কলকাতা, 11 সেপ্টেম্বর : ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে (World Trade Center) বিমান হানার পর জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দাকে (Al-Qaeda) নিকেশ করার পণ নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States of America) ৷ আফগানিস্তানের (Afghanistan) মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উৎখাত করার পণ নিয়েছিল তারা ৷ সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে গিয়েই আফগান ভূমে সরাসরি তালিবানের (Taliban) সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন মার্কিন সেনারা ৷ লড়াই চলে দীর্ঘ 20 বছর ৷ কিন্তু তাতেই বা লাভ হল কী ? গত 15 অগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল (Kabul) পুনর্দখল করে তালিবান ৷ ফের একবার সেদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয় উগ্রপন্থীদের শাসন ৷ ক্ষমতাচ্যুত হওয়া থেকে ক্ষমতায় ফেরা ৷ কেমন ছিল তালিবানের গত দু’দশকের সফর ? ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিমান হানার 20 বছর পূর্তিতে ফিরে দেখা যাক ফেলে আসা সেইসব ঘটনাক্রম ৷
2001
2001 সালের 11 সেপ্টেম্বর ৷ মার্কিন আধিপত্যের অন্যতম নিশান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা চালায় আল-কায়দা ৷ বিমান হানায় গুঁড়িয়ে যায় পেল্লায় চেহারার ব্যস্ত বাণিজ্যিক টাওয়ার ৷ মৃত্যু হয় অসংখ্য মানুষের ৷ সেই ঘটনার জন্য আল-কায়দার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকেই (Osama bin Laden) দায়ী করে মার্কিন প্রশাসন ৷ সেই সময় আফগানিস্তানে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন ওই জঙ্গি নেতা ৷ তাঁকে নিকেশ করতে 7 অক্টোবর আফগানিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে আল-কায়দার ঘাঁটি লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা চালায় মার্কিন বায়ুসেনা ৷ নভেম্বরে আফগানিস্তানে পৌঁছে যায় প্রায় 1300 মার্কিন সেনা ৷ আর তার পরের মাসেই আফগানিস্তান থেকে তালিবান সরকারের উৎখাত হয় ৷ প্রাণ বাঁচাতে তালিব যোদ্ধারা আশ্রয় নেয় পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় ৷
আরও পড়ুন : Afghanistan development : 500-র বেশি প্রজেক্টের দায়িত্বে ভারত, রাষ্ট্রসঙ্ঘের বৈঠকে বললেন টিএস তিরুমূর্তি
2009
2001 সাল থেকে 2009 সালের মধ্যে লাগাতার আফগানিস্তানে সেনার সংখ্যা বাড়াতে থাকে আমেরিকা ৷ 2009 সালের মধ্যে সেখানে 1 লক্ষেরও বেশি সেনা মোতায়েন করা হয় ৷
2011
আমেরিকার কাছে খবর ছিল, পাকিস্তানের অ্য়াবোটাবাদে আত্মগোপন করে রয়েছেন ওসামা ৷ 2011 সালের 2 মে ওসামার সেই গোপন ডেরায় অভিযান চালায় মার্কিন বাহিনী ৷ তাতে মৃত্যু হয় ওসামার ৷ এরপরই আফগানিস্তান থেকে দফায় দফায় সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা (Barack Obama) ৷
2013
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেও তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জারি ছিল মার্কিন সেনা, গুপ্তচর ও গোয়েন্দাবাহিনীর ৷ 2013 সালে আমেরিকার ড্রোন হানায় প্রাণ যায় পাকিস্তানি তালিবানের (Tehrik-i-Taliban Pakistan) প্রথম সারির তিন নেতার ৷ তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হাকিমউল্লা মেহসুদ (Hakimullah Mehsud) ৷
2017
2013 থেকে 2017 সালের মধ্যে দফায় দফায় আফগানিস্তান থেকে সেনা অপসারণের প্রক্রিয়া চালিয়ে যায় আমেরিকা ৷ কখনও আবার তা বাড়ানোও হয় ৷ 2015 সালে আফগান ভূমে মার্কিন সেনার সংখ্যা কমিয়ে করা হয় 9 হাজার 800-র কাছাকাছি ৷ কিন্তু, 2017 সালে অগস্ট মাসে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে প্রায় 14 হাজার করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ৷
2018
ট্রাম্প জমানাতেই তালিবানের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করে মার্কিন প্রশাসন ৷ 2018 সালে আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন কূটনীতিক জালমাই খলিলজাদকে মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব দেন ট্রাম্প ৷ আর তথাকথিত এই আলোচনার রাস্তা প্রশস্ত হতেই আফগানিস্তানে ফের একবার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে তালিবান ৷
আরও পড়ুন : Blinken to Taliban : আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করতে হবে, তালিবানকে কড়া বার্তা মার্কিন বিদেশ সচিবের
2019
আলোচনার মাঝেই আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালিবান ৷ 2019 সালের 9 সেপ্টেম্বরের সেই ঘটনায় প্রাণ যায় এক মার্কিন সেনার ৷ তার জেরে সমঝোতার রাস্তা থেকে সরে আসেন ট্রাম্প ৷
2020
2020 সালের 29 ফেব্রুয়ারি কাতারে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে আমেরিকা ও তালিবান ৷ স্থির হয়, 2021 সালের 1 মে-র মধ্যেই আফগানিস্তানের মাটি থেকে সরে যাবে মার্কিন সেনা ৷ বদলে তালিবানও তাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ একেবারে বন্ধ করে দেবে ৷ এই সময়ে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন আশরফ গনি (Ashraf Ghani) ৷
2021
তথাকথিত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকেই তালিবানের দাপাদাপি বাড়তে শুরু করে ৷ মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আগেই ক্ষমতা হারাতে শুরু করে গনি প্রশাসন ৷ ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয় যায়, আফগানিস্তানের সঙ্গে যাই হোক না কেন, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden) ৷ তিনি শুধুমাত্র মার্কিন নাগরিক ও মার্কিন সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়েছেন ৷ এরপরই বোঝা যায়, একদিন যে তালিবানকে মাত্র একমাসের মধ্যে উৎখাত করেছিল মার্কিন সেনা, তারা আবারও স্বমহিমায় ফিরে এসেছে আফগানিস্তানে ৷ ক্রমে গোটা দেশটারই দখল নিয়ে নেয় তালিব যোদ্ধারা ৷ পঞ্জশির দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও তাতে শেষ রক্ষা হয়নি ৷ শরিয়তি আইন পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে তালিবান ৷ তাতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে কুখ্যাত জঙ্গি নেতাদের ৷