ETV Bharat / international

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ বিরতি বেশিদিন স্থায়ী হবে ? - ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ বিরতি চুক্তির পুনর্নবীকরণ কার্যকর হয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি । এই চুক্তি কি দীর্ঘমেয়াদি হবে ? এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন বিলাল ভাট ।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি চুক্তির পুনর্নবীকরণ
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি চুক্তির পুনর্নবীকরণ
author img

By

Published : Mar 3, 2021, 1:51 PM IST

সংঘর্ষ বিরতি মেনে চলার ব্যাপারে একমত হয়ে, ২০০৩ সালের নভেম্বরে ভারত ও পাকিস্তান একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল । হুরিয়ত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা ব্যবধান এবং চিন সীমান্তে সেনা সরানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে এই চুক্তির তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ।

২০১৪ সালে বিজেপি সরকার গঠনের পর থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত, সীমান্তে সংঘাতের কোনও বিরাম নেই । এটা আরও বাড়ে, যখন একটা দেশ কোনও বিবৃতি দেয়, এবং প্রতিবেশী দেশের নীতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে । ৫ অগাস্ট সংসদে নেওয়া সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের মনঃপূত হয়নি এবং মাসের পর মাস ধরে তাদের বন্দুক ও মর্টারের সামনে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে ।

সংঘর্ষ বিরতি রেখাকে নিয়ন্ত্রণ রেখাও বলা হয়, যা জম্মু ও কাশ্মীরকে দুভাগ করেছে । একটা আমাদের দিকে, আরেকটা পাকিস্তান দখল করে রয়েছে । এই এলাকা সবসময়ই উত্তপ্ত থাকে, কারণ সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনকে একে অপরের দিকে রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও দেখা হয় । যদি এক পক্ষকে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে অসন্তোষ জানাতে হয়, তাহলে সেই মনোভাব প্রকাশ করতে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে ।

অস্ত্ররা নীরব হয়েছে সংঘর্ষ বিরতি চুক্তির পুনর্নবীকরণের পর, যা কার্যকর হয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি । নিয়ন্ত্রণ রেখায় নিস্তব্ধতা অশুভ ইঙ্গিতও দিতে পারে, কারণ এটা বেশিদিন থাকবে না, আর হঠাৎ করে শেলিং এবং ফায়ারিংয়ের শব্দে সবাই হকচকিয়েও যেতে পারেন । বরফ গলার সময় অথবা তুষারপাতের আগের সময়টা সন্ত্রাসবাদী হানাদারদের সামনে রাস্তা খুলে দেয় । জঙ্গিরা ততক্ষণ জম্মু-কাশ্মীরে ঢুকতে পারে না, যতক্ষণ না ভারত-পাকিস্তানের ফরওয়ার্ড পোস্টগুলোর মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয় । এটাও এখন সবাই জানে যে জঙ্গিরা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে তখনই, যখন তাদের সুবিধা করে দিতে ভারতীয় সেনাকে ব্যস্ত রাখতে কভার ফায়ারিং করা হয় ।

আরও পড়ুন : কৃতী পড়ুয়াদের জন্য় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দরজা খোলা : প্রধানমন্ত্রী

কিন্তু এই সদ্য হওয়া চুক্তি অনুপ্রবেশের চেষ্টার ক্ষেত্রে বড়সড় ফারাক গড়ে দিতে পারে । বিশেষ করে সেনাপ্রধান নারাভানের ২৫ ফেব্রুয়ারির বিবৃতিতে দেখা যাচ্ছে, পিছনের দরজার কূটনীতির মাধ্যমে দুদেশই সন্ত্রাসকে শেষ করার বা যথাসম্ভব কমিয়ে আনার ব্যাপারে একমত হয়েছে । সেনাপ্রধান এই সংঘর্ষ বিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে জঙ্গিদমন অভিযান অব্যাহত থাকবে, অর্থাৎ তাদের ক্ষেত্রে কোনও শিথিলতা হবে না । সংঘর্ষ বিরতি রেখাই জঙ্গিদের ঢোকা ও বেরনোর পথ করে দেয়, আর যদি সেখানে গুলি বিনিময় বন্ধ হয়, সেক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীরা আর কোনও সুবিধা পাবে না ।

এটা পাকিস্তানের কাশ্মীর নীতিতেও বড়সড় পরিবর্তন, যাকে তারা সবসময়ই তাদের মূল ইস্যু হিসেবে দেখিয়ে এসেছে । ইউনাইটেড জেহাদ কাউন্সিলের প্রধান ইউসুফ শাহ ওরফে সৈয়দ সালাউদ্দিনের মতো জঙ্গি নেতাদের সামনে কঠিন সময় আসতে চলেছে । সৈয়দ সালাউদ্দিনের মতবাদের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক, হুরিয়ত প্রধান সৈয়দ আলি শাহ গিলানি চুক্তি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায় তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে । গিলানি এই সংঘর্ষবিরতি নিয়ে পাকিস্তান সরকারকে চিঠি লিখে যে সমালোচনা এবং সন্দেহপ্রকাশ করেছেন, তাকে উড়িয়ে দিয়েছে সেদেশের কাশ্মীর বিষয়ক বিশেষ সংসদীয় কমিটি ।

এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকা থেকে বেরিয়ে আসাটাই এখন পাকিস্তানের প্রধান লক্ষ্য, এবং তার জন্য তাদের প্রাণপণে নিয়ম অনুসরণ করতেই হবে । সীমান্ত সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসকে মদত দেওয়াটা এই নিয়মবিধির সঙ্গে খাপ খায় না । কাশ্মীরের সন্ত্রাসই অন্যতম কারণ, যে জন্য পাকিস্তান ধূসর তালিকা থেকে বেরোতে পারছে না । এই সংঘর্ষবিরতি পাকিস্তানকে নানা দিক থেকে সুবিধা দেবে ।

আরও পড়ুন : ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ সুপ্রিম কোর্টের

এফএটিএফ ছাড়াও, সিইপিসি-তে কোনওরকম শোরগোল ছাড়া কাজ করলে, তাতেও উপকৃত হবে পাকিস্তান এবং চিন । ভারত সেই গিলগিট-বালটিস্তান নিয়ে বেশি কথা বলতে নাও পারে, যাকে সংবিধান সংশোধন করে পাকিস্তান তাদের পঞ্চম প্রভিন্স করে নিয়েছে । এই চুক্তির ফলে চিন ও তাদের বিরাট বিআরআই প্রকল্পকে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে ।

উল্টোদিকে ভারতও জম্মু-কাশ্মীরে সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে, কারণ চুক্তি পুনর্নবীকরণ হওয়ায় সীমান্তের ওপার থেকে কোনও বাধা আসবে না । এখন ভারতের কাছে চ্যালেঞ্জ হল মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলোকে ম্যানেজ করা, উল্টোদিকে যেভাবে পাকিস্তানকে ম্যানেজ করতে হবে বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোকে । একদিকে দেশের মাটিতে সন্ত্রাসের মাথাচাড়া, অন্যদিকে মূল ধারার রাজনৈতিকদলগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সুরে কথা বলা – এগুলো যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চলেছে । এটা দেখা বেশ চিত্তাকর্ষক বিষয় হবে, যে মোদি সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব চালিয়ে কিনা, বা পাকিস্তানের অবস্থান তাদের নিষ্ক্রিয় অবস্থানে রাখতে পারে কিনা ।

সংঘর্ষ বিরতি মেনে চলার ব্যাপারে একমত হয়ে, ২০০৩ সালের নভেম্বরে ভারত ও পাকিস্তান একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল । হুরিয়ত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা ব্যবধান এবং চিন সীমান্তে সেনা সরানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে এই চুক্তির তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ।

২০১৪ সালে বিজেপি সরকার গঠনের পর থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত, সীমান্তে সংঘাতের কোনও বিরাম নেই । এটা আরও বাড়ে, যখন একটা দেশ কোনও বিবৃতি দেয়, এবং প্রতিবেশী দেশের নীতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে । ৫ অগাস্ট সংসদে নেওয়া সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের মনঃপূত হয়নি এবং মাসের পর মাস ধরে তাদের বন্দুক ও মর্টারের সামনে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে ।

সংঘর্ষ বিরতি রেখাকে নিয়ন্ত্রণ রেখাও বলা হয়, যা জম্মু ও কাশ্মীরকে দুভাগ করেছে । একটা আমাদের দিকে, আরেকটা পাকিস্তান দখল করে রয়েছে । এই এলাকা সবসময়ই উত্তপ্ত থাকে, কারণ সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনকে একে অপরের দিকে রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও দেখা হয় । যদি এক পক্ষকে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে অসন্তোষ জানাতে হয়, তাহলে সেই মনোভাব প্রকাশ করতে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে ।

অস্ত্ররা নীরব হয়েছে সংঘর্ষ বিরতি চুক্তির পুনর্নবীকরণের পর, যা কার্যকর হয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি । নিয়ন্ত্রণ রেখায় নিস্তব্ধতা অশুভ ইঙ্গিতও দিতে পারে, কারণ এটা বেশিদিন থাকবে না, আর হঠাৎ করে শেলিং এবং ফায়ারিংয়ের শব্দে সবাই হকচকিয়েও যেতে পারেন । বরফ গলার সময় অথবা তুষারপাতের আগের সময়টা সন্ত্রাসবাদী হানাদারদের সামনে রাস্তা খুলে দেয় । জঙ্গিরা ততক্ষণ জম্মু-কাশ্মীরে ঢুকতে পারে না, যতক্ষণ না ভারত-পাকিস্তানের ফরওয়ার্ড পোস্টগুলোর মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয় । এটাও এখন সবাই জানে যে জঙ্গিরা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে তখনই, যখন তাদের সুবিধা করে দিতে ভারতীয় সেনাকে ব্যস্ত রাখতে কভার ফায়ারিং করা হয় ।

আরও পড়ুন : কৃতী পড়ুয়াদের জন্য় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দরজা খোলা : প্রধানমন্ত্রী

কিন্তু এই সদ্য হওয়া চুক্তি অনুপ্রবেশের চেষ্টার ক্ষেত্রে বড়সড় ফারাক গড়ে দিতে পারে । বিশেষ করে সেনাপ্রধান নারাভানের ২৫ ফেব্রুয়ারির বিবৃতিতে দেখা যাচ্ছে, পিছনের দরজার কূটনীতির মাধ্যমে দুদেশই সন্ত্রাসকে শেষ করার বা যথাসম্ভব কমিয়ে আনার ব্যাপারে একমত হয়েছে । সেনাপ্রধান এই সংঘর্ষ বিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে জঙ্গিদমন অভিযান অব্যাহত থাকবে, অর্থাৎ তাদের ক্ষেত্রে কোনও শিথিলতা হবে না । সংঘর্ষ বিরতি রেখাই জঙ্গিদের ঢোকা ও বেরনোর পথ করে দেয়, আর যদি সেখানে গুলি বিনিময় বন্ধ হয়, সেক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারীরা আর কোনও সুবিধা পাবে না ।

এটা পাকিস্তানের কাশ্মীর নীতিতেও বড়সড় পরিবর্তন, যাকে তারা সবসময়ই তাদের মূল ইস্যু হিসেবে দেখিয়ে এসেছে । ইউনাইটেড জেহাদ কাউন্সিলের প্রধান ইউসুফ শাহ ওরফে সৈয়দ সালাউদ্দিনের মতো জঙ্গি নেতাদের সামনে কঠিন সময় আসতে চলেছে । সৈয়দ সালাউদ্দিনের মতবাদের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক, হুরিয়ত প্রধান সৈয়দ আলি শাহ গিলানি চুক্তি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায় তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে । গিলানি এই সংঘর্ষবিরতি নিয়ে পাকিস্তান সরকারকে চিঠি লিখে যে সমালোচনা এবং সন্দেহপ্রকাশ করেছেন, তাকে উড়িয়ে দিয়েছে সেদেশের কাশ্মীর বিষয়ক বিশেষ সংসদীয় কমিটি ।

এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকা থেকে বেরিয়ে আসাটাই এখন পাকিস্তানের প্রধান লক্ষ্য, এবং তার জন্য তাদের প্রাণপণে নিয়ম অনুসরণ করতেই হবে । সীমান্ত সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসকে মদত দেওয়াটা এই নিয়মবিধির সঙ্গে খাপ খায় না । কাশ্মীরের সন্ত্রাসই অন্যতম কারণ, যে জন্য পাকিস্তান ধূসর তালিকা থেকে বেরোতে পারছে না । এই সংঘর্ষবিরতি পাকিস্তানকে নানা দিক থেকে সুবিধা দেবে ।

আরও পড়ুন : ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ সুপ্রিম কোর্টের

এফএটিএফ ছাড়াও, সিইপিসি-তে কোনওরকম শোরগোল ছাড়া কাজ করলে, তাতেও উপকৃত হবে পাকিস্তান এবং চিন । ভারত সেই গিলগিট-বালটিস্তান নিয়ে বেশি কথা বলতে নাও পারে, যাকে সংবিধান সংশোধন করে পাকিস্তান তাদের পঞ্চম প্রভিন্স করে নিয়েছে । এই চুক্তির ফলে চিন ও তাদের বিরাট বিআরআই প্রকল্পকে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে ।

উল্টোদিকে ভারতও জম্মু-কাশ্মীরে সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে, কারণ চুক্তি পুনর্নবীকরণ হওয়ায় সীমান্তের ওপার থেকে কোনও বাধা আসবে না । এখন ভারতের কাছে চ্যালেঞ্জ হল মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলোকে ম্যানেজ করা, উল্টোদিকে যেভাবে পাকিস্তানকে ম্যানেজ করতে হবে বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোকে । একদিকে দেশের মাটিতে সন্ত্রাসের মাথাচাড়া, অন্যদিকে মূল ধারার রাজনৈতিকদলগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সুরে কথা বলা – এগুলো যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চলেছে । এটা দেখা বেশ চিত্তাকর্ষক বিষয় হবে, যে মোদি সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব চালিয়ে কিনা, বা পাকিস্তানের অবস্থান তাদের নিষ্ক্রিয় অবস্থানে রাখতে পারে কিনা ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.