দিল্লি, 17 জুলাই : মুম্বই হামলার মাস্টার মাইন্ড তথা তথা লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি সংগঠনের সহ প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ় সইদকে গ্রেপ্তার করল পাকিস্তান প্রশাসন । তাকে বিচারবিভাগীয় হেপাজতে পাঠানো হয়েছে বলে খবর ।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার ওপাশে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জঙ্গিদের নিকেশ করতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিল ভারত। কিন্তু তারপরেও জঙ্গিদের ভারতে ঢোকাতে ইসলামাবাদের চেষ্টা অব্যাহত । জম্মু-কাশ্মীরে ভারত-পাক সীমান্তে ও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে ইসলামাবাদ। আর এই জঙ্গি কার্যকলাপে মদত দিয়েছে হাফিজ় ।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জানিয়েছে, উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হাফিজ় সইদ একাধিকবার ভারতের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে । 2008 সালে 26 নভেম্বরের সন্ধ্যায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল গোটা বাণিজ্যনগরী। যার নেপথ্যে ছিল 10 পাকিস্তানি জঙ্গি। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আরব সাগর পেরিয়ে দক্ষিণ মুম্বইয়ে ঢুকে ছিল তারা। তাও আবার অত্যাধুনিক AK 47 রাইফেল ও গুলিগোলা নিয়ে। টানা তিনদিন মুম্বইতে তাণ্ডব চালায় তারা । 164 জনকে খুন করে। যাঁদের মধ্যে 28 জন বিদেশি নাগরিক ছিলেন। গুরুতর জখম হলেও বরাতজোরে বেঁচে যান 300 জন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জানিয়েছে, এই হামলার মাস্টার মাইন্ড ছিল লস্কর-ই-তৈবার কমান্ডার জাকিউর রহমান লাকভি ও হাফিজ় সইদ ।
আরও পড়ুন : গ্রেপ্তার 26/11 হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ় সইদ
মুম্বই হামলার চক্রী হাফিজ় কীভাবে ত্রাস সৃষ্টিকারী জঙ্গি হয়ে উঠল ?
- 1950 সালের 5 জুন পঞ্জাবের সারগোধায় জন্ম হাফিজ়ের । বাবা ছিল দরিদ্র কৃষিজীবী । 1947 সালে দেশভাগের সময় পূর্ব পঞ্জাব থেকে হাফিজ়ের পরিবার আসে পাকিস্তানে । পাক দৈনিককে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সে জানিয়েছিল, হরিয়ানার হিসার থেকে লাহোরে আসার পথে পরিবারের বেশ কয়েকজনকে পথেই হারিয়েছিল তারা।
- হাফিজ়ের শ্বশুর হাফিজ় আবুদুল্লা বাহাওয়ালপুরির সান্নিধ্যে জঙ্গি চিন্তাধারায় বিশ্বাসী হতে শুরু করে সে । জেহাদি কার্যকলাপ এমনিতেই তাকে আকর্ষণ করত । শ্বশুরের প্রতিষ্ঠিত আল-এ-হাদিথ গোষ্ঠী তাকে জঙ্গি ভাবধারায় আরও উৎসাহিত করে ।
- পাকিস্তানের ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক ছিল হাফিজ় । আশির দশকের শুরুর দিকে উচ্চশিক্ষার জন্য সৌদি আরবের কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি দেয় সে । তারপর রুশ-আফগান যুদ্ধে অংশ নেয় । পরবর্তীতে আফগানিস্তানে মুজ়াহিদিন হিসেবে কাজ শুরু করে ।
- পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ছাড়াও ইসলামিক স্টাডিজে বিশেষ পড়াশোনা রয়েছে হাফিজ়ের । কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করেছে সে ।
- 1987 সালে হাফিজ় মরকজ় দাওয়া-ওয়াল-ইরশাদ নামে একটি সংগঠন তৈরি করে। সাগরেদ ছিল আবদুল্লা আজ়ম (ফাদার অব গ্লোবাল জেহাদ) । এরপর 1990 সালে লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠা । জম্মু-কাশ্মীর দখলই ছিল এই জঙ্গি সংগঠনের মূল লক্ষ্য ।
- 1994 সালে অ্যামেরিকার ইসলামিক সেন্টারে বক্তৃতা দেয় সে ।
- 2001 সালের 21 ডিসেম্বর পাকিস্তান তাকে ভারতের সংসদ ভবনে হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক করলেও 2002 সালের মার্চেই মুক্তি পায় সে ।
- 2006 সালে মুম্বইয়ের ট্রেনে বোমা হামলার ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড ছিল সে । এই অভিযোগে পাকিস্তান তাকে গৃহবন্দি করলেও ফের মুক্তি দেওয়া হয়। একই সালে পরপর দু'বার তাকে আটক করলেও লাহোর হাইকোর্টের অর্ডারে ফের মুক্তি পেয়ে যায় সে ।
- 2008 সালে মুম্বই বিস্ফোরণের পর ভারত রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে জামাত-উদ-দাওয়া ও হাফিজ়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে । লস্কর-ই-তইবার কথাও উল্লেখ করা হয় । জামাত-উদ-দাওয়া যে আসলে লস্করের সামাজিক মুখোশ, সে কথা এখন গোটা পৃথিবীই জানে। উল্লেখ্য, অ্যামেরিকান সরকার ইতিমধ্যে হাফিজ়ের গ্রেপ্তারের জন্য 5 মিলিয়ন ডলার পুরস্কার মূল্য ঘোষণা করেছিল ।
- 2008-2019 পর্যন্ত একবার গ্রেপ্তার, একবার মুক্তি, একবার গৃহবন্দি, একবার মুক্তি এভাবেই কেটেছে হাফিজ়ের ।
- মুম্বই জঙ্গি হানার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ়কে গ্রেপ্তার করার জন্য ভারত দীর্ঘ দিন ধরে পাকিস্তানের কাছে দরবার করে আসছে। ওই হামলার পরই হাফিজ়ের যুক্ত থাকার বহু তথ্য প্রমাণ পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি মুম্বই হামলার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহলেও এ নিয়ে চাপ তৈরির কূটনৈতিক কৌশল বজায় রেখেছে দিল্লি। অবশেষে নতিস্বীকার । পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের জঙ্গি দমন শাখা গ্রেপ্তার করে হাফিজ়কে।