বয়ঃসন্ধিকাল এমনই একটি কোমল বয়স । যা ইতিবাচক ধ্যানধারণায় ভরপুর অথচ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং প্রভাবশালীও বটে । এই বয়সে, কিশোর—কিশোরীরা তাদের চারপাশে থাকা নানা ধরনের বিষয় নিয়ে পরীক্ষা—নিরীক্ষা করে এবং নিজেদের তথা অন্যদের সম্পর্কে স্বাধীন মতামত তৈরি করার চেষ্টা করে । এই সময়টা অত্যন্ত প্রভাবশালী, যখন কিশোর—কিশোরীরা জানতে, পরীক্ষা—নিরীক্ষা করতে এবং সমকক্ষ সহকর্মীদের অনুসরণ করে । কিশোর—কিশোরীরা সেলিব্রিটি এবং মডেলদের অনুসরণ করতেও পছন্দ করে এবং নিজেদের ঘনিষ্ঠদের মধে্য জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে । এর কারণ, এইসময় তাদের মধ্যে এক ধরনের সম্পৃক্ততা এবং জনপ্রিয়তা অর্জনের তাগিদ দেখা যায় । এই প্রবণতা এই বয়সি কিশোর—কিশোরীদের মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে ।
ইটিভি ভারত সুখীভব, বোরিভলি, মুম্বইয়ের প্রফুলতা সাইকোলজিক্যাল ওয়েলনেস সেন্টারের কেরিয়ার কাউন্সিলর এবং মাইন্ডসাইট, মাইন্ডআর্ট, কফি কনভার্সেশেনস—এর সাইকোলজিস্ট এবং প্লে থেরাপিস্ট মিস. কাজল ইউ দাভে—র সঙ্গে কথা বলেছে এই বিষয়ে কিছু টিপস পাওয়ার জন্য ।
আমরা যদি একজন কিশোর বা কিশোরীকে প্রশ্ন করি, তুমি নিজের বিষয়ে কোন জিনিসটা বদল করতে চাও? দ্রুত উত্তর আসবে, “আমার দেহাবয়ব ।” কেউ চায়, আকর্ষক দেহসৌষ্ঠব, কেউ চায় মেদহীন উদর, বাকিরা চায় ‘পারফেক্ট জ়িরো ফিগার ।’
তাহলে কি এই ধরনের জিনিস চাওয়া ভুল? একেবারেই না । কিন্তু তা পাওয়ার জন্য কতদূর পর্যন্ত কেউ নিজের শরীরের উপর জোর খাটাবে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত । অনেক সময়, আমরা শুনি যে কিশোর—কিশোরীরা ক্র্যাশ ডায়েট অনুসরণ করছে বা নিজের শরীরকে কাঙ্খিত আদল দিতে চরম কঠিন প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, বাস্তবে যা যথাযথভাবে না করলে অপুষ্টি দেখা দিতে পারে বা শরীরে কলাকোষ ছিঁড়ে যেতে পারে । আরও একটি প্রশ্ন উঠছে, সেটা হল ফ্যাড ডায়েট অনুসরণ করার ক্ষেত্রে বা কঠিন থেকে কঠিন শারীরিক কসরত করার ক্ষেত্রে অন্য কেউ কি আমাদের প্রভাবিত করতে পারে? না কি তা আমাদেরই উপর বিবেচ্য? উত্তরটা হল, এটা খুব জরুরি, কীভাবে ব্যক্তি হিসাবে আমরা আমাদের দেখছি এবং নিজেদের সম্পর্কে আমাদের মনে কী অনুভূতি হচ্ছে?
কীভাবে আমরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হব এবং নিজেদের শরীর—স্বাস্থ্য নিয়ে সুখী থাকব, এবার তার উচিত—অনুচিত বিষয়গুলি বোঝা যাক ।
যা যা অনুচিত–
- নিজের প্রিয় বন্ধু, সেলিব্রিটি বা কোনও রোল মডেলের সঙ্গে তুলনা করো না ।
- নিজের পুষ্টিবিদ অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে যথাযথ উপদেশ ছাড়া ক্র্যাশ ডায়েট এবং ‘ফ্যাড’ খাবারদাবার খেও না ।
- নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক কথাবার্তা যেমন ‘আমি মোটা, আমি সুন্দর নই’, বলো না ।
- অভিভাবক হিসেবে, নিজের কিশোর—কিশোরী ছেলে—মেয়েকে কোনও নেতিবাচক নামে ডেকো না । কিংবা এমন কিছু ‘স্টিরিওটিপিক্যাল’ বলো না যেমন ‘তুমি সবসময়ই মোটা থাকবে’ বা ‘কেউ তোমায় পছন্দ করবে না’ অথবা ‘তুমি এটা—সেটা—ওটা করতে পারবে না ।’
- বারবার ক্যালোরি মাপা এবং ওজন দেখা বন্ধ করো। লক্ষ্য রাখো, “তোমার চিন্তাভাবনার বেশিটাই কি সংখ্যা এবং ওজন নিয়ে? সেটা কি তোমাকে নিজের সম্পর্কে আরও শোচনীয় চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করছে?”
যা যা উচিত–
- কেউ বিরক্ত করলে তাতে কান দিও না কারণ শুধু সৌন্দর্য্য দিয়ে তোমার বিচার অসম্ভব । শারীরিক সৌন্দর্যের থেকেও অনেক কিছু এমন আছে, যা একজন মানুষকে আরও বেশি শক্তিশালী এবং আরও সুন্দর করে তোলে । চেষ্টা করো এবং নিজেকে এমন তিনটে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করো, যা তুমি নিজের সম্পর্কে ভালোবাসো ।
- চেষ্টা করো এবং নিজেকে জিজ্ঞাসা করো, তোমার চিন্তাভাবনা শুধুই মতামত না কি সত্য । কারণ তুমি যা মনে করো, তা তোমার বিশ্বাসের উপর অনেকটাই প্রভাব ফেলে । যদি মনে করো, তুমি মোটা বলে তোমায় খারাপ দেখতে, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করো, কোনও মডেল বা সেলিব্রিটি কী শুধুমাত্র ‘স্লিম’—‘ট্রিম’ বলেই বিখ্যাত? না । এমন অনেক মডেল আছেন, যাঁরা নিজেরা যেমন, তেমনটাই তুলে ধরেন এবং তাতেই সুন্দর কাজ করেন । সমকক্ষ সহকর্মীদের নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি করো, যেখানে তুমি যেমন, তেমনই তোমাকে সকলে সমাদর করবে ।
- সমাজের মুখোমুখি হওয়ার আগে আত্মবিশ্বাসী থাকো কারণ সম্ভবত সকলে তোমার প্রতিভা দেখতে আসেন, তোমার সৌন্দর্য দেখতে নয় ।