কলকাতা, 17 নভেম্বর: "হিরোরা সাময়িক, ভিলেনরা চিরকালীন..." এক সাক্ষাৎকারে একবার বলেছিলেন গুলশন গ্রোভার । কারণ তাঁর কোনওকালেই হিরো হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। চেয়েছিলেন ভিলেন হতে । তাঁর মতে, একজন হিরোর সাফল্য নির্ভর করে তিনি একজন মহিলার কাছে কতটা জনপ্রিয় তার উপরে । একইসঙ্গে তাঁর পোস্টার মহিলার ঘরের দেওয়ালে জায়গা করে নিল কি না তার উপরে । অন্যদিকে, যে কোনও সিনেমায় ভিলেনদের নিয়ে সবথেকে বেশি ভাবেন খোদ হিরোরাই । মানে তাদেরকে জব্দ করার বা শাস্তি দেওয়ার ফন্দি আঁটেন আর কি। মজাটা এখানেই । ভিলেন না-থাকলে গল্প সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, হিরোর মহিমা প্রকাশ পায় না সিনেমায়, হিরো তাঁর হিরোইনের কাছে সমাদৃত হন না । এখানেই একজন ভিলেনের সাফল্য চরিত্রাভিনেতা হিসেবে ।
এই প্রসঙ্গে কিংবদন্তি ভিলেনদের নাম না-তুললেই নয় । গব্বর, মোগ্যাম্বো, ব্যাড ম্যান, শাকাল, কাঞ্চা চিনা, লায়ন, বব বিশ্বাস থেকে বাংলায় 'ফেলুদা'র মগনলাল কিংবা বাংলা ধারাবাহিকের জুন আন্টি, এহেন ভিলেনদের দর্শক ভুলতে পারবে কোনওদিন ? ভোলার চেষ্টাও করবে না । নামের তালিকা বেশ দীর্ঘ । 'ডর' ছবির রাহুল মেহরার চরিত্রে দর্শককে তাক লাগিয়ে দেন বলিউডের বেতাজ বাদশা শাহরুখ খান । 'অগ্নিপথ'- এ প্রথমবার তাক লাগান ড্যানি আর দ্বিতীয়বার সঞ্জয় দত্ত । 'মর্দানি' ছবিতে করণ রাস্তোগি চরিত্রটি ছিল শিশু কন্যা পাচার কাজের সঙ্গে যুক্ত । 'দুশমন' ছবির গোকুল পণ্ডিতের কথা ভুললেও চলবে না। এই চরিত্রে আশুতোষ রানা ছিলেন অনবদ্য।
উল্লেখ্য, 'শোলে'র গব্বরের নাম নিয়ে ফের ছবিও এসেছে বড় পর্দায় 'গব্বর ইজ ব্যাক'। এই ছবির নায়ক অক্ষয় কুমার । তবে, এই গব্বর 'শোলে'র গব্বরের মতো দু্ষ্টু প্রকৃতির নয়। তাঁর হাত ধরে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন হয় ৷ এক্ষেত্রে জয় গব্বর নামটার। গব্বর হোক বা ব্যাড ম্যান, নামগুলো ঘুরে ফিরে এসেছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছবির চিত্রনাট্যে। তবে, সেরার সেরা সম্মান ছিনিয়ে নিয়েছে সেলেব তকমাধারী ভিলেন বব বিশ্বাস । 'কাহানি' ছবির এই চরিত্রটিকে পর্দায় আলাদা জায়গা দিয়ে তাঁকেই বানিয়ে ফেলা হয়েছে গল্পের নায়ক ।
কাজটি করেছেন 'কাহানি'র পরিচালক সুজয় ঘোষের কন্যা অন্নপূর্ণা ঘোষ । সিরিয়াল কিলার বব বিশ্বাসের চরিত্রে 'কাহানি' ছবিতে ছিলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় । আর 'বব বিশ্বাস' ছবিতে ববের চরিত্রে অভিষেক বচ্চন । অনেকেই সেদিন শাশ্বতকে বব বিশ্বাসের চরিত্রে না-পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে । ক্ষোভ ছিল না বাংলার অপু অর্থাৎ শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের মনে। বরং খুশি ছিলেন তিনি । নতুন বব বিশ্বাসকে মনে ধরেছিল তাঁর ।
বলতে দ্বিধা নেই, বব বিশ্বাসের চরিত্রটিকে একটি ব্র্যান্ড করে তুলেছিলেন টলিউডের তথা বাংলার অপু থুড়ি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় । বব বিশ্বাস নামটা কানে এলে ভেসে ওঠে তাঁরই মুখ (Saswata Chatterjee And Ranbir Kapoor)। 'কাহানি'র পর পাক্কা চার বছর সময় লেগে গিয়েছিল তাঁর ফের হিন্দি ছবিতে কাজ করতে । 2012-র 'কাহানি'র পর 2017- তে মুক্তি পায় 'জগ্গা জাসুস'। ইটিভি ভারতকে শাশ্বত বলেন, " 'জগ্গা জাসুস'-এর শ্যুটে প্রথম দেখাতেই রণবীর আমাকে জিজ্ঞেস করেন 'কাহানি'র পর কেন চার বছর সময় লেগে গেল হিন্দি ছবিতে কাজ করতে( Ranbir Kapoor on Bob Biswas) ?" এই প্রশ্নে শাশ্বত রণবীরকে জানান যে তিনি অনেকগুলো হিন্দি কাজ ছেড়েছেন, চরিত্র পছন্দ না-হওয়ায় । উল্লেখ্য, অনেক বড় বড় পরিচালককেও নাকি নাকচ করেছেন অভিনেতা । সেই সব নাম সর্বসমক্ষে বলতে চাননি অপু ।
আরও পড়ুন: বড় হয়েছেন শিলিগুড়িতে, না ফেরার দেশে পঞ্জাবি অভিনেত্রী দলজিৎ কৌর
অভিনেতা আরও বলেন, "রণবীর 'জগ্গা জাসুস'-এর শ্যুটে আমাকে বলেন, 'দাদা, আপনে সাইরট মরাঠি ফিল্ম দেখা হ্যায় ? বহুত আচ্ছা হ্যায় ।' আমার খুব ভাল লাগে ওঁর কথাটা । অত বড় বলিউড তারকা, তিনিও কিন্তু নিজের ভাষার ছবি দেখেন এবং বাংলায় কে কী কাজ করছে সেই খবরও রাখেন । মিঠুন চক্রবর্তীও বলে দেবেন কোন সিরিয়ালের কে নায়ক বা নায়িকা বা ভিলেন । যাঁরা অভিনয়টা ভালোবেসে করেন তাঁরা সব ইন্ডাস্ট্রির খবর রাখেন এবং তাঁরা অন্য ভাষার ছবির পাশাপাশি নিজের ভাষার ছবিও দেখেন যত্ন নিয়ে ।"