জেনেভা, 11 সেপ্টেম্বর : জম্মু ও কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছিল পাকিস্তান ৷ সেই অস্ত্রেই পাকিস্তানকে জবাব দিল ভারত ৷ রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (UNHRC)-র অধিবেশনে নাম না করে পাকিস্তানকে তুলোধনা করে ভারত বলে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উৎসস্থল থেকে মিথ্যা ও মনগড়া কাহিনি প্রচার করা হচ্ছে ৷ অথচ পাকিস্তানেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকেই মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে ৷
রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনের শুরুতে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের আর্জি জানান UNHRC-র হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট ৷ তার জেরে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে ভারত ৷ সেই মন্তব্যকেই হাতিয়ার করে গতকাল আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি ৷ কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি ৷ বলেন, "কাশ্মীরের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিচারের জন্য আমি আজ মানবাধিকার কাউন্সিলের দরজায় কড়া নাড়ছি ৷ " কাউন্সিলের কাছে তিনি আর্জি জানান, ভারত যেন অবিলম্বে কাশ্মীর পেলেট গান ব্যবহার বন্ধ করে, কারফিউ প্রত্যাহার করে ৷
ভারতের তরফে জবাব দেন বিদেশ মন্ত্রকের সচিব (পূর্ব) বিজয় সিংহ ঠাকুর ৷ তিনি বলেন, "আমাদের সংসদে আলোচনার পর (জম্মু ও কাশ্মীর সম্পর্কে ) সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ তা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছে ও ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে ৷ আমরা ফের বলছি, এটা সার্বভৌম সিদ্ধান্ত ৷ সংসদে পাশ হওয়া অন্য আইনের মতো এটাও পুরোপুরি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় ৷ কোনও দেশই নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করে না ৷ ভারত তো নয়ই ৷ " ভারতের তরফে দাবি করা হয়, নিজেদের আঞ্চলিক স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পাকিস্তান মিথ্যা কাহিনি গড়ে তুলেছে ৷ অথচ নিকৃষ্টতম মানবাধিকার লঙ্ঘন হল সন্ত্রাসবাদ ৷
বিদেশ মন্ত্রকের প্রথম সচিব ভিমর্ষ আরিয়ান বলেন, "এই মঞ্চের রাজনীতিকরণ ও মেরুকরণের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের মিথ্যা ও মন গড়া কাহিনিতে আমরা একেবারেই অবাক নই ৷ পাকিস্তান অনুভব করতে পেরেছে, আমাদের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের ফলে তাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে ৷ কারণ, এর ফলে ভারতের বিরুদ্ধে সীমান্তপারের সন্ত্রাসের মদত দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হয়েছে ৷ তারা এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে, জম্মু-কাশ্মীর ও তৃতীয় পক্ষের দেশগুলিতে হিংসায় মদত দেওয়া কয়েকজন পাকিস্তানি নেতা জিহাদ পর্যন্ত ঘোষণা করেছেন ৷ যাতে সেখানে গণহত্যার একটি ছবি প্রচার করা যায় ৷ আর সেটা যে বাস্তবের থেকে বহু দূর তা তাঁরা জানেন ৷" আরিয়ানের বক্তব্য, পাকিস্তানের এই "অসাধু উদ্যোগ" সফল হবে না ৷ কেন তা ব্যর্থ হবে তাও ব্যাখ্যা করেন তিনি ৷ তাঁর কথায়, আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য , সহনশীলতার পাশাপাশি ভূ-খণ্ডের অখণ্ডতা বজায় রাখার লক্ষ্যে ভারতীয়রা একত্রিত ৷ ভারতের অন্য অংশের মতো জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ এগিয়ে যাবে ও উন্নতি লাভ করবে ৷ "
কী ভাবে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে তাও তুলে ধরেন ভারতীয় কূটনীতিবিদরা ৷ বিদেশ মন্ত্রকের সচিব (পূর্ব) বলেন, "সারা বিশ্ব জানে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উৎসস্থল থেকে এই মিথ্যা কাহিনি আসছে ৷ যেখানে বছরের পর বছর ধরে জঙ্গি নেতাদের আশ্রয় দেওয়া হয় ৷" বিজয় সিংহ ঠাকুরের সুরে ভিমর্ষ আরিয়ান দাবি করেন, নিজেদের দেশে সংখ্যালঘুদের হত্যা থেকে আন্তর্জাতিক স্তরের নজর ঘোরাতে পাকিস্তান এইসব অভিযোগ তুলছে ৷ কিন্তু, তা সফল হবে ৷ তিনি বলেন, "এই কারণেই সংখ্যালঘুদের নিয়ে কোনও সরকারি তথ্য প্রকাশ করে না পাকিস্তান ৷ যা ভারতে করে ৷ " আসিয়া বিবিকে আটকে রাখা, বই বিক্রির জন্য সন্ত্রাস রোধ আইনে মামলা দায়ের করা আবদুল শাকুর কিংবা শিখ নাবালিকা জগজিৎ কউরকে জোর করে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করার ঘটনাগুলিই জানান দেয়, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের অবস্থাটা ঠিক কী ৷