শিলিগুড়ি, 4 অক্টোবর : শিলিগুড়ির আনন্দময়ী কালীবাড়ি ৷ এখানকার দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ৷ আর সেই ইতিহাসের পাতা ধরেই আনন্দময়ী কালীবাড়ির দুর্গাপুজো আজ উত্তরবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে গোটা রাজ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ৷ সালটা ছিল 1926 ৷ চারণকবি মুকুন্দ দাসের হাত দিয়ে শিলিগুড়ির প্রাণকেন্দ্র মহাবীরস্থানের আনন্দময়ী কালীবাড়িতে শুরু হয় দুর্গাপুজো ৷ তথ্য বলছে, এই ঘটনার নয় বছর আগে 1915 সালে পেয়ারেলাল চক্রবর্তী নামে এক পুরোহিত এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷ কিন্তু চারণকবি মুকুন্দ দাস এই মন্দিরে কালী প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করার পরই তা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয় ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja : সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনলাইনে টালা প্রত্যয়ের দুর্গাপুজো
1925 সাল থেকেই শিলিগুড়িতে আনাগোনা ছিল চারণকবির ৷ ইতিহাস বলে, 1926 সালে শিলিগুড়িতে পালাগান করে 500 টাকা উপার্জন করেছিলেন মুকুন্দ দাস ! সেই সময় সেই টাকার কিছুটা অংশ মন্দিরের উন্নয়নের জন্য দান করেছিলেন তিনি ৷ বাকি টাকা দিয়ে কাশী থেকে কষ্টি পাথরের কালী মূর্তি এনে তা মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন মুকুন্দ দাস ৷ সেই বছর থেরেই মন্দিরে দেবী দুর্গার পুজো শুরু হয় ৷ সেই মাতৃমূর্তি এখনও প্রতিদিন পূজিত হয়ে আসছে ৷ মূলত স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মেনেই 1926 সালে আনন্দময়ী কালীবাড়িতে দশভূজার আরাধনা শুরু হয় ৷
মন্দির কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার আগে শিলিগুড়ি প্রত্যন্ত এলাকা ছিল ৷ কলকাতার সঙ্গে শিলিগুড়ির যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল টাউন স্টেশন ৷ সেই টাউন স্টেশন থেকে খানিকটা দূরেই রয়েছে আনন্দময়ী কালীবাড়ি ৷ সেই সময় শিলিগুড়িতে আনাগোনা ছিল বাঘাযতীন, চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষচন্দ্র বসুর মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ৷ আনন্দময়ী কালীবাড়ি প্রাঙ্গণই ছিল সেই সব বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি ৷ মন্দির প্রাঙ্গণে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ব্যায়ামাগার এবং প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলেছিলেন বিপ্লবীরা ৷ প্রতিনিয়ত সেখানে শরীরচর্চা এবং লাঠি খেলার প্রশিক্ষণ চলত ৷ বিপ্লবীদের পথ দেখাতেন চারণকবি মুকুন্দ দাস ৷
আরও পড়ুন : Durga Puja Special : ইন্দো-বাংলা সীমান্তে জমিদারবাড়িতে একইসঙ্গে পুজো হয় সোনা ও মাটির দুর্গার
এ বছর আনন্দময়ী কালীবাড়ির পুজোর 90 তম বর্ষ ৷ করোনার আগে পর্যন্ত প্রতি বছরই আনন্দময়ী কালীবাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে ঢল নামত দর্শনার্থীদের ৷ অতিমারি আবহে সেই জাঁকজমক এখন অনেকটাই ম্লান ৷ তবে রীতি-রেওয়াজ পালনে কোনও খামতি থাকছে না ৷ নিয়ম মাফিক এবছরও রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে দুর্গা প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয় ৷ মন্দির প্রাঙ্গণেই জোরকদমে চলছে সেই কাজ ৷ যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে ৷ মন্দির প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের প্রবেশ, অঞ্জলি এবং ভোগ বিতরণ এবার বন্ধ থাকছে ৷ তবে পুজো উপলক্ষে দু’হাজার দুস্থকে নতুন পোশাক বিতরণ করা হবে ৷