ETV Bharat / international

"ভারতকে অবশ্যই আফিগানিস্তানে সরঞ্জাম সরবরাহে পদক্ষেপ করতে হবে" - ডোনাল্ড ট্রাম্প

অ্যামেরিকা ও তালিবানের মধ্য চুক্তি হবে৷ সেখানে উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রতিনিধি ৷ এতে মূলধারার তালিবানদের নিয়ে ভারতের জন্য কতটা ঝুঁকি এবং উদ্বেগ রয়েছে ৷ এই নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মীরা শংকরের সঙ্গে কথা বললেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক স্মিতা শর্মা

US- Afghanistan agreement
চুক্তি
author img

By

Published : Feb 29, 2020, 9:47 PM IST

Updated : Feb 29, 2020, 10:02 PM IST

আফগানিস্তানে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালিবানের মধ্যে যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনার সময় উপস্থিত থাকবে ভারত ৷ ওই চুক্তির পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই দেশ থেকে মার্কিন সেনাবাহিনী সরে যাওয়ার কাজ শুরু হবে ৷ শনিবার দোহায় ওই ঐতিহাসিক ঘটনায় উপস্থিত থাকবেন কাতারে ভারতের রাষ্ট্রদূত পি কুমারণ ৷ সেখানে জালমায় খলিজাদের সঙ্গে তালিবান ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ সচিব পেম্পোরের উপস্থিতিতেই এই আলোচনা হতে পারে বলে সূত্রের খবর ৷ সেই সময় সেখানে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী এস এম কুরেশি, উজ়বেকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী কামিলভ এবং এই অঞ্চলের অন্য নেতাদেরও উপস্থিত থাকার কথা ৷ এই প্রথম সরকারি কোনও অনুষ্ঠানে তালিবানদের সঙ্গে একমঞ্চে দেখা যাবে ভারতকে ৷ এর আগে মস্কোতে এই নিয়ে আলোচনায় ভারত থেকে দু’জন অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত গেছিলেন ৷ কিন্তু সেটা ‘সরকারি’ তকমা পায়নি ৷ বর্ষীয়ান সাংবাদিক স্মিতা শর্মা এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মীরা শংকরের সঙ্গে কথা বলে জানতে চান যে এতে মূলধারার তালিবানদের নিয়ে ভারতের জন্য কতটা ঝুঁকি এবং উদ্বেগ রয়েছে ৷ প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মীরা শংকর বিশ্বাস করেন যে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টির উপর ভারতকে কড়া নজর রাখতে হবে ৷ এবং বিশ্লেষণ করতে হবে ৷ দিল্লি যখন আফগানিস্তানে সেনা পাঠাবে না, তখন কাবুলকে সহায়তা করা এবং সরঞ্জাম সরবরাহে অবশ্যই পদক্ষেপ করতে হবে ৷ এর আগে ভারতে আসা রুশ সেনেটর এবং বিদেশ বিষয়ক কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু কিলমভ দাবি করেছিলেন যে মস্কোকে ছাড়া আফিগানিস্তান নিয়ে কোনও শান্তিচুক্তি সম্ভব নয় ৷ মীরা শংকর মনে করেন, ভারতকে অবশ্যই তালিবানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং ইরান ও রাশিয়া-সহ এই অঞ্চলের অন্যদের সঙ্গেও সংযোগরক্ষা করে চলতে হবে ৷ নিচে EXCLUSIVE আলোচনা দেওয়া হল ৷

প্রশ্ন- দোহায় চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে ভারত ৷ ভারতের পক্ষে এই মুহূর্তে সবচেয়ে উদ্বেগজনক কী ?

উত্তর : ভারতের উদ্বেগ হল, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন এবং NATO-র বাহিনী সরিয়ে নেওয়া হলে সেখানে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে ৷ আর এর সুযোগে জঙ্গি মৌলবাদী শক্তিগুলি ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে ৷ তারা এই অঞ্চলে ও বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে ৷ তাই আমরা চাই মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং তালিবানের মূলধারায় পুরোপুরি ফেরা সুষ্ঠুভাবে হোক ৷ আর এই সময় আফগানিস্তান সরকারকে পুরোপুরি সাহায্য করা হোক ৷ বিশেষ করে সাহায্য করা হোক তাদের সেনা ও পুলিশকে ৷ কারণ, তারা সত্যিই আন্তর্জাতিক অর্থ সাহায্য পেয়েছিল ৷ যদি আর্থিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেদেশের সরকার সংকটে পড়ে যেতে পারে ৷ এতে কোনও পক্ষেরই উপকার হবে না ৷ দ্বিতীয় এতে মূলধারার তালিবানের যা লাভ হবে, তা গণতান্ত্রিকভাবে সংরক্ষণ করা দরকার এবং মহিলা ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা প্রয়োজন ৷ সর্বশেষ উদ্বেগের বিষয় হল যে আফগানিস্তানের সঙ্গে এই চুক্তির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান ৷ তাই তারা যেন এমন কিছু ভেবে না বসে যে এই চুক্তির ফলে তারা তাদের দেশের পূর্ব সীমান্তে অবাধে যা খুশি তাই করতে পারবে ৷

প্রশ্ন- ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ় এবং দাভোসে ইমরান খানের সঙ্গে বসে কথা বলেছেন ৷ দিল্লির সাংবাদিক বৈঠকে একবাক্যে তিনি ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদি নিজের ভালো বন্ধু বলে বর্ণনা করেছেন ৷ তালিবানদের আলোচনায় অংশ নেওয়াতে পাকিস্তান যখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে পাকিস্তানের দিকে ঝোঁকা কি অসম্ভব ? এবং ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের বছরে সেনা প্রত্যাহার কি গুরুত্বপূর্ণ নয় ?

উত্তর : এমন অনেক ঘটনা আছে, যেখানে চাপ তৈরির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে ৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাসুদ আজ়হারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে FATF (Financial Action Task Force)-এ মাধ্যমে চাপ তৈরি কিংবা IMF (International Monetary Fund)-এর রফাসূত্র তৈরির চেষ্টা করা ৷ এরকম অনেক ঘটনা আছে, যেখানে পাকিস্তানকে চাপে রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সাহায্য নিয়েছে ৷ আমরা বুঝতে পারি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত বিশ্বাস এখন অনেকটাই ভেঙে গেছে ৷ তাই এখন দু’পক্ষই দু’পক্ষের সম্পর্কে সচেতন ৷ আগের মতো কেউ আর কাউকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে না ৷

প্রশ্ন- সাম্প্রতিক অতীতে আমরা কিছু পরিস্থিতি দেখেছি, যখন আফগানিস্তানের পাশ থেকে ভারত সরে এসেছে৷ ভারতের চিন্তার কথা মাথায় রেখে ভারতের উচিত সেখানে সংসদ ভবন, রাস্তার মতো পরিকাঠামো তৈরিতে আরও বেশি উদ্যোগী হয়ে বিনিয়োগ করা ৷ আফগানিস্তানে বিনিয়োগ বাড়িয়ে নিজেদের কৌশলগত সুরক্ষা ভারত কীভাবে রক্ষা করবে, যদি ভারত বলে যে সেখানে আর পা দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই ?

উত্তর : আমার মনে হয় ভারত সেখানে আর পা দেবে না ৷ আমার মনে হয় এই পরিস্থিতিকে একটু বাড়িয়েই দেখা হচ্ছে ৷ এর ফলে সেখানে আরও কিছু পরিণতি হতে পারে ৷ এখন যেটা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, সেটা তখন ভারত-পাকিস্তান সমস্যায় পরিণত হবে ৷ ফলে ভারতের সেখানে পা দেওয়া উচিত নয় ৷ কিন্তু আমরা আফগানিস্থানের নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতেই পারি ৷ তাদের রক্ষা করতেই সেখানে আমরা পরিকাঠামোগত প্রকল্পে অংশ নিতে সম্মত হয়েছিলাম ৷ আমরা সেখানে আমাদের কিছু আধা-সেনা পাঠিয়েছিলাম ৷ আমরা প্রশিক্ষণ বাড়াতে পারি ৷ বিশেষ করে আকাশপথে পরিবহন ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়াতে সরঞ্জাম সরবরাহে জোর দিতে পারি ৷ অতীতে আমরা ওদের হেলিকপ্টার দিয়েছি ৷ কিন্তু তাদের এখন আকাশপথে পরিবহন ব্যবস্থা করার মতো সক্ষমতা তৈরি হয়নি ৷ আরও অনেক কিছু করার মতো আছে ৷ আমাদের এখন অতি দ্রুত এবং সক্রিয় ভাবে আফগানিস্তানের সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছে পৌঁছতে হবে ৷ আমরা এখন তালিবানের সঙ্গে কোনও চুক্তি করব না, এটা আমরা বলতে পারি না ৷ তারা এখন একটা নির্ধারক ৷ সেখানে কি তালিবান জাতীয়বাদ রয়েছে, নাকি আফগানিস্তান জাতীয়বাদ রয়েছে ? সম্ভবত ৷ দেখা যাক এটা কতদূর যায় ৷ আমি নিশ্চিত যে তারাও পাকিস্তানের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে মোটেও খুশি হবে না ৷ মোল্লা বারাদেরের কথাই ধরুন, তাদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন ৷ তিনি এই মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ৷ তিনি এখন কারাগারে থাকলেও আগেই মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন ৷ তাই তিনি নিশ্চয় খুব খুশি হবেন ৷ আমাদের বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে যে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর পরিস্থিতি কী হয় এবং তা কীভাবে আমাদের পরিকল্পনামাফিক এগোয় ৷

প্রশ্ন- তালিবানের সঙ্গে একসাথে আসতে ভারত অনেকটা সময় নিল এবং দু’জন অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে ‘বেসরকারি’ ভাবে পাঠিয়েওছিল ৷ আমি একজন রুশ সেনেটরের সঙ্গে কথা বলেছি, যিনি বিদেশ বিষয়ক কমিটির ডেপুটি, তিনি জানিয়েছেন যে যেহেতু তাঁদের আফগানিস্তান নিয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই মস্কোকে ছাড়া এই ধরনের কোনও শান্তিচুক্তি করে লাভ নেই ৷ পরোক্ষভাবে তালিবানের সঙ্গে কথা বলতে ভারত কি রাশিয়া বা ইরানকে ব্যবহার করতে পারে ? এদের কী ভূমিকা হতে পারে ?

উত্তর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ইরান তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে ৷ কারণ, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতিতে বেশ চিন্তিত ৷ যদিও শিয়া-বিরোধী হিসেবে তারা তালিবানদের উপর আগে খুবই ক্ষুব্ধ ছিল ৷ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির জন্য তারা কৌশলগত ভাবে তালিবানদের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ গড়ে তোলে ৷ মধ্য এশিয়া ও রাশিয়ায় আফগানিস্থানের অস্থিরতা চিন্তিত রাশিয়া ৷ ফলে তারা এই বিষয়ের উপর নজর রাখবে ৷ তারা তালিবানের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়ার চেষ্টাও করেছিল ৷ আমার মনে হয়, তারা একটা ভূমিকা পালন করবে ৷ এবং ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া-সহ সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখে চলবে ৷

আফগানিস্তানে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালিবানের মধ্যে যুগান্তকারী চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনার সময় উপস্থিত থাকবে ভারত ৷ ওই চুক্তির পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই দেশ থেকে মার্কিন সেনাবাহিনী সরে যাওয়ার কাজ শুরু হবে ৷ শনিবার দোহায় ওই ঐতিহাসিক ঘটনায় উপস্থিত থাকবেন কাতারে ভারতের রাষ্ট্রদূত পি কুমারণ ৷ সেখানে জালমায় খলিজাদের সঙ্গে তালিবান ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ সচিব পেম্পোরের উপস্থিতিতেই এই আলোচনা হতে পারে বলে সূত্রের খবর ৷ সেই সময় সেখানে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী এস এম কুরেশি, উজ়বেকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী কামিলভ এবং এই অঞ্চলের অন্য নেতাদেরও উপস্থিত থাকার কথা ৷ এই প্রথম সরকারি কোনও অনুষ্ঠানে তালিবানদের সঙ্গে একমঞ্চে দেখা যাবে ভারতকে ৷ এর আগে মস্কোতে এই নিয়ে আলোচনায় ভারত থেকে দু’জন অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত গেছিলেন ৷ কিন্তু সেটা ‘সরকারি’ তকমা পায়নি ৷ বর্ষীয়ান সাংবাদিক স্মিতা শর্মা এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মীরা শংকরের সঙ্গে কথা বলে জানতে চান যে এতে মূলধারার তালিবানদের নিয়ে ভারতের জন্য কতটা ঝুঁকি এবং উদ্বেগ রয়েছে ৷ প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মীরা শংকর বিশ্বাস করেন যে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টির উপর ভারতকে কড়া নজর রাখতে হবে ৷ এবং বিশ্লেষণ করতে হবে ৷ দিল্লি যখন আফগানিস্তানে সেনা পাঠাবে না, তখন কাবুলকে সহায়তা করা এবং সরঞ্জাম সরবরাহে অবশ্যই পদক্ষেপ করতে হবে ৷ এর আগে ভারতে আসা রুশ সেনেটর এবং বিদেশ বিষয়ক কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু কিলমভ দাবি করেছিলেন যে মস্কোকে ছাড়া আফিগানিস্তান নিয়ে কোনও শান্তিচুক্তি সম্ভব নয় ৷ মীরা শংকর মনে করেন, ভারতকে অবশ্যই তালিবানদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং ইরান ও রাশিয়া-সহ এই অঞ্চলের অন্যদের সঙ্গেও সংযোগরক্ষা করে চলতে হবে ৷ নিচে EXCLUSIVE আলোচনা দেওয়া হল ৷

প্রশ্ন- দোহায় চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে ভারত ৷ ভারতের পক্ষে এই মুহূর্তে সবচেয়ে উদ্বেগজনক কী ?

উত্তর : ভারতের উদ্বেগ হল, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন এবং NATO-র বাহিনী সরিয়ে নেওয়া হলে সেখানে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে ৷ আর এর সুযোগে জঙ্গি মৌলবাদী শক্তিগুলি ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে ৷ তারা এই অঞ্চলে ও বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে ৷ তাই আমরা চাই মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং তালিবানের মূলধারায় পুরোপুরি ফেরা সুষ্ঠুভাবে হোক ৷ আর এই সময় আফগানিস্তান সরকারকে পুরোপুরি সাহায্য করা হোক ৷ বিশেষ করে সাহায্য করা হোক তাদের সেনা ও পুলিশকে ৷ কারণ, তারা সত্যিই আন্তর্জাতিক অর্থ সাহায্য পেয়েছিল ৷ যদি আর্থিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেদেশের সরকার সংকটে পড়ে যেতে পারে ৷ এতে কোনও পক্ষেরই উপকার হবে না ৷ দ্বিতীয় এতে মূলধারার তালিবানের যা লাভ হবে, তা গণতান্ত্রিকভাবে সংরক্ষণ করা দরকার এবং মহিলা ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা প্রয়োজন ৷ সর্বশেষ উদ্বেগের বিষয় হল যে আফগানিস্তানের সঙ্গে এই চুক্তির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান ৷ তাই তারা যেন এমন কিছু ভেবে না বসে যে এই চুক্তির ফলে তারা তাদের দেশের পূর্ব সীমান্তে অবাধে যা খুশি তাই করতে পারবে ৷

প্রশ্ন- ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ় এবং দাভোসে ইমরান খানের সঙ্গে বসে কথা বলেছেন ৷ দিল্লির সাংবাদিক বৈঠকে একবাক্যে তিনি ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদি নিজের ভালো বন্ধু বলে বর্ণনা করেছেন ৷ তালিবানদের আলোচনায় অংশ নেওয়াতে পাকিস্তান যখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে পাকিস্তানের দিকে ঝোঁকা কি অসম্ভব ? এবং ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের বছরে সেনা প্রত্যাহার কি গুরুত্বপূর্ণ নয় ?

উত্তর : এমন অনেক ঘটনা আছে, যেখানে চাপ তৈরির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে ৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাসুদ আজ়হারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে FATF (Financial Action Task Force)-এ মাধ্যমে চাপ তৈরি কিংবা IMF (International Monetary Fund)-এর রফাসূত্র তৈরির চেষ্টা করা ৷ এরকম অনেক ঘটনা আছে, যেখানে পাকিস্তানকে চাপে রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সাহায্য নিয়েছে ৷ আমরা বুঝতে পারি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত বিশ্বাস এখন অনেকটাই ভেঙে গেছে ৷ তাই এখন দু’পক্ষই দু’পক্ষের সম্পর্কে সচেতন ৷ আগের মতো কেউ আর কাউকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে না ৷

প্রশ্ন- সাম্প্রতিক অতীতে আমরা কিছু পরিস্থিতি দেখেছি, যখন আফগানিস্তানের পাশ থেকে ভারত সরে এসেছে৷ ভারতের চিন্তার কথা মাথায় রেখে ভারতের উচিত সেখানে সংসদ ভবন, রাস্তার মতো পরিকাঠামো তৈরিতে আরও বেশি উদ্যোগী হয়ে বিনিয়োগ করা ৷ আফগানিস্তানে বিনিয়োগ বাড়িয়ে নিজেদের কৌশলগত সুরক্ষা ভারত কীভাবে রক্ষা করবে, যদি ভারত বলে যে সেখানে আর পা দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই ?

উত্তর : আমার মনে হয় ভারত সেখানে আর পা দেবে না ৷ আমার মনে হয় এই পরিস্থিতিকে একটু বাড়িয়েই দেখা হচ্ছে ৷ এর ফলে সেখানে আরও কিছু পরিণতি হতে পারে ৷ এখন যেটা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, সেটা তখন ভারত-পাকিস্তান সমস্যায় পরিণত হবে ৷ ফলে ভারতের সেখানে পা দেওয়া উচিত নয় ৷ কিন্তু আমরা আফগানিস্থানের নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতেই পারি ৷ তাদের রক্ষা করতেই সেখানে আমরা পরিকাঠামোগত প্রকল্পে অংশ নিতে সম্মত হয়েছিলাম ৷ আমরা সেখানে আমাদের কিছু আধা-সেনা পাঠিয়েছিলাম ৷ আমরা প্রশিক্ষণ বাড়াতে পারি ৷ বিশেষ করে আকাশপথে পরিবহন ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়াতে সরঞ্জাম সরবরাহে জোর দিতে পারি ৷ অতীতে আমরা ওদের হেলিকপ্টার দিয়েছি ৷ কিন্তু তাদের এখন আকাশপথে পরিবহন ব্যবস্থা করার মতো সক্ষমতা তৈরি হয়নি ৷ আরও অনেক কিছু করার মতো আছে ৷ আমাদের এখন অতি দ্রুত এবং সক্রিয় ভাবে আফগানিস্তানের সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছে পৌঁছতে হবে ৷ আমরা এখন তালিবানের সঙ্গে কোনও চুক্তি করব না, এটা আমরা বলতে পারি না ৷ তারা এখন একটা নির্ধারক ৷ সেখানে কি তালিবান জাতীয়বাদ রয়েছে, নাকি আফগানিস্তান জাতীয়বাদ রয়েছে ? সম্ভবত ৷ দেখা যাক এটা কতদূর যায় ৷ আমি নিশ্চিত যে তারাও পাকিস্তানের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে মোটেও খুশি হবে না ৷ মোল্লা বারাদেরের কথাই ধরুন, তাদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন ৷ তিনি এই মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ৷ তিনি এখন কারাগারে থাকলেও আগেই মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলেন ৷ তাই তিনি নিশ্চয় খুব খুশি হবেন ৷ আমাদের বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে যে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর পরিস্থিতি কী হয় এবং তা কীভাবে আমাদের পরিকল্পনামাফিক এগোয় ৷

প্রশ্ন- তালিবানের সঙ্গে একসাথে আসতে ভারত অনেকটা সময় নিল এবং দু’জন অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে ‘বেসরকারি’ ভাবে পাঠিয়েওছিল ৷ আমি একজন রুশ সেনেটরের সঙ্গে কথা বলেছি, যিনি বিদেশ বিষয়ক কমিটির ডেপুটি, তিনি জানিয়েছেন যে যেহেতু তাঁদের আফগানিস্তান নিয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই মস্কোকে ছাড়া এই ধরনের কোনও শান্তিচুক্তি করে লাভ নেই ৷ পরোক্ষভাবে তালিবানের সঙ্গে কথা বলতে ভারত কি রাশিয়া বা ইরানকে ব্যবহার করতে পারে ? এদের কী ভূমিকা হতে পারে ?

উত্তর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ইরান তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে ৷ কারণ, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতিতে বেশ চিন্তিত ৷ যদিও শিয়া-বিরোধী হিসেবে তারা তালিবানদের উপর আগে খুবই ক্ষুব্ধ ছিল ৷ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির জন্য তারা কৌশলগত ভাবে তালিবানদের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ গড়ে তোলে ৷ মধ্য এশিয়া ও রাশিয়ায় আফগানিস্থানের অস্থিরতা চিন্তিত রাশিয়া ৷ ফলে তারা এই বিষয়ের উপর নজর রাখবে ৷ তারা তালিবানের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়ার চেষ্টাও করেছিল ৷ আমার মনে হয়, তারা একটা ভূমিকা পালন করবে ৷ এবং ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া-সহ সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখে চলবে ৷

Last Updated : Feb 29, 2020, 10:02 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.