জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল এমন চিহ্ন খুঁজে পেয়েছে, যাতে মনে হচ্ছে যে 4.37 আলোকবর্ষ দূরের আলফা সেন্টাউরি স্টার সিস্টেমে একটা বাসযোগ্য গ্রহ রয়েছে । এটা এখনও পর্যন্ত আমাদের সবথেকে কাছে থাকা বাসযোগ্য গ্রহ হতে পারে, কিন্তু হলেও সেটা সম্ভবত পৃথিবীর মতো হবে না । আলফা সেন্টাউরি সিস্টেমে জীবন থাকার মতো গ্রহের সম্ভাবনা সবসময়ই বিজ্ঞানীদের কৌতুহলী করেছে, কিন্তু এতদিন পর্যন্ত সেখানে তেমন কোনও গ্রহের উপস্থিতি নির্দিষ্ট করা যায়নি ।
এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ, আমেরিকা : আলফা সেন্টাউরি কী? এটি হচ্ছে আমাদের নিকটতম স্টার সিস্টেম, যার মধ্যে তিনটি তারা রয়েছে । এগুলি হল আলফা সেন্টাউরি এ এবং বি । অনেকটা সূর্যের মতো এই তারা দুটি ৪.৩৭ আলোকবর্ষ দূরে একে অপরকে ঘিরে ঘুরে চলেছে । এছাড়াও রয়েছে প্রক্সিমা সেন্টাউরি, একটা ছোট লাল বামন নক্ষত্র যা তুলনামূলকভাবে আমাদের কাছে (৪.২৪ আলোকবর্ষ দূরে) এবং বাকি দুটি নক্ষত্রের সঙ্গে এর অভিকর্ষজ টানও অনেক কম ।
প্রক্সিমা সেন্টাউরিকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে দুটি গ্রহ, যাদের মধ্যে একটিকে (প্রক্সিমা বি) মনে করা হচ্ছে পৃথিবীর আকারের, যা রয়েছে হ্যাবিটেবল জ়োনে (কক্ষপথের সেই অংশ, যেখানে তরল আকারে জল তৈরি হতে পারে) । কিন্তু এতদিন মনে করা হত যে প্রক্সিমা বি-র একটি দিকই সবসময় তার নক্ষত্রের দিকে মুখ করে থাকে, এবং সেখান থেকে কণার স্রোত সবসময় আছড়ে পড়ছে বলে এখানে জীবন তৈরি হওয়া সম্ভব নয় ।
নতুন তথ্য : আলফা সেন্টাউরি সিস্টেমে প্রাণের সম্ভাবনা সবসময়ই বিজ্ঞানীদের মনযোগ আকর্ষণ করেছে, কিন্তু কোনও গ্রহের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়নি । তার একটা কারণ, কাছাকাছি হওয়ার জন্য তা এতটাই উজ্জ্বল, যে গবেষকদের পক্ষে ওই অঞ্চলে গ্রহের উপস্থিতি চিহ্নিত করা কঠিন । কিন্তু নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখা যাচ্ছে, চিলির ইউরোপিয়ান সাদার্ন অবজ়ারভেটরির ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ (ভিএলটি) ব্যবহার করে একদল গবেষক এমন উজ্জ্বল থার্মাল ইমেজিং সঙ্কেত পেয়েছেন, যা আসছে আলফা সেন্টাউরি এ-র বাসযোগ্য অঞ্চল থেকে ।
আরও তথ্য: এই সঙ্কেত পাওয়া গেছে নিয়ার আর্থস ইন দ্য আলফা সেন্টার রিজিয়ন (নিয়ার)-এর মাধ্যমে । এটি হল 3 মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প, যার পিছনে রয়েছে ইএসও এবং ব্রেকথ্রু ওয়াচ । এই দ্বিতীয় সংস্থাটিকে সহায়তা করেন ইজরায়েলি-রাশিয়ান ধনকুবের ইউরি মিলনার । এই সংস্থার লক্ষ্য আমাদের 20 আলোকবর্ষের মধ্যে পৃথিবীর আকারের গ্রহ খুঁজে বার করা ।
নিয়ার একটি থার্মাল ক্রোনোগ্রাফ সহ আপগ্রেড করতে পেরেছে ভিএলটি-কে, যার জেরে নক্ষত্রদের আলো প্রতিফলিত করা গ্রহগুলোর থেকে স্টেলার লাইট আসছে, তাকে আটকানো এবং হিট সিগনেচার খোঁজা সম্ভব হয় । 100 ঘণ্টার ডেটা বিশ্লেষণ করার পর আলফা সেন্টাউরি এ-র চারপাশ থেকে এমন সিগন্যাল পাওয়া গেছে ।
এই নতুন গ্রহের এখনও নামকরণ হয়নি, এবং এর অস্তিত্ব এখনও যাচাই করা যায়নি । নতুন সঙ্কেত থেকে মনে হচ্ছে যে এটি নেপচুনের আকারের । তার অর্থ এটা পৃথিবীর মতো নয়, বরং গ্যাসে পরিপূর্ণ একটি গ্রহ, যার আকার পৃথিবীর সাতগুণ । যদি জীবন থাকেও, তবে তা হবে আণুবীক্ষনিক, যা গ্যাসের মেঘে ভেসে বেড়াচ্ছে । পাশাপাশি এই সঙ্কেতের আরও কারণ থাকতে পারে, যেমন উত্তপ্ত মহাজাগতিক ধুলো, পিছনে আরও দূরে থাকা কোনও বস্তু বা বিক্ষিপ্ত ফোটন কণা ।
আরও পড়ুন : পৃথিবী থেকে সরে দুই শক্তিধরের লড়াই চাঁদ-মঙ্গলের মাটিতেও
গ্রহের অস্তিত্ব প্রমাণ করা খুব কঠিন হবে বলে মনে হয় না । জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দেখতে হবে যে আবার একই জায়গায় ওই বস্তুটির উপস্থিতি বোঝা যায় কি না, এবং তার অবস্থান কক্ষপথের সঙ্গে মিলছে কি না । পরবর্তী অনুসন্ধান কবে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয় ।