মেটজ় (ফ্রান্স), 1 মে : পড়াশোনার সুবাদে ইউরোপের কয়েকটি দেশে থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছে ৷ বর্তমানে আমি ফ্রান্সের বাসিন্দা ৷ আমি যেখানে থাকি সেই এলাকা জনবহুল ৷ এখানে প্রায় সমস্ত প্রয়োজনীয় দোকান রয়েছে ৷ মিনি স্টোর রয়েছে সপিং মলও ৷ অন্যান্য সময় ফুটপাত চাপা ভিড় না থাকলেও রাস্তায় মানুষে আনাগোনা লক্ষ করা যায় ৷ কিন্তু কোরোনা আতঙ্কে এখন রাস্তাঘাট জনহীন ৷ 16 মার্চ থেকে ফ্রান্সের সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে ৷ মুদির দোকান, ওষুধের দোকান সমস্ত খোলা রয়েছে ৷ কিন্তু কোথাও মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার পাওয়া যাচ্ছে না ৷ খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বেরচ্ছেন না এখানে ৷ বাড়ি থেকে বেরলে সঙ্গে নিয়ে বেরতে হবে প্রয়োজনীয় নথি ৷ থাকবে হবে উপযুক্ত পরিচয় প্রমাণ পত্র ৷
2019 সাল থেকে ফ্রান্সের লরেন্সের মেটজ় শহরে আমি রয়েছি ৷ আমার জন্ম কলকাতায় ৷ কলকাতা থেকে B.Tech কমপ্লিট করেছি ৷ তার পর জার্মানিতে মাস্টারস ৷ কিছুদিন পর্তুগাল ও সুইডেনেও কাটিয়েছি ৷ PHD-এর জন্য 2019সাল থেকে আমি ফ্রান্সে মেটজ় শহরে আছি ৷ ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অফ লরেন্সে সোলার সেলের উপর গবেষণা করছি ৷ মেটজ় শহরটা খুব সুন্দর ৷ অনেকটা সবুজে ঘেরা ৷ জনসংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে পরিবেশ অনেকটাই শান্ত ৷
দেড় বছরের বেশি সময় থেকে ফ্রান্সে রয়েছেন সৌরভ বসু ৷ একার সংসার ৷ দেশের থেকে বহু দূরে পড়াশোনা, বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা নিয়ে ভালোই দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি ৷ কিন্তু কেমন যেন সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল ৷ মার্চের মাঝামাঝি থেকে ফ্রান্সের পরিস্থিতি যে দিন দিন আরও খারাপের দিকে অগ্রসর হচ্ছে তা জানান দিতে শুরু করে ৷ সৌরভবাবু জানিয়েছেন প্রথম দিকে কোরোনা ভাইরাসকে অতটাও গুরুত্ব দেয়নি সেখানকার সাধারণ মানুষ৷ সেখানের সংবাদ মাধ্যমে কোরোনা ভাইরাসকে সাধারণ ফ্লু বলে ব্যক্ষ্যা করা হয় ৷ কিন্তু এই ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল তার বোঝা যায় কয়েকদিনের মধ্যেই ৷ মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকল৷ তারপরই নড়ে চড়ে বসে ফ্রান্স প্রশাসন ৷ 16 মার্চ ঘোষণা করা হয় লকডাউন ৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত মৃত্যুর হার অনেক বেশি থাকায় আগামী মার্চের 11 তারিখ পর্যন্ত লকডাউন জারি রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে ফ্রান্স প্রশাসন ৷
সৌরভবাবু জানান সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার চালাচ্ছে সেখানের প্রশাসন ৷ তবে মানুষ সর্তকতা অবলম্বন করছে ৷ রাস্তায় দলবদ্ধ ভাবে কাউকে বেরতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে 135 ইউরো পর্যন্ত ফাইন করতে পারে পুলিশ ৷ প্রতিবছর ফ্রান্সের ইস্টারের সময় বিভিন্ন শোভাযাত্রা হয় ৷ কিন্তু এই বছর রাস্তায় তেমনটা দেখা যায়নি ৷ কবে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, কবে স্বাধীনভাবে রাস্তায় বের হতে পারব জানিনা ৷ এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় মা-বাবা রয়েছেন ৷ শুনছি, কলকাতার বিভিন্ন জায়গাকেও রেড জ়োন চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ কলকাতার পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো না ৷ বোন জার্মানিতে রয়েছে ৷ পরিবারের সকলের কথা ভেবেও একটু চিন্তিত ৷ চাইলেও বোনের কাছে যেতে পারছি না ৷ ইউরোপের সমস্ত সীমান্ত বন্ধ রয়েছে ৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছি ৷