দুশানবে, 16 অগস্ট : দেশের মানুষের কথাই তিনি ভেবেছেন । তাই রক্তপাত যাতে না হয়, সেকারণে দেশ ছেড়েছেন তিনি । দেশ ছাড়ার পর এমনই বার্তা দিলেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি (Ashraf Ghani) । উল্লেখ্য, গতকাল তালিবানরা প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের দিকে এগিয়ে আসতেই দেশ ছাড়েন আশরাফ গনি । বর্তমানে, তিনি তাজিকিস্তানে রয়েছেন ।
আফগানিস্তানের আকাশে এখন শুধু তালিবান আতঙ্ক । কয়েকদিন ধরে একটি একটি করে শহর নিজেদের দখলে নিচ্ছিল তালিবানরা । গতকাল কাবুল দখল করে । যা স্পষ্ট করে দিয়েছে, দুই দশক পর ফের আফগানিস্তানে রাজ করতে চলেছে তালিবানরা । ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে 'শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর' করা হচ্ছে বলে খবর । এসবের মধ্যে গতকালই দেশত্যাগ করেছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি । যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে । প্রশ্ন উঠছে, দেশের এই কঠিন সময়ে প্রেসিডেন্ট গনি পালিয়ে গেলেন কীভাবে ? । আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লা রহমদ্দি টুইটারে এই বিষয়ে নিন্দা করে লিখেছেন, "আমাদের হাত পিছনে বেঁধে দিয়ে দেশটা বিক্রি করে পালিয়েছেন ।" এই কাজের জন্য তিনি গনি ও তাঁর দলবলদের ধিক্কার জানিয়েছেন ।
আরও পড়ুন, Taliban Captures Kabul : বিমানবন্দরে গুলির শব্দ ! বাচ্চা কোলে প্রাণভয়ে ছুটছেন মানুষ
এদিকে, দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর গনি তাজিকিস্তানে পৌঁছেছেন বলে শোনা যাচ্ছে । দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ নিয়ে সম্প্রতি তিনি একটি বিবৃতিও দিয়েছেন । যেখানে তিনি জানাচ্ছেন, রক্তপাত এড়ানোর জন্য তিনি দেশ ছেড়েছেন । তাঁর কাছে কঠিন দুটো অপশন ছিল । এক, সশস্ত্র তালিবান । যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করলে বহু মানুষ মারা যেতে পারেন । দুই, যে দেশকে 20 বছর ধরে আমি রক্ষা করে এসেছি, সেই দেশকে ছেড়ে চলে যাওয়া । তাই রক্তপাত এড়াতে তিনি দ্বিতীয় শর্তটি বেছে নেন । তবে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তালিবানরা অস্ত্রসস্ত্র, গোলা-গুলি দিয়ে জিতলেও, কোনও দিন আফগানিস্তানবাসীর মন জয় করতে পারবে না । তিনি আরও বলেন, "যদি এদের নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, অগণিত দেশপ্রেমিক শহিদ হবে এবং কাবুল শহর ধ্বংস হয়ে যাবে । ফলে একটি বড় মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে । "
আসরাফ গনির দেশত্যাগের পর ও কাবুল তালিবান দখলের পর আফগান সরকারের পতন হয় । ওইদিন আগেই ন্যাশনাল রিকন্সিলিয়েশন-এর উচ্চ পরিষদের প্রধান আবদুল্লা আবদুল্লা গনিকে আফগানিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেন । সেইসঙ্গে তিনি আফগানদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, " আশা করি, এই কঠিন সময় পার হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি । শান্তিও ফিরে আসবে । "
রবিবার সারাদিন ধরেই আতঙ্কের মধ্যে কাটিয়েছেন বেশিরভাগ আফগান ৷ আতঙ্কের মধ্যে অনেকেই কাবুল বিমানবন্দরে ছুটে এসেছেন ৷ দেশ ছেড়ে পালানোর এটাই শেষ পথ তাঁদের কাছে ৷ দেশের বাইরে যাওয়ার আর সমস্ত রাস্তা আপাতত তালিবানের দখলে ৷ রবিবার রাতেও সেই প্রক্রিয়া চলছিল ৷ তার মধ্যে গুলি গোলা ছোড়া শুরু হয় ৷ আতঙ্কে কাঁটা হয়ে যান তাঁরা ৷ অনেকে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে আহত হয়েছেন ৷ উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে চলতে থাকা এই অস্থির পরিস্থিতির জেরে আরও অন্যান্য রাষ্ট্রও তাঁদের নাগরিক এবং কূটনীতিকদের দেশে ফেরাতে শুরু করেছে ৷ গতকাল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে কাবুল থেকে 129 জন ভারতীয় দিল্লি ফিরেছেন ৷
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৈঠক করবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ । কাউন্সিলে ভারতের সভাপতিত্বে আফগানিস্তান নিয়ে এটি দ্বিতীয় বৈঠক।