শিলিগুড়ি , 16 জুলাই : শিলিগুড়ির বিধান মার্কেটে পুড়ে যাওয়া সাতটি দোকানের পুনর্নির্মাণের নামে রাতারাতি 22টি দোকান তৈরি করে কোটি কোটি টাকায় বিক্রির চেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মন্ত্রী গৌতম দেব । যদিও তাঁর দলেরই দু'কাউন্সিলরের দাবি, মন্ত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন । এই ইশুতে আসরে নেমেছে কংগ্রেসও ।
প্রায় মাস খানেক আগে শিলিগুড়ির বিধান মার্কেটে আগুন লাগে । ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মার্কেটের সাতটি দোকান । সম্প্রতি সেই দোকানঘরগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতে SJDA-এর আধিকারিকদের নিয়ে বিধান মার্কেট পরিদর্শনে যান গৌতমবাবু । তিনি অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ী সমিতির একাংশের মদতে কোটি টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে দোকানঘর তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে । বলেন, "এসব প্রশ্রয় দেওয়া হবে না । অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা হবে । কেউ যদি এই কাজে বাধা দেয় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে ।" এরপরই গৌতমবাবু আধিকারিকদের নির্দেশ দেন অবৈধ নির্মাণ ভাঙার ব্যাপারে নোটিশ জারি করার । যদিও মন্ত্রীর এই নির্দেশের পরই রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদে সামিল হয় ব্যবসায়ীরা । তবে গৌতমবাবু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন । জারি করেন নোটিশ । পাশাপাশি তিনি ব্যবসায়ীদের তিনদিনের সময়সীমা বেঁধে দেন । পরে এবিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডাকেন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক । ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রের খবর, মন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর যে নির্দেশিকা জারি হয়েছে তা অনৈতিক । এর প্রতিবাদে প্রয়োজনে আগামীতে শহরকে স্তব্ধ করে দেওয়া হবে ।
আরও পড়ুন : বিধান মার্কেটে অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে নোটিশ SJDA-র
আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গৌতমবাবু বলেন,"ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেছি । শহরকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা মানব না । কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর এসব কাণ্ড আইনের মাধ্যমে আটকে দেব । ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি চাই না । শহর রক্ষায় আমি বদ্ধপরিকর । নদীর চর দখল, বেআইনি নির্মাণ, সরকারি জমিতে বেআইনি দখল কিছুই আর মানব না । কারণ শহর যদি প্রাণ হারায় তাহলে আর কীসের ভোট, কীসের ভোটব্যাঙ্ক । তাই উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে এসব রুখবই ।"
তবে আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মঞ্জুশ্রী পাল ও তাঁর স্বামী নান্টু পাল । নান্টুবাবু পৃথক সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন । বলেন," আমরা স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি দুটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর । আমাদের এলাকাতেই অধিকাংশ মার্কেট অবস্থিত । মন্ত্রী সাতটি দোকান পুড়ে যাওয়ার পর 22টি দোকান বানিয়ে বিক্রির যে অভিযোগ করছেন তা সঠিক নয় । দোকান পুনর্নির্মাণে অতিরিক্ত দোকান তৈরী হয়নি । মন্ত্রী আসলে এলাকায় থাকেন না । আমরা দুই কাউন্সিলর বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত নই ।" তিনি আরও বলেন, "আমি প্রস্তাব দিয়েছি ওই নির্মাণস্থানে বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তি বসানো হোক । পাশাপাশি তৈরি করা হোক জলাধার । আগুন লাগলে তা মোকাবিলায় ওই জলাধার সাহায্য করবে । "
এদিকে বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তি বসানোর প্রস্তাব শুনে আসরে নেমেছে কংগ্রেস । জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শংকর মালাকার মিছিল করে এলাকায় গিয়ে নির্মাণস্থানে লাগানো ব্যানার ছিঁড়ে দেন । বলেন, "বেআইনি নির্মাণ ঢাকতে এখন বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তি বসানোর কথা মনে পড়েছে । 1962 সালে বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে এই মার্কেট তৈরি হলেও এতদিন কেউ তাঁর মূর্তি বসায়নি । আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা হচ্ছে । কারা কোটি কোটি টাকার এই নির্মাণ করলেন ও বিক্রির চেষ্টা করলেন তা সামনে আসুক । স্থানীয় কাউন্সিলরের মদত ছাড়া এসব সম্ভব না ।"