মুম্বই, 16 ফেব্রুয়ারি : মঙ্গলবার তার ইন্দ্রধনুকে হারিয়েছিল সঙ্গীত জগত ৷ এই শোক সামলে উঠতে না উঠতেই একই দিনে গভীর রাতে জুহুর ক্রিটিকেয়ার হাসপাতালে মঙ্গলবার রাতে শেষ নিশ্বাস ত্য়াগ করেছেন বিখ্য়াত সুরকার তথা গায়ক বাপ্পি লাহিড়ী (Disco King Bappi Lahiri Passes away) ৷ মৃত্য়ুকালে ডিস্কো কিংয়ের বয়স হয়েছিল 69 বছর ৷ বেশ কয়েকটি শারীরিক সমস্য়ায় ভুগছিলেন তিনি ৷
1952 সালে 27 নভেম্বর উত্তরবঙ্গের সঙ্গীতময় লাহিড়ী পরিবারে জন্ম বাংলার আদরের বাপ্পিদার, বাবা অপরেশ লাহিড়ী ছিলেন বাংলার একজন জনপ্রিয় গায়ক ৷ মা বাঁশরী লাহিড়ীও ছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং শ্য়ামা সঙ্গীত গায়িকা ৷ তাঁদের হাত ধরেই সঙ্গীতে শিক্ষা শুরু অলোকেশ বা বাপ্পির ৷ মাত্র তিন বছর বয়সেই তবলা শিখতে শুরু করেন তিনি ৷
ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতে তাঁর কতখানি অনুরাগ ছিল তার একটি ছোট্ট নিদর্শন হল বাপ্পি লাহিড়ী প্রথমবার গানে সুরারোপ করেন মাত্র 11 বছর বয়সে ৷ আর বলিউডে তিনি পা দিয়েছিলেন 1973 সালে অর্থাৎ তখন তাঁর বয়স মাত্র ঊনিশ-কুড়ি ৷ এর আগে বাংলায় 'দাদু' ছবিতেও জায়গা করে নিয়েছিল তাঁর রচিত গান ৷ মায়া নগরী মুম্বইতে পৌঁছানোর একদশকের মধ্য়েই হিন্দি গানের দুনিয়ায় তিনি নিয়ে আসেন একটি নতুন শব্দ -ডিস্কো ৷ আর ডি বর্মনের শেষ মেগা হিট '1942: এ লাভ স্টোরি' ছবির জনপ্রিয় গানগুলির পর যে শূণ্য়তা তৈরি হওয়ার কথা ছিল সেই রিক্ত স্থান নিজের মত করে অনেকটাই ভরাট করে দিতে পেরেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী ৷
মূলত আশি এবং নব্বইয়ের দশকে বাপ্পিদার আধিপত্য় যে ছিল সবচেয়ে বেশি তা স্বীকার করে নিতেই হয় ৷ একদিকে যেমন হিন্দিতে 'ডান্স ডান্স','চলতে চলতে','নমক হালাল','ডিস্কো ডান্সার '-এর মত জনপ্রিয় ছবিতে সুর দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি, তেমনি বাংলাতেও 'আশা ও ভালবাসা','অমর সঙ্গী ','আমার তুমি'-র মত ছবিতেও সুরারোপ করেছিলেন তিনি ৷ এই কিংবদন্তী সংগীত শিল্পী শেষ কাজ করেছিলেন গত বছরেই ৷ 'গনপতি বাপ্পা মৌরিয়া' নামক একটি ছবির গানে সুরারোপ করেছিলেন তিনি ৷ সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকে তাঁর হাতে তৈরি "আই অ্যাম এ ডিস্কো ডান্সার", "জিমি জিমি", "ইন্তেহা হো গেয়ি", "তম্মা তম্মা লোগে", "ইয়ার বিনা চেয়েন কাঁহা রে", 'আজ রাপত যাইয়ো তো', "চলতে চলতে"-র মত গান সঙ্গীতপ্রেমীর মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে ৷
আরও পড়ুন: ফিরে দেখা ডিস্কো কিং বাপ্পিদার বর্ণময় সঙ্গীত যাত্রা
2000-এর পরেও একাধিক জনপ্রিয় গানে গলা দিয়েছেন তিনি ৷ 2011 সালেও 'ডার্টি পিকচার' ছবিতে শ্রোতাদের মাতিয়ে দিয়েছিল তাঁর গলা ৷ তাঁর শেষ জীবনের কাজের দিকে তাকাতে গেলে 'গুন্ডে', 'জলি এলএলবি'-র মত ছবিগুলির কথা উল্লেখ করতেই হবে ৷ বাপ্পিদা যে কখনও পুরোনো হয় না 'তু নে মারি এন্ট্রি ইয়ার' 'মেরে তো এল লাগ গ্যায়ে'-এর গানগুলিই তার অকাট্য় প্রমান ৷ তাঁর গলাতেও 'রাহি হু মে', 'বোম্বাই সে আয়া মেরা দোস্ত', 'মৌসম হ্যায় গানে কা',' তুম জো ভি হো',' তু মুঝে জান সে ভি পিয়ার হ্যায়', 'ইয়াদ আ রাহা হ্যায়'-এর মত একাধিক কালজয়ী গান পেয়েছে ভারতীয় সঙ্গীত ৷ ঘুমের দেশে চলে গেলেন সঙ্গীতের এমন এক কিংবদন্তী যিনি শেষ বয়স অবধি শ্রোতাদের হৃদয়ে সুরের ঝড় তুলে দিতে জানতেন ৷