ওয়েব দুনিয়াকে তাদের দুষ্কর্মের জায়গা আর স্মার্টফোনকে অস্ত্র বানিয়ে সাইবার অপরাধীরা হানাদারি চালাচ্ছে । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সংসদে যে তথ্য দিয়েছে , সেখানে দেখা যাচ্ছে যে 2019 সালে দেশে প্রায় 4 লক্ষ সাইবার হানার ঘটনা ঘটেছে । গতবছর করোনা পরিস্থিতির সময় দেশে সাইবার হানার সংখ্যা 11.5 লক্ষে পৌঁছেছিল । সোফোসের করা একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে , দেশের 52 শতাংশ সংস্থা একবছরের মধ্যে সাইবার হানার মুখে পড়েছে । বিশ্বজুড়ে যেখানে সাইবার অপরাধের শিকারের সংখ্যা 35 কোটি , যেখানে শুধু ভারতেই সংখ্যাটা 13 কোটি ।
দেশে অনলাইন অপরাধ , অনলাইন জুয়া এবং লোন অ্যাপের দাপট হু হু করে বেড়ে চললেও , শাস্তির হার প্রায় নেই বললেই চলে । প্রমাণের অভাবে 50 শতাংশ সাইবার প্রতারণার মামলা প্রাথমিক তদন্তের পরেই বন্ধ হয়ে যায় । গোয়ার মত রাজ্যে গত কয়েক বছরে সাইবার অপরাধের একটি ঘটনাতেও শাস্তি হয়নি । এতেই বোঝা যাচ্ছে যে, কতটা ধূর্তভাবে এই অপরাধীরা আইনের হাত ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে ।
দুষ্কৃতীদের মোকাবিলা করতে অসহায় সাইবার পুলিশ কর্মীরা বলছেন, তাঁরা একটা কেসের সমাধান করার আগেই আরও 20 থেকে 30টা নতুন কেস সামনে চলে আসছে । তাঁদের আক্ষেপ, অনেক সময় অপরাধীকে খুঁজে বের করে ধরা হলেও, টাকা উদ্ধার করা যাচ্ছে না , কারণ আগেই সেটা অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
আরও পড়ুন : সোশাল মিডিয়ায় বলিউডি কায়দায় পোজ় দিয়েছেন ? সাবধান হোন
লোন অ্যাপ হল আরেকটা বড় সমস্যা, যেটার মোকাবিলা করতে পারছে না রাজ্য সরকারগুলো । এই অ্যাপগুলোর তৎপরতা পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না, যার জন্য বহু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে । যতক্ষণ না কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো যৌথভাবে কাজ করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সাইবার অপরাধ কমানো যাবে না ।
করোনা পরিস্থিতিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোমই যখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে , তখন দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ের মতো শহরে ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে । হায়দরাবাদে এ ধরনের ঘটনায় ক্লাস নাইনের একজন পড়ুয়া এক মেডিক্যাল পড়ুয়ার নামে অশ্লীল মেসেজ পাঠাচ্ছিল । ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরির অসংখ্য অভিযোগ সামনে এসেছে । অপরাধীরা আকর্ষণীয় শর্তে ঋণ ও উপহারের লোভ দেখিয়ে তাদের শিকারদের ফাঁদে ফেলে । তথ্য চুরি এবং অনলাইন হয়রানির ক্ষেত্রে শাস্তির সংস্থান রয়েছে , এমন আইনও আছে । কিন্তু কালপ্রিটদের গরাদের পিছনে না পাঠাতে পারলে সেই আইন থেকে কোনও লাভ নেই । আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, ব্রাজিলের মতো দেশে সময় সময় সাইবার অপরাধ রুখতে তাদের রণকৌশলে শান দেয় । এক বছরে 1.25 লক্ষ কোটি টাকা লুঠ করে যে অপরাধীরা, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রশাসন উদাসীন থাকতে পারে?
আমাদের দেশে একজনকে খুন করলে সেই ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় । কিন্তু অসংখ্য জীবনকে যারা ধ্বংস করছে, সেই সাইবার অপরাধীদের ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখানো হচ্ছে । আইনগুলোকে পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্লিখনের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করে তোলা প্রয়োজন ।
আরও পড়ুন : সাইবার হ্যাকিং : অ্যাকাউন্ট থেকে 30 লাখ টাকা গায়েব, কীভাবে ?
বেঙ্গালুরু পুলিশ একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যার মাধ্যমে 112 নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাবার দু’ঘণ্টার মধ্যে প্রতারকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারিতের অ্যাকাউন্টে টাকা ফেরত চলে আসবে । এ ধরনের উদ্যোগ অন্যান্য রাজ্যগুলোতেও নেওয়া উচিত । ফাস্ট ট্র্যাক আদালত তৈরি করে সাইবার অপরাধীদের কঠোরতম সাজার ব্যবস্থা করতে হবে । রাজ্য ও কেন্দ্রকে সহযোগিতার মাধ্যমে এমন প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হবে, যা সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করে ।