ও প্রথা মেনে অর্থাত্ শাঁখা-সিঁদুর পরে, মালাবদল করে, সিঁদুরদান করে, আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে যদি কোনও নারী স্বেচ্ছায় বিয়ে করেন, কেউ যদি সেই বিয়েতে আপত্তি না করেন, হিন্দু সমাজ যদি তাঁকে হিন্দু বধূ হিসেবে মেনে নেয়, তাহলে এটাই বুঝতে হবে যে হিন্দু বিশ্বাসের প্রতি আস্থা রেখে তিনি ধর্মান্তরিত হয়েছেন এবং হিন্দু ধর্মে বিয়ে করেছেন ৷ হিন্দু মতে বিশ্বাস রাখতে গেলে কোনও অনুষ্ঠান করে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, আচরণ থেকে পরিলক্ষিত হয় যে তিনি হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন ৷ বিয়ের পর দুর্গা পুজোর উদ্বোধন করতে ও অষ্টমীর অঞ্জলিও দিতে দেখা গিয়েছে নুসরতকে ৷ কাজেই এই বিয়ে অস্বীকার করতে পারবেন না নুসরত জাহান ৷ তাঁর নামটাই এখনও মুসলিম ৷ কিন্তু তিনি হিন্দুই ৷"এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় রয়েছে বলেও জানান তিনি ৷ বিশেষ করে উল্লেখ করেন 1971 সালের পেরুমাল নাদার (মৃত) বনাম পোন্নু স্বামী মামলা ৷ সেখানে শীর্ষ আদালতে বিচারপতি জেসি শাহ, বিচারপতি কেএস হেগড়ে, এএম গোভারের বেঞ্চ এ রকমই রায় দিয়েছিল ৷
আরও পড়ুন: আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে নিখিল, অভিযোগ নুসরতের
লোকসভার ওয়েবসাইট বলছে নুসরত বিবাহিত
সবশেষে অরুণাংশ চক্রবর্তী উল্লেখ করেন লোকসভার ওয়েবসাইটের কথা ৷ সেখানে এখনও বসিরহাটের সাংসদের প্রোফাইলে জ্বলজ্বল করছে তাঁর স্বামীর নাম নিখিল জৈন ৷ ওয়েবসাইটে বলা আছে, নুসরত বিবাহিত এবং তাঁর বিয়ে হয়েছিল 2019 সালে ৷ কাজেই আইনজীবীর যুক্তি, এই বিয়েটা বৈধ বলে মেনে নিয়েছিলেন বলেই সরকারি ওয়েবসাইটের প্রোফাইলে নিজের সম্পর্কে নুসরত এই তথ্য দিয়েছিলেন ৷ কাজেই তাঁকে অন্য কারওকে বিয়ে করতে হলে আগে বিবাহবিচ্ছেদ করতে হবে বলে জানালেন অরুণাংশু বাবু ৷
আরও পড়ুন: নিখিলে-যশে পার্থক্য নেই, নিজের পরিচয়েই সন্তানকে বড় করুক নুসরত: তসলিমা
সবমিলিয়ে নুসরতের বিবাহ অভিযান কোনদিকে গড়ায় তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে ৷ 2019 সালে নুসরত-নিখিলের বিয়ে ছিল রূপকথার উপাখ্য়ান । 13 জুন কলকাতায় গায়ে হলুদের পর্ব মিটিয়ে 15 জুন নিখিল ও অন্যান্য প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে তুরস্কে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী । বিয়ের পর্ব সেখানে সেরে পরের মাসে, অর্থাৎ জুলাইয়ের 4 তারিখ কলকাতার ITC রয়াল বেঙ্গল হোটেলে ধুমধাম করে পালিত হয় ওয়েডিং রিসেপশন । দিনকয়েক আগে নুসরতকে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ পাঠিয়েছেন নিখিল।