কোরোনার জেরে আতঙ্কে দিন গুনছে বিশ্ব ৷ চিনেই ইউহানে খোঁজ পাওয়া কোরোনা ভাইরাস এখন তাণ্ডব চালাচ্ছে পৃথিবীজুড়ে ৷ লকডাউন করতে বাধ্য হয়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ ৷ স্তব্ধ জনজীবন ৷ পৃথিবীর বহু প্রান্তে আটকে পড়েছে বহু মানুষ ৷ ফিরতে পারছে না ঘরে ৷ বিদেশে আটকে পড়েছেন অনেক প্রবাসী ভারতীয়ও ৷ তেমনই বাঁকুড়ার বাসিন্দা হিয়া রায় ও তাঁর স্বামী হিন্দমোটরের শুভজিৎ চৌধুরি, আটকে রয়েছেন জাপানের টোকিওতে ৷ সেখানে থেকেই ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে জানালেন জাপানের বর্তমান পরিস্থিতি ৷
শুভজিৎ চৌধুরি বললেন, 2014 সালের সেপ্টেম্বর থেকে জাপানের টোকিওতে আছি ৷ বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ টোকিওতে কম্পিউটার সায়েন্সে নিয়ে PHd করছি ৷ আমার স্ত্রী হিয়া ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ডক্টরেট করছে ৷ 2015 সালের সেপ্টেম্বরে জাপান আসে হিয়া ৷
বেশ সুন্দর, সাজানো-গোছানো শহর টোকিও ৷ শহরের রাস্তার নোংরার লেশ মাত্র নেই ৷ প্রাকৃতিক দৃশ্যে মন ভুলতে বাধ্য ৷ তবে কয়েকদিন ধরেই শহরটা যেত থিতিয়ে গেছে ৷ শহরের সেই কোলাহল নেই, অফিস যাওয়ার তাড়া নেই ৷ আসলে প্রতিবেশী দেশেই প্রথম সন্ধান মিলেছে মারণ ভাইরাস কোরোনার ৷ আর আজ সেই ভাইরাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে ৷ চিনের ইউহানকে নিজের কবলে নেওয়ার পর ইউরোপে হানা দেয় এই ভাইরাস ৷ সেখানে ইট্যালি ও স্পেনে মৃত্যুমিছিল চালায় এই মারণ ভাইরাস ৷ বর্তমানে এই ভাইরাসের এপিসেন্টার অ্যামেরিকা ৷ ভাবলেই মনে আতঙ্ক বাসা বাঁধে ৷ এইতো কয়েকদিন আগেই অ্যামেরিকায় চার মাসের ইন্টার্নশিপ করে জাপান ফিরেছে হিয়া ৷
হিয়া বললেন, বাঁকুড়ার মেয়ে ৷ তবে দীর্ঘদিন টোকিওতে বসবাস করছি ৷ জানুয়ারিতেই অ্যামেরিকা থেকে জাপানে এসেছি ৷ যখন এখানে এলাম তখনও কিছুই হয়নি দেশটায় ৷ আমার অ্যামেরিকায় কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব আছে ৷ তাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয় ৷ আতঙ্কে আছে তারাও ৷
তবে আমি ও আমার স্বামী যেথানে থাকি সেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা নেই ৷ সরকারিভাবে লকডাউন ঘোষণাও করেনি জাপান সরকার ৷ তবে জাপানিরা মানছেন দূরত্বের নিয়মবিধি ৷ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে কী কী করণীয়, আর কী কী করা যাবে না ৷ বাস, ট্রেন সবই চালু আছে এখানে ৷
জাপানে কোরোনা সংক্রমণের সেইভাবে কোনও খবর নেই ৷ লুকাহামা বন্দরে প্রিন্সিপ ডায়মন্ড নামক জাহাজটি আসার পর এখানে কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হয় ৷ তবে জাপানের যে সংস্কৃতি তাও এই সংক্রমণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ৷ সাধারণত জাপানিরা বাড়ির বাইরে বেরোলে মুখে মাস্ক অবশ্যই ব্যবহার করেন ৷ তাছাড়া নিজেদের মধ্যেও দূরত্ব রেখেই চলেন তাঁরা ৷ সাধারণ জ্বর বা সর্দি-কাশি হলেই লোকে বাড়িতেও মাস্ক ব্যবহার করেন ৷ জাপানি সংস্কৃতিতে করমর্দন প্রথা নেই ৷ এখানে লোকে মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানায় ৷ ফলে হাতের মাধ্যমে সংক্রমণ হওয়ার সুযোগ খুব কম এখানে ৷
জাপানে খোলা আছে সমস্ত দোকানই ৷ রাস্তা-ঘাটে চলছে গাড়ি ৷ তবে জাপানে সজাগ সাধারণ মানুষ ৷ মাস্ক ব্যবহার থেকে শুরু করে দূরত্ব রেখে চলাফেরা সবই করছেন সবাই ৷ জাপানে স্বাস্থ্য পরিষেবা যথেষ্ট ভালো ৷ তাই নিজের ঘর থেকে এত দূরে থেকেও কোরোনা নিয়ে আতঙ্কে নেই আমরা ৷ তবে ভারতের অবস্থা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ৷ পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত ভিডিয়ো বার্তার মাধ্যমে কথা হয় ৷ সবাইকে বলেছি সরকারের কথা মেনে ঘরে থাকতে ৷ ঘরের জন্য মন খারাপ হলেও এখন ফেরার উপায় নেই ৷ একদিন ফের ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু ৷ ফের বাড়ি ফিরতে পারব আমরা ৷