কলকাতা ও ঢাকা, 10 সেপ্টেম্বর: 2021 সালের দুর্গাষ্টমী ৷ সেই দিনের বিভীষিকা আজও ভুলতে পারেনি বাংলাদেশ (Bangladesh) ৷ পুজোর আবহে হঠাৎই ছড়িয়ে পড়েছিল অশান্তির আগুন ৷ যার সূত্রপাত হয়েছিল কুমিল্লায় (Cumilla) ৷ বিস্তার ঘটেছিল আরও অন্তত 27টি জেলায় ৷ হিংসার সেই আতঙ্ক পিছনে ফেলে আবারও কোমর বাঁধছেন বাংলাদেশের পুজো উদ্যোক্তারা (Durga Puja 2022) ৷ কট্টরপন্থার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই আবারও দশভূজার আবাহনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে (Bangladesh Durga Puja) ৷ কিন্তু, এবারও কি নির্বিঘ্নে সারা যাবে পুজোর আচার ৷ চিন্তায় রয়েছেন 'বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদ'-এর সদস্যরা ৷ প্রমাদ গুণছেন 'বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ'-এর সঙ্গে যুক্ত সংখ্যালঘু বাংলাদেশিরাও ৷
গত বছরের সন্ত্রাসের কথা মাথায় রেখেই এবার বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন পুজোর আয়োজকরা ৷ শুক্রবার (9 সেপ্টম্বর, 2022) সকাল 10টায় (বাংলাদেশের সময় অনুসারে) ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় ৷ এই বৈঠকে বাংলাদেশের 75টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে 62টি জেলা থেকেই প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন ৷ সেই বৈঠকে মোট 21 দফার একটি নির্দেশিকা প্রস্তাব আকারে পেশ করা হয় এবং গৃহীত হয় ৷ যার মোদ্দা কথা হল, পুজোর সময় সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে সবরকমের সহযোগিতা করা হবে ৷ যাতে গত বছরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে ৷
আরও পড়ুন: পুজোর আগেই বাঙালির পাতে পড়তে চলেছে পদ্মার 'রুপোলি শস্য'
কিন্তু, তারপরও কি সমস্যা সমূলে উৎখাত করা সম্ভব হবে ? এমনটা মনে করছেন না বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদ এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সদস্যরা ৷ বর্তমানে বাংলাদেশে কম-বেশি 32 হাজার দুর্গাপুজো হয় ৷ এবছর সংখ্যাটি আরও হাজার খানেক বাড়তে পারে ৷ সূত্রের খবর, শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina Wazed) সরকার পুজো চলাকালীন নিরাপত্তায় জোর দিলেও অশান্তি এড়ানোর 100 শতাংশ নিশ্চয়তা দেওয়া কার্যত অসম্ভব ৷ তাই সরকারের পরোক্ষ বার্তা, পুজোর আয়োজকরাও যেন মণ্ডপ তৈরির জন্য এমন কোনও স্থান বেছে না নেন, যা সম্পূর্ণ অসুরক্ষিত ৷ এই প্রেক্ষাপটে রবিবারের (11 সেপ্টেম্বর, 2022) একটি বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছেন পুজোর উদ্যোক্তারা ৷ উল্লেখ্য, রবিবার বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে আয়োজিত হতে চলা ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান (Asaduzzaman Khan) ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন পুলিশ, প্রশাসন এবং বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদের প্রতিনিধিরা ৷ মনে করা হচ্ছে, এবারের পুজোর আয়োজন কেমন হবে, নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নেওয়া হবে রবিবারের এই বৈঠকেই ৷
এই প্রেক্ষাপটে ইটিভি ভারত যোগাযোগ করেছিল দুই প্রাক্তন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ৷ এঁদের একজন হলেন পেশায় আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত ৷ তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ৷ আর অন্যজন হলেন বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ ৷ তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাংলাদেশের দুর্গাপুজোয় সাম্প্রদায়িক আক্রমণের ঘটনা 2021 সালেই প্রথম ঘটেনি ৷ এর সূত্রপাত হয়েছিল 1972 সালে ৷ তারপর নানা সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটলেও তা 2021 সালের মতো এত বিকট ও ভয়াবহ ছিল না ৷
তবে, গত শতাব্দীর বাহাত্তরের হামলা (সেটিও ঘটেছিল দুর্গাষ্টমীর দিন) আর হালের একুশের হামলার (Bangladesh Durga Puja Attack) মধ্যে একটা বড় ফারাক রয়েছে ৷ বাহাত্তরের হামলা যারা ঘটিয়েছিল, তারা ছিল একেবারেই পাকিস্তানপন্থী ৷ যারা কখনও চায়নি, পাকিস্তানের থেকে আলাদা হয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করুক ৷ কিন্তু, একুশের হামলার নেপথ্য়ে রয়েছে অতি উগ্র কট্টরপন্থীরা ৷ রানা এবং কাজলের মতো প্রবীণদের আক্ষেপ, বাংলাদেশে ক্রমেই এই কট্টরপন্থীদের প্রভাব বাড়ছে ৷ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে যে দেশ তৈরি হয়েছিল, প্রাথমিক পর্যায়ে সেই ভাবনার সঙ্গে সৌহার্দ্য তৈরি করেছিল সুফিবাদ ৷ সেই সময় বাংলাদেশ যথার্থ অর্থেই উদারতায় বিশ্বাসী ছিল ৷ কিন্তু, পরবর্তীতে ওয়াহাবি এবং সালাফিপন্থীদের অনুপ্রবেশ ঘটায় বাংলাদেশের সমাজ জীবনে বিরাট বদল এসেছে ৷ সাম্প্রদায়িক সৌভ্রাতৃত্বের জায়গায় দখল করে নিচ্ছে চরমপন্থা ৷ আর তার জেরেই ঘটছে দুর্গাপ্রতিমা ভাঙার মতো নিন্দনীয় ঘটনা ৷
এবছরও বাংলাদেশজুড়ে পুজোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে ৷ কিন্তু, ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটেছে ৷ বিষয়টি সরকারের নজরেও আনা হয়েছে ৷ তবে সরকার কী পদক্ষেপ করে, তার আভাস মিলবে রবিবার ৷ তাই আপাতত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সেই বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছেন পুজোর উদ্য়াক্তারা ৷