হায়দরাবাদ, 25 ডিসেম্বর: কোনও ব্যক্তির জীবনে মৃত্যু যেকোনোদিন যেকোনও সময় আসতে পারে ৷ আগে থেকে বলা সম্ভব নয় যে কে কবে মারা যেতে পারে ৷ এতদিনের এই ‘সত্যি’কেই এবার বদলে দিতে পারে একদল বিজ্ঞানীর গবেষণা ৷ যেখানে মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো প্রযুক্তি আবিষ্কার করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা ৷ জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে এই সংক্রান্ত একটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স অ্যালগোরিদম তৈরি হয়েছে ৷ যা অনেকটা চ্যাট জিপিটির মতোই৷ তবে এতে কোনও ইউজার ইন্টারফেস নেই ৷ চার বছর ধরে গবেষণা করে 75 শতাংশ সাফল্য পয়েছে এই ‘ডুম ক্যালকুলেটর’ ৷
এই নিয়ে নেচার কম্পিউটেশনাল সায়েন্স অনলাইন জার্নাল বিস্তারিত আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে ৷ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংক্রান্ত গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ডেনমার্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী ৷ এই প্রযুক্তির মূল অংশ লাইফ2ভিক নামের একটি মেশিন-লার্নিং ট্রান্সফরমার মডেলের মধ্যে রয়েছে । এক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করে দেখা হয় কোনও ব্যক্তির বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মসংস্থানের ইতিহাস, আয় ও জীবনের বিভিন্ন ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য ৷
গবেষণার জন্য ডেনমার্কের 6 মিলিয়নেরও বেশি ব্যক্তির নমুনা নেওয়া হয় ৷ যে নমুনা দেয় ডেনিশ সরকার ৷ সেই তথ্য দিয়েই গবেষণার ফলাফল তৈরি করা হয় ৷ এই ব্যক্তিদের তথ্য 2008 থেকে 2020 সালের সময়সীমায় বিভিন্ন লিঙ্গ ও বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল ৷ সেখানে দেখা হয় এই ব্যক্তিদের মধ্যে কারা কারা 2016 সালের 1 জানুয়ারির পর আরও চার বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন ৷
2023 সালের ডিসেম্বরের গবেষণার প্রধান লেখক সুনে লেহম্যান নিউ ইয়র্ক পোস্টকে বলেন, "মানুষের জীবনের ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার একটি ক্রম ব্যবহার করা হয়েছে ৷ সেগুলিকে চ্যাট জিপিটি-তে যে প্রযুক্তি রয়েছে, তা ব্যবহার করা হয় । এর পর সেগুলিকে বিশ্লেষণ করা হয় ।" তবে এই প্রযুক্তি শুধু যে মৃত্যুর দিনের ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য তৈরি হয়েছে, তা নয় ৷ এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য়সংক্রান্ত আপডেট ও সুস্থ থাকার পরামর্শও দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে ৷
এই প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করবে?
- আপনার বয়স, ওজন (কিলোগ্রামে), উচ্চতা (সেন্টিমিটারে), দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণ এবং ব্যায়ামের মাত্রা (0-10 এর স্কেলে, 4টি গড়-সহ) লিখুন ।
- আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স সংক্রান্ত অ্যালগরিদমগুলি তারপর বিশাল স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ও চিকিৎসা গবেষণার ভিত্তিতে আপনার দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করবে ।
- ক্যালকুলেটর আপনার সম্ভাব্য আয়ুষ্কালের একটি আনুমানিক পরিসীমা বা গড় পরিবেশন করবে ।
- আপনি কীভাবে জীবনের মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করবেন, সেই সংক্রান্ত পরামর্শও পাওয়া যাবে ৷
এই উদ্ভাবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, এই প্রযুক্তি একেবারে বিনামূল্যে মিলছে ৷ ব্যবহারকারীরা কোনও খরচ ছাড়াই অনলাইনে ডেথ ক্যালকুলেটর অ্যাক্সেস করতে পারেন ৷ এটি তাঁদের সম্ভাব্য জীবনকাল সম্পর্কে তথ্য দেবে৷ তবে কারা এই তথ্য ‘ডুম ক্যালকুলেটর’-এ আপলোড করতে পারবেন, সেই বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে ৷ তাছাড়া গবেষণার বিস্তারিত ফলাফলও এখনও সামনে আসেনি ৷ যদিও এই ‘ডুম ক্যালকুলেটর’ ব্যবহার করা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে ৷ কারণ, এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী যেকোনও মানুষের মনে চাপ তৈরি করতে পারে ৷
আরও পড়ুন: