শিলিগুড়ি, 29 জুলাই : ছিল নদী, হয়ে গেছে নর্দমা ! বিশ্বাস হয় না, এককালে বর্ষার সময় এই নদীদের ভয় পেতেন শিলিগুড়ির বাসিন্দারা ৷ স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যাওয়ার ইতিহাসও রয়েছে ৷ গল্প কথা মনে হয়, একসময়ে শিলিগুড়ি শহরের প্রাণ ছিল জোড়া নদী ফুলেশ্বরী ও জোড়াপানি । বহুবার দুই নদীকে সংস্কার করে দূষণমুক্ত করার দাবি উঠেছে ৷ কিন্তু কাজ হয়নি ৷ এত দিনে সেই আক্ষেপ মিটছে ৷ শিলিগুড়ি পৌরনিগমের উদ্যোগে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে দুই নদীর পুনরুজ্জীবনে ৷
সেচ দফতরের সহযোগিতায় ফুলেশ্বরী ও জোড়াপানি সংস্কার তথা দূষমুক্ত হবে । নদী দখল আটকাতে নদীর ধারে দেওয়া হবে ফেন্সিং। পৌরনিগমের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা । শিলিগুড়ি অপটপিক সোসাইটির সম্পাদক তথা পরিবেশবিদ দিব্যজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, "এর আগে একাধিকবার সার্ভে করে ফুলেশ্বরী এবং জোড়াপানি নদীর দুরাবস্থার কথা আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। অবিলম্বে ওই দুই নদীকে সংস্কার না করলে নদী দু‘টি হারিয়ে যাবে । নদীর ধার দখল হয়ে যাওয়া ওই নদীদের বিলুপ্তপ্রায় হওয়ার কারণ ।"
শিলিগুড়ি পৌরনিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান গৌতম দেব বলেন, "গ্রিন ট্রাইবুনালের নিয়ম অনুযায়ী এবং গ্রিন সিটি মিশনের আর্থিক সহযোগিতায় সেচ দফতর দুই নদীকে সংস্কার করার কাজ করবে । বিগত বোর্ড কয়েক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকলেও নদী দু‘টির হাল ফেরানোর চেষ্টা করেনি । ফলে তা ক্রমশ নর্দমায় পরিণত হয়েছে ।"
প্রশাসক বোর্ডের সদস্য রঞ্জন সরকার বলেন, "ইতিমধ্যে ওই দুই নদীর সংস্কারের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়েছে । পাইলট প্রজেক্টে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে । নদী দু‘টির হাল ফেরাতে আমরা বদ্ধপরিকর ।" আরেক সদস্য অলক চক্রবর্তী বলেন, "নদী দু‘টির দুরাবস্থার মূল কারণ নদী ধার দখল হয়ে যাওয়া । তাছাড়া শহরের সমস্ত নিকাশি নালা ওই দুই নদীতে এসে পড়ে ৷ ফলে দূষণের মাত্রা বাড়ছে । দ্রুত আমরা নদী দু‘টিকে পরিষ্কার করব ।"
পৌরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, জোড়াপানি নদীর আগাছা ও আবর্জনা সরানোর জন্য 78 লাখ 18 হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে । ফুলেশ্বরী নদীর জন্য 45 লাখ 10 হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে পৌরনিগম । জোড়াপানি নদীর ধারে ফেন্সিংয়ের জন্য বরাদ্দ হয়েছে 51 লাখ 27 হাজার টাকা । ফুলেশ্বরী নদীর ফেন্সিংয়ের জন্য বরাদ্দ হয়েছে 28 লাখ 44 হাজার টাকা ৷ এছাড়াও মহানন্দা নদী ধারের দখল রুখতে ফেন্সিংয়ের জন্য 45 লাখ 53 হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন: River Pollution : অবিরত পড়ছে কারখানার বর্জ্য, হুগলিতে দূষণে মুহ্য ঘিয়া
প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও নদী বাঁচাতে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে, মত ওয়াকিবহাল মহলের । শহরের বাসিন্দাদের প্রতিনিয়ত নদীদূষণের কাজ থেকে সরে আসতে হবে । তবেই আগের মতো স্রোতস্বিনী হবে ফুলেশ্বরী এবং জোড়াপানি।