কলকাতা, 29 ডিসেম্বর: এই মুহূর্তে তিনি বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা ৷ সম্প্রতি হাত পাকিয়েছেন পরিচালনাতেও ৷ কিন্তু অভিনেতার আগে অনির্বাণ ভট্টাচার্য একজন আদ্যন্ত নাট্যকর্মী ৷ তাই নাট্যকর্মী আক্রান্ত হলে তিনি চুপ থাকেন কীভাবে ৷ তাই অমিত সাহা এবং অরূপ খাঁড়াকে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের নিগ্রহের প্রতিবাদের গর্জে উঠলেন 'মন্দার', 'বল্লভপুরের রূপকথা'-র পরিচালক (Anirban Bhattacharya protests against Amit Saha incident at Beleghata) ৷
গত 24-25 ডিসেম্বর বেলেঘাটায় মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল 'বিদূষক' নাট্যমণ্ডলী নিবেদিত 'মুক্তমঞ্চ' নাটকটি। যে জায়গায় নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল সেখানে নাটকের দিন শুরু হয়ে যায় কেক উৎসব, তারস্বরে বাজতে থাকে মাইক। কীভাবে সম্পন্ন হবে নাট্যোৎসব? এই মর্মে স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে অভিনেতা এবং নাট্য নির্দেশক অমিত সাহা এবং তাঁর সহকর্মী অরূপ খাঁড়ার উপর নেমে আসে শাসকদলের নিপীড়ন। পরবর্তীতে ফেসবুক লাইভে এসে গোটা ঘটনাটি সবিস্তারে জানিয়ে নাট্যোৎসবটি বন্ধ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান অমিত সাহা। পরবর্তীতে এই অনুষ্ঠান ফের মঞ্চস্থ করার আশ্বাস দেন তিনি ৷
বহু মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হলেও শাসকদলের মুষ্টির জোরে সবটা ভেস্তে যাওয়ায় ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান অমিত ও তাঁর দল। অরিজিৎ সিং-এর ইকো পার্কে শো বাতিলের আবহে অমিত এবং তাঁর দলের উপর শাসকের রোষে প্রতিবাদে অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় (Anindya Banerjee) গতকাল লেখেন, "অরিজিতের শো বাতিল নিয়ে মানুষ উপচে পড়ছে, ক'দিন আগে অমিত সাহার ছোট্ট থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল টিএমসি মেরে বন্ধ করল সেই বেলা?"
এরপর আজ অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য অমিত সাহার গায়ে হাত ওঠার তীব্র নিন্দা করে লেখেন, "যার গায়ে হাত উঠেছে, তার গায়ে আবার হাত উঠতে পারে শীঘ্রই এবং যিনি হাত তুলেছেন তিনি তাঁর সাহসে বলীয়ান হয়ে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তানের অনেকগুলো সার্টিফিকেট ঘরে বাঁধিয়ে রাখবেন। কে জানে হয়তো কালের অদ্ভুত নিয়মে একদিন বাংলার সংস্কৃতি মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন, দল বদলালে হয়তো ভারতেরও। এটা বা এরকম কিছুই হয়তো হবে।"
আরও পড়ুন: ইকো পার্কে বাতিল অরিজিতের অনুষ্ঠান ! রাজনীতি নেই বলে দাবি ফিরহাদের, তোপ বিজেপির
এ প্রসঙ্গে অনির্বাণ এ বছরের 28তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কথা টেনে বলেন, "আজ থেকে 12 দিন আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন বাক স্বাধীনতার সপক্ষে বক্তৃতা করে গেছেন। শাহরুখ খান সোশাল মিডিয়ার ঘৃণাবাহিনীকে এক হাত নিয়েছেন, সারা ভারতে মুক্তমনা মানুষ হাততালি দিয়ে উঠেছেন। সেদিন যারা মঞ্চে ছিলেন, তারাও দিয়েছেন। তার কিছুদিন পরেই অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া মার খেয়ে গেলেন, নাট্য উৎসব আয়োজন করার জন্য। একই রাজ্যে! কেন? কারণ অমিত সাহা ও অরূপ খাঁড়া পশ্চিমবঙ্গের বোধ করি একটি ভোটকেও ডিস্টার্ব বা পেট্রনাইজ করতে পারেন না। অমিতাভ বচ্চন বা শাহরুখ খান পারেন। তাই, চলুন, আমরা নাটক ছেড়ে একটা মার খাওয়ার উৎসবের দিকে এগিয়ে যাই।"
এখানেই না থেমে অনির্বাণ যোগ করেন, "আমার এর পরের অভিনয় 15ই জানুয়ারি রবীন্দ্র সদন মঞ্চে। এসে মেরে যান। কারণ এই দিনের অভিনয়ে ভোট রাজনীতির কোনো মুনাফা নেই, এমন ফালতু ঘটনা রাজ্যে প্লিজ একটাও ঘটতে দেবেন না, অনুরোধ। সবশেষে কেক উৎসবের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি।"