শিলিগুড়ি, 4 মার্চ : ইউক্রেন সীমান্তে টাকার বিনিময়ে পার করানো হচ্ছে সীমান্ত । টানা দু-আড়াই দিন ঠান্ডার মধ্যে খোলা আকাশের নীচে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্ত পার হতে । এমনই ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন ইউক্রেন ফেরত মেডিক্যাল পড়ুয়ারা । শুক্রবার ইউক্রেন থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু পড়ুয়ারা । ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্ত পার করে এদিন দিল্লি থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছন তাঁরা (Students Returned Home from Ukraine) ।
এদিন বাড়ি ফিরেছেন শিলিগুড়ি মহকুমার খড়িবাড়ির বাসিন্দা লাভিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া অরবিন্দ ছেত্রী, মালদার বাসিন্দা টার্নোপিল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্র কমলকান্তি সাহা । পাশাপাশি আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা কিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তন্নিষ্ঠা রায় ও শিলিগুড়ির বাসিন্দা রাইকমল বসুও বাড়ি পৌঁছেছেন । ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্ত পার হতে 30 থেকে 40 কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে হয়েছে তাঁদের ।
পড়ুয়ারা জানান, পোল্যান্ড পৌঁছতেই খানিকটা স্বস্তি পান ৷ সেখান থেকে ভারতীয় দূতাবাস নিরাপদে প্রত্যেক পড়ুয়াদের বাড়ি ফেরার জন্য সবরকম সহযোগিতা করেছে । তবে সমস্যা তৈরি হয় সীমান্ত পার হতে গিয়ে ৷ সেখানে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি ৷ গোটা দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত । ঘন ঘন সাইরেনের আওয়াজ । তার মধ্যে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে সীমান্তে পৌঁছেছেন পড়ুয়ারা ৷ সীমান্তে পৌঁছলেও তা পার হতে অনেক সময় লেগে গিয়েছে । কাউকে কাউকে দু'দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে ৷ তারপরও সীমান্ত পেরনো সম্ভব হয়নি ৷ তখন ফের অন্য সীমান্ত দিয়ে পার হতে হয়েছে ৷ কোথাও কোথাও আবার টাকার বিনিময়ে পার করানো হচ্ছে বলেও শোনা গিয়েছে । শুধু তাই নয়, সীমান্তে পড়ুয়াদের হেনস্থারও অভিযোগ উঠেছে ।
খড়িবাড়ির অরবিন্দ বলেন, "ভারত সরকার খুব ভাল সহযোগিতা করেছে । কিন্তু ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তে মাথাপিছু একশো ডলারের বিনিময়ে সীমান্ত পার করানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে । সেসময় সীমান্ত পারাপারকারীদের সঙ্গে জওয়ানদের বচসা-হাতাহাতিও হয় । সামাল দিতে কুকুর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল । আকাশে গুলি ছোড়া হয়েছিল । তবে আড়াই দিন আমাদের খোলা আকাশের নীচে প্রবল ঠান্ডায় অপেক্ষা করতে হয়েছিল সীমান্ত পার করতে ।"
শিলিগুড়ির রাইকমল বসু বলেন, "আমরা খুব আতঙ্কে ছিলাম । এটিএমে টাকা ছিল না ৷ খাবার আর পানীয় জলেরও ভীষণ অভাব ছিল । বারবার সাইরেন বাজছিল । আমরা টানা পথ হেঁটে ইউক্রেন সীমান্ত পার করি । বাড়ি ফিরে ভাল লাগছে ।"
এদিকে এদিন ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়া রাইকমল বসুর সঙ্গে দেখা করতে যান শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ । রাইকমলকে শুভেচ্ছা জানান তিনি । শোনেন তাঁর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা ৷ পাশাপাশি আগামীতে কোনও অসুবিধা হলে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বিধায়ক ।
আরও পড়ুন : Russia-Ukraine Conflict : কিভে গুলিবিদ্ধ ভারতীয় ছাত্র, দূতাবাসের তরফে খোঁজ না নেওয়ার অভিযোগ