ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে । আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি শুধুমাত্র আমাদের সাহায্য করছে তা কিন্তু নয়, সমাজ বিরোধীরাও এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে । স্বাভাবিকভাবেই দেশের নিরাপত্তার এবং দেশবাসীর স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা এই মুহূর্তে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ।
আগে যখন তথ্য-প্রযুক্তির তেমন উন্নতি হয়নি তখন কোনও বার্তা পাঠাতে বেশ খানিকটা সময় লাগত । স্বাভাবিকভাবেই জঙ্গিরা সাধারণ মানুষের কাছে কোনও বার্তা পাঠাতে চাইলে তাতে সময় লাগত । কিন্তু বর্তমান সময়ে তথ্য-প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গোটা বিশ্বের কাছে কোনও বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে । জঙ্গিরাও যেকোনও তথ্য আদানপ্রদান করতে পারছে মুহূর্তে ।
জঙ্গি সংগঠন ISIS কীভাবে সোশাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী তাদের কার্যকলাপ ছড়িয়ে দিয়েছে তা সকলের জানা । সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার মূলচক্রী জাহার হাশিম সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে কীভাবে বিশ্বের যুব সম্প্রদায়ের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল, তাও সকলেই দেখেছেন । শুধুমাত্র ইরাক-সিরিয়া নয়, এই জঙ্গি সংগঠনটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের কার্যকলাপ ছড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বে । ISIS ইন্টারনেটের মাধ্যমে বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশে তাদের কাজকর্মের জাল ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে । আবার উন্নত দেশগুলির মধ্যে তাদের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইন্টারনেটকে হাতিয়ার করা হয়েছে । এমন সুচতুরভাবে জঙ্গি সংগঠনগুলি তাদের কাজ হাসিল করে চলেছে যা নিঃসন্দেহে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ । ইন্টারনেটকে হাতিয়ার করে ISIS বিশ্বের যুব সমাজের মধ্যে নিজেদের চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দিচ্ছে । বহু মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে । কম্পিউটার এবং স্মার্ট ফোনের যুগে ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে যে কোনও বার্তা দ্রুত গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে । এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, ইন্টারনেট এবং সোশাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন যেভাবে গোটা বিশ্বে নজরদারি চালাচ্ছে তাতে প্রতিটি দেশের নিরাপত্তা এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ।
গত বছর মার্চে নিউজ়িল্যান্ডের ক্রাইস্ট চার্চে এক জঙ্গির এলোপাথাড়ি গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন 51 জন । সেই হামলা সোশাল মিডিয়ায় সরাসরি দেখা গেছিল । সেই ঘটনা ক্রাইস্ট চার্চ হত্যাকাণ্ড হিসেবে পরিচিত । নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়ের মাকরঁ এই ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করেছেন । প্রাথমিকভাবে 17টি দেশের জোট একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে । ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলা জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে সহমত পোষণ করেছে 17টি দেশ । পরবর্তীতে এতে যোগ দেয় আরও 31টি দেশ । ফেসবুক, মাইক্রোসফট, টুইটার, ইউটিউবকে একই ছাতার তলায় এনে সন্ত্রাস বিরোধী বিশ্ব ইন্টারনেট ফোরাম গঠন করা হয়েছে । জঙ্গি সংগঠনগুলির কার্যকলাপ রোধে কাজ করছে এই মঞ্চ । সমাজ বিরোধী কার্যকলাপ-ছবি-ভিডিয়ো ছড়ানোর মতো কাজ বন্ধ করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এই মঞ্চ । এই সংগঠনটি রাষ্ট্রসংঘের সন্ত্রাস বিরোধী সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে । GIFCT জঙ্গি কার্যকলাপ রোধে চারটি পথের কথা বলেছে । প্রথমেই বড় বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে কঠোর পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে । সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনলাইনে আলোচনা চক্র আহ্বানের কথা বলা হয়েছে । অ্যামাজন, লিঙ্কডিন, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সংস্থার কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে । '#' বার্তার উপর বিশেষ নজরদারির কথা বলা হয়েছে ।
কীভাবে জঙ্গিরা ইন্টারনেটের মাধ্যেম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্ববাপী, সে বিষয়ে GIFCT নিরন্তন কাজ করে চলেছে । ক্রাইস্ট চার্চের মতো ঘটনা বুঝিয়ে দিয়েছে, জঙ্গি সংগঠনগুলি তাদের কার্যকলাপ সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করার থেকে তা সরাসরি দেখানোর বিষয়ে নজর দিচ্ছে । বর্তমানে বেশ কিছু সফটওয়ার আছে যা এই ধরণের হিংসাত্মক ভিডিয়ো আপলোড করতে বাধা দেয় । সন্ত্রাস বিরোধী কার্যকলাপ প্রচারের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ করা হচ্ছে । যুব সমাজকে জঙ্গি কার্যকলাপের মধ্যে সংযুক্ত করার জন্য কাশ্মীরি সন্ত্রাসবাদী (হিজবুল মুজাহিদিনের শাখা ) বুরহান ওয়ানি সোশাল মিডিয়াকেই হাতিয়ার করেছিল । জইশ, লস্কর-ই-তইবার মতো সংগঠনগুলিও ভারতে তাদের কার্যকলাপ ছড়াতে সোশাল মিডিয়াকেই হাতিয়ার করছে বার বার । একাধিক বার একাধিক ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতীয় গোয়ান্দা সংস্থা কাশ্মীরে ইন্টারনেট বন্ধ করেছিল । বহু সফটওয়ার সংস্থা জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে GIFCT-কে সাহায্য করে চলেছে । আগামী দিনে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা কোনওভাবেই সম্ভব নয় । সন্ত্রাস দমনে সরকার সর্বদা সচেষ্ট । বর্তমান সময়ে ই-মেল,ই-কমার্স, যোগাযোগ ব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন বিষয় ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত । ইন্টারনেট ছাড়া আমরা একটি ঘণ্টাও থাকতে পারি না । এই সব ক্ষেত্র থেকে সন্ত্রাসবাদকে সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলতে হবে । এটা সম্ভব হবে যখন গোটা সমাজ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিপুল আন্দোলনে সামিল হবে ।