কলকাতা, 17 ফেব্রুয়ারি: 'দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন' গোটা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছিল বিপ্লবের এক অমোঘ গাঁথা। ঠিক তেমন ভাবেই ভারতে চলতি মাসের শেষ দশ দিনে যন্ত্রনায় কেঁপে উঠছেন দেশের সংগীতপ্রেমীরা । ঘটে চলেছে একের পর এক নক্ষত্র পতন । যা আপামর সংগীত জগৎকে শোকে মুহ্যমান করে দিয়েছে । ৬ ই ফেব্রুয়ারি ভারতের নাইটঙ্গেল লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল দেশে এবং বিদেশের কোটি কোটি অনুরাগী । সেই না শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শারীরিক জটিলতা নিয়ে ভর্তি হন দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে । ফেরানো যায়নি তাঁকেও ৷ মঙ্গলবার সত্যিই এক ব্যথাতুর কালো দিন সঙ্গীত জগতের জন্য় ৷ গীতশ্রীকে হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার কোনও সময়ই পাননি অনুরাগীরা ৷ তার আগেই ফের এল দুঃসংবাদ ৷ বাঙালিকে করে গেলেন সম্পূর্ণ রিক্ত করে চলে গেলেন সকলের আদরের 'বাপ্পিদা' লাহিড়ী । দাদা শব্দটা যার নামের সঙ্গে এমনভাবেই জুড়ে গিয়েছিল যে মনে হত সেটা নামেরই অংশ ৷
পরপর এই তিন শিল্পীর প্রয়াণ ভীষণ ব্যাথিত করেছে সংগীতে শিল্পী বাবুল সুপ্রিয়কেও (Babul Shares His Gratitude on Lataji Sandhyadi and Bappida )৷ বাবুল জানান, লতাজি এবং সন্ধ্যাদির সঙ্গে কথা বললে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি আসত মনের মধ্যে । তাঁদের কাছে মাতৃস্নেহ পেয়েছেন বলেও জানান গায়ক ৷ আর বাপ্পিদার জন্য তিনি নিজে অনুশোচনায় রয়েছেন । সুস্থতার খবর পেয়ে হাসপাতালে তাঁকে দেখতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বদল করেছিলেন বাবুল । কিন্তু ভীষণ আফসোস হচ্ছে এখন । বাপ্পিদা প্রথম বলিউড তথা এই দেশে ইলেকট্রনিক ডান্স মিউজিক নিয়ে এসেছিলেন । পাশাপাশি আজ অবধি সর্বাধিক হিন্দি গানে সুর দেওয়ার রেকর্ডও রয়েছে তাঁর । বাংলাদেশি শিল্পী রুনা লায়লাকে দিয়ে সুপারনোভা অ্যালবাম এবং ডিস্কো ডান্সারের সেই অনবদ্য গান ।
তিনি আরও বলেন, "আর ডি বর্মন আর বাপ্পিদার গায়নভঙ্গি সম্পূর্ন ইউনিক । কেউ চাইলেও ওমন গাইতে পারবেন না । গানের সুর করা কমিয়ে দিয়ে শেষ দশ পনেরো বছর তিনি গান গেয়েছেন । সেগুলিও অনবদ্য সাফল্য লাভ করেছে । এই সপ্তাহটা একটা কালো সপ্তাহ। মানুষ হারালেন এমন কয়েকজন শিল্পীকে। যাদের মতো আর কেউ ফিরে আসবেনা কখনও।"
আরও পড়ুন: আমেরিকা থেকে ফিরলেন ছেলে, আজ বাপ্পি লাহিড়ীর শেষকৃত্য
বাবুল জানান, তাঁর স্ত্রী চিত্রানী বাপ্পিদাকে আগলে রেখেছিলেন । বাপ্পিদার সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয় তাঁর নখদর্পণে । এরকম আদর্শ জীবনসঙ্গিনী পাওয়া খুব দুষ্কর । ১৯৯৪ সালে তাঁকে বাংলা ছবিতে প্রথম সুযোগ দেন তিনি । বাবুল বলেন, "প্রতি বছর বাপ্পিদার মুম্বাইয়ের বাড়িতে সরস্বতী পুজোতে লতাজি, আশাজি আসতেন । খুব কাছ থেকে দেখে বুঝেছিলাম এই মানুষগুলো ভীষণ ভাল মনের এবং খুব মজার মানুষ ছিলেন। আজ এরা দুজনেই নেই। তবু স্মৃতির সাগরে ব্যাথিত হৃদয়ে ভারাক্রান্ত হয়ে একটাই গানের কলি গুনগুনালেন বাবুল, ' ইয়াদ আ রাহা হে তেরা প্যায়ার'।