নয়াদিল্লি, 26 ডিসেম্বর: আশ্রয় চেয়ে আবেদন জানাতে চান 25 জন ভারতীয় ৷ তাদের মধ্যে দুই নাবালক ৷ মানব পাচারের অভিযোগে ফ্রান্সের ভ্যাট্রি বিমানবন্দরে একটি চার্টার্ড বিমান আটকে রাখা হয়েছিল ৷ সেই বিমানের 25 জন যাত্রী ফ্রান্সে থাকতে চান ৷ তাদের আবেদন চার্লস ডে গল বিমানবন্দরের স্পেশাল জোনে পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে ৷ মঙ্গলবার ভোর 4টে কিছু পরে ওই বিমানটি মুম্বইয়ে নামে ৷ তবে ফ্রান্সে আশ্রয় চাইলেই কি তা পাওয়া যায় ? কীভাবে আবেদন করা যায় ? রইল সেই প্রক্রিয়ার বিস্তারিত বিবরণ ৷
অ্যাসাইলাম বা আশ্রয় কী ? কারা এর জন্য আবেদন জানাতে পারে ?
রাষ্ট্রসংঘ জানাচ্ছে, অ্যাসাইলাম বা আশ্রয় এক ধরনের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ৷ কারও মনে হতে পারে, তার নিজের দেশে বা তিনি যে দেশের নাগরিক, সেখানে তিনি সুরক্ষিত নন ৷ সেখানে তাঁর জীবনের ঝুঁকি রয়েছে ৷ আর তার কারণ জাতি, বর্ণ, ধর্ম, নাগরিকত্ব, রাজনৈতিক মতাদর্শ ৷ অথবা কোনও নির্দিষ্ট সামাজিক দলের সদস্য হওয়ার জন্য অথবা সে যুদ্ধ থেকে পালাতে চায় অথবা অমানবিক অবস্থার মুখোমুখি হতে পারে অথবা দেশে ফিরলে চিকিৎসা পাবে না, তিনি ফ্রান্সে আশ্রয় চেয়ে জন্য আবেদন জানাতে পারে ৷
রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থীদের হাইকমিশন জানাচ্ছে, ফ্রান্সে আশ্রয় চেয়ে আবেদন জানাতে গেলে প্রথমে ফার্স্ট রিসেপশন স্ট্রাকচার ফর অ্যাসাইলাম সিকার্স বা এসপিএডিএ-তে বিষয়টি জানাতে হবে ৷ সেখান থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয় ৷ আবেদনকারী যদি প্যারিসে থাকেন, তাহলে তাঁকে ফ্রান্সের অভিবাসন কার্যালয় ফ্রেঞ্চ অফিস ফর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ইন্টেগ্রেশন বা ওএফআইআই-তে ফোনে যোগাযোগ করতে হবে ৷ সেখান থেকে স্থানীয় এসপিএডিএ অফিসের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যাবে ৷
রাষ্ট্রসংঘ আরও জানাচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুরক্ষার আবেদনও জানাতে হবে আশ্রয়প্রার্থীদের ৷ আন্তর্জাতিক সুরক্ষার বিষয়টি দেখাশোনা করে দ্য ফ্রেঞ্চ অফিস অফ দ্য প্রটেকশন অফ রিফিউজিস অ্যান্ড স্টেটলেস পার্সনস বা ওএফপিআরএ ৷ তারা এই আবেদন খতিয়ে দেখবে ৷ আবেদনকারীর ইন্টারভিউ নেবে ৷ ফ্রান্স, ইউরোপ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সুরক্ষা সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ৷
ওএফপিআরএ যদি কারও আবেদন খারিজ করে দেয়, সেক্ষেত্রে আবেদনকারী ন্যাশনাল কোর্ট অফ অ্যাসাইলাম বা সিএনডিএ-তে আবেদন জানাতে পারবেন ৷ এখানে আবেদন জানালে সরাসরি আইনজীবীর সাহায্য পাওয়া যাবে ৷ সিএনডিএ আবেদনকারীর আবেদন বাতিল হওয়ার পক্ষে রায় দিতে পারে ৷ অথবা আবেদনকারীকে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা দিতে পারে ৷
মানব পাচার অভিযোগে আটক ওই বিমানটি আরব আমির শাহি থেকে মধ্য আমেরিকার নিকারাগুয়ায় যাচ্ছিল ৷ তখন বিমানে 303 জন ভারতীয় যাত্রী ছিলেন ৷ 21 ডিসেম্বর জ্বালানি ভরবার জন্য বিমানটি ফ্রান্সের ভ্যাট্রি বিমানবন্দরে নামে ৷ এই সময় বিমানটিতে মানব পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে ৷ তদন্তে নেমে 2 জন যাত্রীকে আটক করে ফ্রান্সের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ৷ সোমবার ওই দু'জনকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৷
এই বিমানটি লিজেন্ড এয়ারলায়েন্সের ৷ এয়ারলায়েন্স কর্তৃপক্ষের তরফে আইনজীবী জানান, কয়েকজন যাত্রী ভারতে যেতে চাইছিলেন না ৷ তাঁরা নিকারাগুয়ায় ঘুরতে যাচ্ছেন এবং তার জন্য টাকাও দিয়েছেন ৷ এই সংস্থার সঙ্গে কোনও মানব পাচারের যোগাযোগ নেই বলে জানান আইনজীবী ৷ মধ্য আমেরিকার নিকারাগুয়া মানব পাচারের একটি জনপ্রিয় জায়গায় ৷ অন্য দেশগুলি থেকে বহু মানুষ দারিদ্রতার কারণে বা সংঘর্ষের ঘটনা এড়াতে এখানে আশ্রয় নেয় ৷ কারণ, বিশ্বের বেশ কিছু দেশের নাগরিকদের নিকারাগুয়ায় থাকতে কোনও ভিসা লাগে না ৷
আরও পড়ুন: