কলকাতা : তিনি বাঙালিয়ানার প্রতীক । সুদর্শন চেহারার ধুতি-পাঞ্জাবি পরা একটি ব্যক্তিত্ব । বাঙালি সত্তার এক প্রতিমূর্তি । তাঁর সেই ভঙ্গিমা, সেই চোখের চাউনি, সেই ভুবনভোলানো হাসি শুধু বাঙালি নয়, বিশ্ববাসির মনে গেঁথে রয়েছে আজও ।
তিনি বাংলার "মহানায়ক" । মৃত্যুর চার দশক পরও তিনি মানুষের কাছে চর্চার বিষয় , কৌতুহলের বিষয় । আজও মানুষের মুখে মুখে ঘোরে তাঁর অভিনয়ের কথা । তিনি বাঙালির উত্তম কুমার । 40 তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করল ETV ভারত সিতারা ।
অন্যান্য বাঙালি পরিবারের মতো তিনিও একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে । পরিবারের হাল ধরতে যার গ্র্যাজুয়েশনও শেষ করা হয়ে ওঠেনি । কলকাতা পোর্টে চাকরি দিয়ে শুরু কর্মজীবনের । তবে অভিনয় জগত তাঁকে বেশি টানত । তাই বারবার ছুটে গেছেন নাটকের মঞ্চে ।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এক সাধারণ ছেলের জন্য চলচ্চিত্র জগতে জায়গা করে নেওয়ার পথটা সহজ ছিল না । কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি । থিয়েটার করতে করতে ডাক পান স্টুডিয়োপাড়া থেকে । কিন্তু শিকে ছেঁড়েনি । হয়ে ওঠেন 'ফ্লপ মাস্টার' । একসময় না কি এই নামেই তাঁকে চিনত স্টুডিয়োপাড়ার সকলে । 1952 পর্যন্ত তাঁর সব ছবিই ফ্লপ হয় । 1953-তে 'সাড়ে চুয়াত্তর'-এ তিনি কামব্যাক করেন । এই ছবি থেকেই শুরু উত্তম-সুচিত্রার জুটিরও । যা আজও দর্শকের কাছে জনপ্রিয় ।
তাঁর অভিনয় চোখ এড়ায়নি সত্যজিৎ রায়েরও । সত্যজিতের পছন্দের নায়ক সৌমিত্রকে ধরা হলেও 'নায়ক'-র গল্প তিনি লিখেছিলেন উত্তমকুমারের কথা ভেবেই । এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের এক অভিনয়-পাগল যুবক ছবিতে নেমে তরতরিয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে । এই অবস্থায় এই যবুকের মনে কী ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে, তার মূল্যবোধে কী পরিবর্তন হতে পারে, এই ছিল গল্পের বিষয় । নায়কের গল্প আমি লিখি উত্তমকুমারের কথা ভেবেই ।"
রোম্যান্টিক নায়ক ছাড়াও অন্যান্য চরিত্রেও তাঁর অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব নজরে পড়েছে । মঞ্চের প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায় 'শ্যামলী' নাটকে ।
বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি । যার মধ্যে 'ছোটিসি মুলাকাত', 'অমানুষ' ও 'আনন্দ আশ্রম' অন্যতম । উত্তম কুমার বাঙালির কাছে শুধু 'মহানায়ক' নন । তিনি একটা যুগও । যা বাংলা চলচ্চিত্র জগতকে ঘিরে রয়েছে ।
'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' ও 'চিড়িয়াখানা'-য় অভিনয়ের জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার । অভিনয় ছাড়াও প্রযোজক, পরিচালক, সংগীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবেও কাজ করছেন উত্তম কুমার ।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে তাঁকে এত তাড়াতাড়ি হারাতে হয়েছে । বেঁচে থাকলে বাংলা চলচ্চিত্র জগতকে হয়তো আজ এক অন্য জায়গায় নিয়ে যেতেন তিনি ।