ETV Bharat / international

বায়ার্নের জার্সি গায়ে আবার বেরোবে ছেলেটা, আশায় চুঁচুড়ার গৌরব

কোরোনার প্রকোপ যত বেড়েছে, ততই যেন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে শহরটা । শহরটা সেই একই আছে, বাড়িঘর, রাস্তা, সবই একইরকম, কিন্তু যেন বড্ড প্রাণহীন । সুনসান রাস্তা । গাড়ির শব্দ নেই । পড়ুয়াদের ভিড় নেই ।

author img

By

Published : Apr 14, 2020, 9:18 PM IST

ছবি
ছবি

ক্যাসেল, 14 এপ্রিল : এই তো সেদিনের কথা । রাস্তার পাশের ওই রেস্তরাঁয় সারাদিনই ভিড় লেগে থাকত । রেস্তরাঁর ভিতর টেলিভিশনে চলত বায়ার্ন বা ডর্টমুণ্ডের কোনও ফুটবল ম্যাচ । ক্যাসেলে নিজের ঘরের জানলা দিয়ে বাইরেটা দেখতে দেখতে এইসব চিন্তাই ঘোরাফেরা করছিল গৌরবের মনে । গৌরব মানে গৌরব বন্দ্যোপাধ্যায় । আজ প্রায় সাড়ে ছয় বছর হল চুঁচুড়ার মায়া কাটিয়ে এসেছেন । গবেষণার কাজে এখন থাকেন জার্মানির ক্যাসেল শহরে । বলতে গেলে ক্যাসেলেই এখন তাঁর 'সেকেন্ড হোম' ।

কিন্তু এখনকার ক্যাসেল শহরটা যেন দিন দিন বড্ড অচেনা হয়ে উঠছে তাঁর কাছে । যে ক্যাসেলকে বিগত বছরগুলিতে একটু একটু করে ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন তিনি, এই শহর সেই ক্যাসেল নয় । নেই সেই চেনা প্রাণবন্ত ভাব । নেই চেনা শহুরে গতি । রাস্তার পাশে সেই রেস্তোঁরাটাও বন্ধ । দেখা নেই বায়ার্নের জার্সি পরা সেই ছেলেটারও । কোনও এক অজানা আতঙ্ক যেন গ্রাস করেছে গোটা শহরটাকে । কোরোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই সবাই আতঙ্কে গৃহবন্দী ।

ক্যাসেল শহরে কেমন আছেন গৌরব

ভৌগোলিকভাবে ক্যাসেল শহরটা জার্মানির একদম কেন্দ্রে । শহরটা অনেকটা পার্বত্য উপত্যকার মত । চারিদিকেই ছোট ছোট পাহাড় । ঘনসবুজ বন, অসংখ্য ছোটো ছোটো হ্রদ । আবার একই সঙ্গে রয়েছে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা । এখানে রয়েছে ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির প্রয়োগ বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র ফর্ম হোয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউট । বিশ্বের অন্যতম সেরা গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ফক্সভাগেন থেকে শুরু করে জার্মানি বৃহত্তম সোলার ইনভার্টার প্রস্তুতকারী সংস্থা, সবকিছুরই দপ্তর রয়েছে এখানে । প্রকৃতি আর প্রযুক্তি এখানে হাত ধরাধরি করে চলে ।

Lockdown
ক্যাসেল শহরের স্টল

কিন্তু কোরোনার প্রকোপ যত বেড়েছে, ততই যেন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে শহরটা । শহরটা সেই একই আছে, বাড়িঘর, রাস্তা, সবই একইরকম, কিন্তু যেন বড্ড প্রাণহীন । সুনসান রাস্তা । গাড়ির শব্দ নেই । পড়ুয়াদের ভিড় নেই । 11 এপ্রিল পর্যন্ত ক্যাসেল শহর ও শহরতলি মিলিয়ে মোট 344 জনের শরীরে মিলেছে ভাইরাসের হদিস । মারা গেছে 11 জন । সরকারিভাবে কোনও লকডাউন নেই ক্যাসেলে । কিন্তু সামাজিক মেলামেশার উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা । আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বেরোচ্ছে না । হাতে গোনা যে অল্প ক'জন বেরোচ্ছে, তারাও সবাই সামাজিক দূরত্ব মেনেই সব কাজ করছে । স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সবক্ষেত্রেই চলছে অনলাইন ক্লাস । পরীক্ষাব্যবস্থা সবই স্থগিত রাখা হয়েছে ।

Lockdown
সুপার মার্কেটে সামাজিক দূরত্ব

এদিকে প্যানডেমিকের প্রকোপ শুরু হতেই, বেড়েছে প্যানিক শপিং । আতঙ্কে মানুষ বেশি বেশি করে জিনিস কিনে ঘরে মজুত করেছে শুরু করেছে । বাজারে মাস্কের আকাল । স্যানিটাইজ়ারও নেই বাজারে । যদিও গৌরবের কাছে আগে থেকেই স্যানিটাইজ়ার কেনা ছিল । কিন্তু নেই মাস্ক । অনলাইনে অর্ডার দিয়েছেন । কিন্তু তা হাতে এসে পৌঁছাতে এখনও একমাস বাকি । গৌরবকে প্রশ্ন করাতে বলেন, সুপার মার্কেটে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস চাল, তেল, নুডলস ,পাস্তা ও টয়লেট পেপার প্রচুর পরিমাণে কিনছিল সবাই । বলতে দ্বিধা নেই, আমিও ছিলাম সেই দলেই ।" এরপর থেকেই প্রশাসনের তরফে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উপর রেশনিং চালু করেছে । যাতে কেউ মজুত করতে না পারে । তাই এখন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলেই এখন সমানভাবে জিনিস কেনার সুযোগ পাচ্ছে । আর দামও বাড়েনি কোনও কিছুর । তবে সব কিছুই চলছে সামাজিক দূরত্ব মেনে ।

Lockdown
ক্যাসেল থেকে সূর্যাস্ত

ক্যাসেলে এখন বসন্ত এসে গেছে । রোদ ঝলমলে দিন । চারিদিক টিউলিপ আর নানা নাম না জানা ফুলের সমারোহ । এমন দিনে অন্যান্য বছরে মানুষ পার্কে ও মাঠে যেত চড়ুইভাতি করতে । কিন্তু এখন সবাই বন্ধ ঘরে দিন কাটাচ্ছে । কিছুদিন আগেই ইস্টার গেল । বিগত বছরগুলিতে ইস্টারের দিনে জার্মান বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠতেন গৌরব । কিন্তু এবার শুধুই ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে বসেই সময় কাটিয়েছেন তিনি ।

আর এই একাকীত্বের মধ্যে চুঁচুড়ার বাড়ির কথা আরও বেশি করে মনে পড়ছে । বাড়িতে মা রয়েছেন । বয়স ষাটের উপরে । একাধিক রিপোর্টে বলছে, ষাটোর্ধ্ব মানুষদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণের প্রবণতা বেশি । তাই আরও বেশি করে বাড়ির জন্য চিন্তা হচ্ছে গৌরবের । বাড়িতে তাই ফোন করাটাও বেড়েছে । ভিডিয়ো কলে প্রতিদিনই মায়ের সঙ্গে কথা হচ্ছে । কিন্তু তাও যেন চিন্তা কমছে না গৌরবের ।

Lockdown
একটুকরো ক্যাসেল শহর

আশা এখন শুধু একটাই গৌরবের । আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে । বায়ার্নের জার্সি গায়ে সেই ছেলেটা আবার বেরোবে রাস্তায় । আবার ওই দোকানের টেলিভিশনটায় ফুটবল দেখতে ভিড় জমাবে মানুষ । কিন্তু কবে? ভাবতে ভাবতেই নিজের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন গৌরব ।

ক্যাসেল, 14 এপ্রিল : এই তো সেদিনের কথা । রাস্তার পাশের ওই রেস্তরাঁয় সারাদিনই ভিড় লেগে থাকত । রেস্তরাঁর ভিতর টেলিভিশনে চলত বায়ার্ন বা ডর্টমুণ্ডের কোনও ফুটবল ম্যাচ । ক্যাসেলে নিজের ঘরের জানলা দিয়ে বাইরেটা দেখতে দেখতে এইসব চিন্তাই ঘোরাফেরা করছিল গৌরবের মনে । গৌরব মানে গৌরব বন্দ্যোপাধ্যায় । আজ প্রায় সাড়ে ছয় বছর হল চুঁচুড়ার মায়া কাটিয়ে এসেছেন । গবেষণার কাজে এখন থাকেন জার্মানির ক্যাসেল শহরে । বলতে গেলে ক্যাসেলেই এখন তাঁর 'সেকেন্ড হোম' ।

কিন্তু এখনকার ক্যাসেল শহরটা যেন দিন দিন বড্ড অচেনা হয়ে উঠছে তাঁর কাছে । যে ক্যাসেলকে বিগত বছরগুলিতে একটু একটু করে ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন তিনি, এই শহর সেই ক্যাসেল নয় । নেই সেই চেনা প্রাণবন্ত ভাব । নেই চেনা শহুরে গতি । রাস্তার পাশে সেই রেস্তোঁরাটাও বন্ধ । দেখা নেই বায়ার্নের জার্সি পরা সেই ছেলেটারও । কোনও এক অজানা আতঙ্ক যেন গ্রাস করেছে গোটা শহরটাকে । কোরোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই সবাই আতঙ্কে গৃহবন্দী ।

ক্যাসেল শহরে কেমন আছেন গৌরব

ভৌগোলিকভাবে ক্যাসেল শহরটা জার্মানির একদম কেন্দ্রে । শহরটা অনেকটা পার্বত্য উপত্যকার মত । চারিদিকেই ছোট ছোট পাহাড় । ঘনসবুজ বন, অসংখ্য ছোটো ছোটো হ্রদ । আবার একই সঙ্গে রয়েছে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা । এখানে রয়েছে ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির প্রয়োগ বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র ফর্ম হোয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউট । বিশ্বের অন্যতম সেরা গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ফক্সভাগেন থেকে শুরু করে জার্মানি বৃহত্তম সোলার ইনভার্টার প্রস্তুতকারী সংস্থা, সবকিছুরই দপ্তর রয়েছে এখানে । প্রকৃতি আর প্রযুক্তি এখানে হাত ধরাধরি করে চলে ।

Lockdown
ক্যাসেল শহরের স্টল

কিন্তু কোরোনার প্রকোপ যত বেড়েছে, ততই যেন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে শহরটা । শহরটা সেই একই আছে, বাড়িঘর, রাস্তা, সবই একইরকম, কিন্তু যেন বড্ড প্রাণহীন । সুনসান রাস্তা । গাড়ির শব্দ নেই । পড়ুয়াদের ভিড় নেই । 11 এপ্রিল পর্যন্ত ক্যাসেল শহর ও শহরতলি মিলিয়ে মোট 344 জনের শরীরে মিলেছে ভাইরাসের হদিস । মারা গেছে 11 জন । সরকারিভাবে কোনও লকডাউন নেই ক্যাসেলে । কিন্তু সামাজিক মেলামেশার উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা । আতঙ্কে মানুষ ঘর থেকে বেরোচ্ছে না । হাতে গোনা যে অল্প ক'জন বেরোচ্ছে, তারাও সবাই সামাজিক দূরত্ব মেনেই সব কাজ করছে । স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সবক্ষেত্রেই চলছে অনলাইন ক্লাস । পরীক্ষাব্যবস্থা সবই স্থগিত রাখা হয়েছে ।

Lockdown
সুপার মার্কেটে সামাজিক দূরত্ব

এদিকে প্যানডেমিকের প্রকোপ শুরু হতেই, বেড়েছে প্যানিক শপিং । আতঙ্কে মানুষ বেশি বেশি করে জিনিস কিনে ঘরে মজুত করেছে শুরু করেছে । বাজারে মাস্কের আকাল । স্যানিটাইজ়ারও নেই বাজারে । যদিও গৌরবের কাছে আগে থেকেই স্যানিটাইজ়ার কেনা ছিল । কিন্তু নেই মাস্ক । অনলাইনে অর্ডার দিয়েছেন । কিন্তু তা হাতে এসে পৌঁছাতে এখনও একমাস বাকি । গৌরবকে প্রশ্ন করাতে বলেন, সুপার মার্কেটে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস চাল, তেল, নুডলস ,পাস্তা ও টয়লেট পেপার প্রচুর পরিমাণে কিনছিল সবাই । বলতে দ্বিধা নেই, আমিও ছিলাম সেই দলেই ।" এরপর থেকেই প্রশাসনের তরফে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উপর রেশনিং চালু করেছে । যাতে কেউ মজুত করতে না পারে । তাই এখন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলেই এখন সমানভাবে জিনিস কেনার সুযোগ পাচ্ছে । আর দামও বাড়েনি কোনও কিছুর । তবে সব কিছুই চলছে সামাজিক দূরত্ব মেনে ।

Lockdown
ক্যাসেল থেকে সূর্যাস্ত

ক্যাসেলে এখন বসন্ত এসে গেছে । রোদ ঝলমলে দিন । চারিদিক টিউলিপ আর নানা নাম না জানা ফুলের সমারোহ । এমন দিনে অন্যান্য বছরে মানুষ পার্কে ও মাঠে যেত চড়ুইভাতি করতে । কিন্তু এখন সবাই বন্ধ ঘরে দিন কাটাচ্ছে । কিছুদিন আগেই ইস্টার গেল । বিগত বছরগুলিতে ইস্টারের দিনে জার্মান বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠতেন গৌরব । কিন্তু এবার শুধুই ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে বসেই সময় কাটিয়েছেন তিনি ।

আর এই একাকীত্বের মধ্যে চুঁচুড়ার বাড়ির কথা আরও বেশি করে মনে পড়ছে । বাড়িতে মা রয়েছেন । বয়স ষাটের উপরে । একাধিক রিপোর্টে বলছে, ষাটোর্ধ্ব মানুষদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণের প্রবণতা বেশি । তাই আরও বেশি করে বাড়ির জন্য চিন্তা হচ্ছে গৌরবের । বাড়িতে তাই ফোন করাটাও বেড়েছে । ভিডিয়ো কলে প্রতিদিনই মায়ের সঙ্গে কথা হচ্ছে । কিন্তু তাও যেন চিন্তা কমছে না গৌরবের ।

Lockdown
একটুকরো ক্যাসেল শহর

আশা এখন শুধু একটাই গৌরবের । আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে । বায়ার্নের জার্সি গায়ে সেই ছেলেটা আবার বেরোবে রাস্তায় । আবার ওই দোকানের টেলিভিশনটায় ফুটবল দেখতে ভিড় জমাবে মানুষ । কিন্তু কবে? ভাবতে ভাবতেই নিজের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন গৌরব ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.