মালদা, 25 অগস্ট: "বাতাস বইতেই আছে, গাং কাটতেই আছে । আর এখানে থাকা যায় না । এবার বাঁধে চললাম ।" ঘরে যা কিছু ছিল, গোছাতে গোছাতে বললেন নুরেশা বিবি । পেটের দায়ে আজও স্বামীকে কাজে বেরোতে হয়েছে । এদিকে কোশির ভাবগতিক সুবিধের ঠেকছে না । তাই চার ছেলেকে নিয়ে ঘরের যাবতীয় সামগ্রী বাঁধাছাঁদা করছেন তিনি । সন্ধের আগেই বাঁধে জায়গা নিতে হবে । নইলে সেখানেও মাথা গোঁজার জায়গা পাওয়া যাবে না (villagers leaving homes due to Koshi River erosion) ।
এই মুহূর্তে কোশিই মাথাব্যথার কারণ রতুয়া-1 নম্বর ব্লকের দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষের । 7-8টি গ্রাম যে কোনও মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে নদীতে । দিন সাতেক ধরেই নদীর জলস্তর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে । গত 24 ঘণ্টাতেও তার কোনও বদল হয়নি । স্রোত বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙছে নদীর পাড় । সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি খাসমহল আর জঞ্জালিটোলা গ্রামে । ইতিমধ্যে খাসমহল গ্রামে নদীর ধারে থাকা কয়েকটি বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে । বেশ কিছু বাড়ির উঠোনে ফাটল দেখা দিয়েছে । তাই দুই গ্রামের মানুষ এখন নিরাপদ জায়গার খোঁজে ।
খাসমহল গ্রামের আফজাল হোসেন বলছেন, "কোশির ভাঙনে আমাদের বাড়িঘর, গাছপালা নদীতে তলিয়ে গিয়েছে । গোটা গ্রামের মানুষ খুব সমস্যায় পড়েছে । আপাতত আমরা বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছি । নদী যেভাবে পাড় কাটছে, তাতে খাসমহল আর থাকবে না । বাঁধেও আমরা কতদিন নিরাপদে থাকতে পারব জানি না । তাই সরকারের কাছে আমরা পুনর্বাসনের আবেদন জানাচ্ছি ।"
আজও এলাকায় পূবালি আর পশ্চিমা বাতাসের ঘুর্ণিপাক চলছে । নদীপাড়ের মানুষ খুব ভালো করেই জানেন, এই বাতাসে ভাঙন আরও বাড়বে । তাই কারও হাতে এখন সময় নেই । সবাই নিজেদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত । তারই মধ্যে নুরেশা বিবি জানালেন, "জল বাড়তেই আছে । আমাদের কোনও জায়গা জমি নেই । ভেস্ট জায়গায় থাকি । প্রাণ বাঁচাতে এখন বাঁধে যাচ্ছি । কিন্তু সেখানেই বা কতদিন থাকব? সরকারের কাছে আমার আর্জি, আমাদের থাকার জন্য জায়গা দাও ।"
আরও পড়ুন: কোশির দাপটে বিপন্ন একাধিক গ্রাম, ঘুম উড়েছে স্থানীয়দের
রতুয়া-1 নম্বর ব্লকের বিডিও (BDO) রাকেশ টোপ্পোকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, "এখনও পর্যন্ত জেলার কোনও নদীর জলস্তর বিপদসীমা পেরোয়নি বলেই খবর রয়েছে । কোশি নদীর ধারে কিছুটা ভাঙন হচ্ছে । তবে সেটা নদীর ধারেই হচ্ছে । গ্রামে এখনও জল ঢোকেনি । গ্রামে জল ঢুকলে কিংবা বাড়িঘর নদীতে পড়ে গেলে আমাদের বিপর্যয় মোকাবিলা টিম তৈরি রয়েছে । পর্যাপ্ত ত্রাণও মজুত রয়েছে ।"