সিয়াটেল, 5 জুন : আমরাও জর্জের যন্ত্রণা অনুভব করতে চাই ! আন্দোলনকারীরা পিছমোড়া করে বাঁধলেন নিজেদের হাত । সেইভাবেই মাটিতে শুয়ে রইলেন বেশ কয়েক মিনিট । গতকাল এই দৃশ্যের সাক্ষী রইল সিয়াটেল ।
শেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের খুনের বিরোধিতায় গর্জে উঠেছে অ্যামেরিকা । এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে । জর্জের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন বহু মানুষ । যদিও বিষয়টি জর্জের পক্ষ বা বিপক্ষ না, তাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বলেই মনে করেন । এইরকম প্রতিবাদ মিছিল কয়েক দশকে দেখেনি অ্যামেরিকা । সেই প্রতিবাদে আরও এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল সিয়াটেল । এক পার্কিং লটে প্রতিবাদকারীরা নিজেদের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে নিলেন । বললেন, মৃত্যুর আগের মুহূর্তে জর্জের যন্ত্রণা অনুভব করতে চান তাঁরা ।
জর্জের খুনের ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল । দেখা গিয়েছিল, নিরস্ত্র অবস্থায় পিছমোড়া করে বাঁধা জর্জ । তাঁকে উলটে শুইয়ে তাঁর ঘাড়ের উপর হাঁটু দিয়ে চেপে রয়েছেন শেতাঙ্গ পুলিশকর্মী ডেরেক শভিন । একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য কাতরাচ্ছেন জর্জ । বারবার অনুরোধ করছেন । কিন্তু নিজের জায়গা থেকে এক চুলও নড়েনি ওই পুলিশকর্মী । এই নৃশংসতা প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠেছে অ্যামেরিকার রাজপথে । ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, মিনেপলিস সহ বড় বড় শহরগুলিতে কাতারে কাতারে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন । সিয়াটেল শহরও সেই তালিকার বাইরে না ।
গতকাল সিয়াটেলে একাধিক ঘটনা ঘটতে দেখা যায় । একজন প্রতিবাদকারী পুলিশের লাইন ভেঙে বেরিয়ে আসতে চান । অন্য এক প্রতিবাদকারীকে দেখা যায় পুলিশকে অশ্লীল মন্তব্য করতে । সেই প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ।
পুলিশ প্রধান কার্মেন বেস্টের সঙ্গে দেখা করে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন শহরের মেয়র জেনি ডার্কান । এরপর টুইটারে জানান কারফিউ শেষ হয়েছে । এই কারফিউ চলার কথা ছিল শনিবার পর্যন্ত ।
জেনি ডার্কান বলেন, “পুলিশ প্রধান বিশ্বাস করেন কারফিউ ছাড়াই আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং সাধারণ মানুষের সুরক্ষার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে পারব । যাঁরা আজ রাতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিলেন , তাঁরা প্রতিবাদ চালিয়ে যান । আমরা চাই আপনাদের প্রতিবাদের কণ্ঠ আরও দৃঢ় হোক ।”
কারফিউ উঠে যাওয়ার পর হাজার হাজার আন্দোলনকারী রাস্তায় ছিলেন । প্রত্যেকের হাতে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড । স্লোগান, “ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার” ! পাশাপাশি তাঁরা পুলিশ বিভাগের বাজেটের অংশ কমিয়ে সামাজিক কাজে সেই অর্থ বিনিয়োগের দাবি তোলেন ।
জর্জের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হয়ে যায়, হত্যাই করা হয়েছিল জর্জকে । আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একাধিক হুমকি, পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস কিছুই পিছু হটাতে পারেনি আন্দোলনকারীদের । আন্দোলন আরও দৃঢ় হয়েছে । কোথাও চলেছে লুটপাটও । হাজার হাজার মানুষ মিছিলে হাঁটছেন । মিছিলে উঠেছে প্রতিবাদের স্লোগান ।