মাথাভাঙা ও ধূপগুড়ি, 14 এপ্রিল : বিধানসভা নির্বাচন মিটে গেলেই শীলকুচিতে নিহত পাঁচজনের খুনের তদন্ত করাবে রাজ্য সরকার ৷ দোষী ব্য়ক্তিদের কাউকে রেয়াত করা হবে না ৷ তা তিনি যতই ক্ষমতাবান ব্য়ক্তি হন না কেন ৷ বুধবার কোচবিহারের মাথাভাঙা হাসপাতালের পাশেই তৈরি শহিদ স্মরণ মঞ্চে পৌঁছে এই প্রতিশ্রুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷
এদিন সকালেই শহিদ স্মরণ মঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলেন শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত চার সংখ্যালঘু ভোটারের পরিবারের সদস্যরা ৷ নিহত হামিদুল মিঞা, সামিউল হক, মনিরুজ্জামান মিঞা এবং নূর আলম মিঞার পরিবারের সদস্যরা সকাল থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন ৷ মমতা সেখানে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা ৷ স্বজনহারাদের প্রত্য়েকের সঙ্গে আলাদা আলাদভাবে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ দেন সবসময় পাশে থাকার আশ্বাস ৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে মাথাভাঙার শহিদ স্মরণ মঞ্চে পৌঁছে যান নিহত আনন্দ বর্মনের দাদু ক্ষীতীশ রায় ৷ মমতার সঙ্গে দেখা করেন আনন্দর মামাও ৷ তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ প্রসঙ্গত, এর আগে শোনা যাচ্ছিল, আনন্দ বর্মনের পরিবারের সদস্যরা নাকি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান না ৷ তবে শেষমেশ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে মাথাভাঙা পৌঁছে যান তাঁরা ৷
নিহতদের সকলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর মমতা সাফ জানান, কোনওভাবেই এমন নৃশংস ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না ৷ বিধানসভা ভোট মিটে গেলেই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করবে রাজ্য সরকার ৷ দোষী ব্য়ক্তিদের সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে ৷
মাথাভাঙা থেকে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে পৌঁছে যান মমতা ৷ সেখানে তৃণমূল প্রার্থী মিতালি রায়ের সমর্থনে জনসভা করেন তিনি ৷ উপচে পড়া ভিড়ের উদ্দেশে মমতা শান্ত থাকার বার্তা দেন ৷ বার্তা দেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার ৷
তবে এদিনও নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করেছেন মমতা ৷ তাঁর অভিযোগ, তাঁকে আটকাতেই শীতলকুচি কাণ্ডের পর 72 ঘণ্টা কোচবিহারে রাজনৈতিক নেতাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় ৷ এমনকী, পঞ্চম দফা ভোটের আগে কমিশন যেভাবে 24 ঘণ্টার জন্য তাঁর প্রচার কর্মসূচির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তারও সমালোচনা করেন মমতা ৷ সভায় উপস্থিত ‘‘মা-বোনেদের’’ কাছেই এর বিচার চান তিনি ৷
সভামঞ্চে বারবার মমতা আবেদন করেন, কেউ যেন কোনও প্ররোচনা পা না দেন ৷ কোনও অশান্তিতে সামিল না হন ৷ তাঁর বার্তা, যদি ইভিএম খারাপ হয়ে যায়, তাহলেও যেন ভোট না দিয়ে কেউ ফিরে না যান ৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজনে একটা পান্তা খেয়ে কাটাবেন ৷ কিন্তু নিজের ভোট নিজে দেবেন ৷’’ তবে এদিন ধূপগুড়ির এই সভায় আর কাউকে হাতা, খুন্তি নিয়ে ভোট লুঠ আটকানোর পরামর্শ দেননি মুখ্যমন্ত্রী ৷
আরও পড়ুন : মমতার সঙ্গে দেখা করবে না আনন্দ বর্মনের পরিবার
সভামঞ্চে এদিন ফের একবার এনআরসি নিয়ে সরব হন মমতা ৷ তাঁর সাফ কথা, বাংলায় তৃণমূলের সরকার গঠিত হলে কিছুতেই এনআরসি করতে দেওয়া হবে না ৷ এ নিয়ে ফের একবার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তোপ দাগেন মমতা ৷ বলেন, ‘‘অসমে ভোট শেষ হতেই বাঙালিদের ডিটেনশন ক্যাম্পের নোটিস ধরানো হচ্ছে ৷’’
এদিনের সভামঞ্চে মমতার সঙ্গে দেখা করেন শহিদ জগন্নাথ রায়ের পরিবারও ৷ জলপাইগুড়ি জেলার বাসিন্দা জগন্নাথ সিআরপিএফে কর্মরত ছিলেন ৷ কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত হন তিনি ৷ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, অমিত শাহরা যদি জওয়ানদের প্রতি এতই সহানুভূতিশীল হন, তাহলে কেন জগন্নাথের পরিবারের সঙ্গে দেখা না করেই ফিরে গেলে ভোটের প্রচারে আসা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ? কেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহতদের পাশে দাঁড়াল না কেন্দ্রের সরকার ?